আপনজন ডেস্ক: রামনবমী ঘিরে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে বৃহস্পতিবার রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল হাওড়া শহরের শিবপুর এলাকার কাজিপাড়া থেকে সন্ধ্যাবাজার পর্যন্ত জি টি রোড সংলগ্ন এলাকা। সেই ঘটনা ঘিরে হিংসার ঘটনায় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মোট ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। এদিন সকালে জি টি রোড দিয়ে যান চলাচল শুরু হলেও গোটা এলাকা র্যাফ ও পুলিশের কড়া নজরে রয়েছে। ঘটনার জেরে গোটা এলাকা রীতিমত থমথমেও রয়েছে। ঠিক এই রকম অবস্থায় দাঙ্গাকারীদের লক্ষ্য করে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী শিবপুরের ঘটনায় সরব হন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে। যাদের জেরে গতকাল আগুন লেগেছিল শিবপুরের বুকে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালানো হয়েছে। কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম দাবি করছে, পুলিশ নাকি মিছিলের অনুমতি দিয়েছিল। শুনে রাখুন, পুলিশ মিছিলের কোনও অনুমতিই দেয়নি। শুধু হাওড়ার বুকেই নয়, রাজ্যের অনেক জায়গাতেই রুট ভেঙে মিছিল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের বলছি, আমার ওপর ভরসা রাখুন। যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। দোকান গাড়ি যা সব নষ্ট হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সবাই শান্তিতে থাকুন। নতুন করে কোনও অশান্তির ঘটনায় পা ফেলবেন না। ৩৫জন গ্রেফতার হয়েছে। আমি পুলিশকে বলে দিয়েছি যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাঁদের যেন রেয়াত করা না হয়। কেউ পার পাবে না। সবাইকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হবে।’
উল্লেখ্য, গতকাল হাওড়া শহরে অঞ্জনী পুত্র সেনা নামে একটি সংগঠন রামনবমীর মিছিল বার করেছিল। সেই মিছিল যখন বিকালের দিকে কাজিপাড়ায় আসে তখন থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত হয়। অভিযোগ, মিছিল থেকে লোক বেড়িয়ে নির্দিষ্ট কিছু সম্প্রদায়ের মানুষকে জোর করে আবির মাখাতে শুরু করেন। তা ঘিরেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে মিছিলের লোকেরা হাতে তলোয়ার, রড, হাঁসুয়া মায় বন্দুকের মতো অস্ত্র নিয়ে বেছে বেছে নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের মানুষদের বাড়িতে, গাড়িতে, দোকানে, টোটোতে, সবজি ও ফল বিক্রেতাদের ঠেলাগাড়ি, টোটোতে হামলা করেন। তাতে ব্যাপক হারে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ৩২জন আহত হন। সেই ঘটনায় পুলিশ পদক্ষেপ করলে পুলিশের দিকে কাঁচের বোতল, ইট ও পাথর ছোড়া হয়। পরবর্তীতে পেট্রোপ বোমাও ছোড়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাওড়া সিটি পুলিশের পাশাপাশি কলকাতা পুলিশ ও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফেও পুলিশ বাহিনী নামানো হয়। আসে র্যাফও। এদিন সকালেও এলাকার পরিস্থিতি রীতিমত থমথমে রয়েছে।হাওড়ার এই ঘটনা নিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ‘কিছু নাটের গুরু আছেন যারা টাকার দিয়ে এই সব ঘটনা ঘটায়। এই নাটের গুরুগুলোকে খুঁজে বার করা হবে। যারা এই দাঙ্গা করেছে, যতই মামলা করুক আর হামলা করুক, কোনও অজুহাত আমি শুনব না। একজন দোষ করবে সবার নামে দোষ হবে কেন? আমি দাঙ্গাকারীদের প্রশ্রয় দিই না। আমি দাঙ্গাকারীদের দেশের শত্রু মনে করি। আমি কোনও অন্যায়কে প্রশয় দিই না, দেবও না। যারা দোষী তাঁদের শাস্তি হবেই। যাদের বাড়ি দোকান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সব সারিয়ে দেওয়া হবে। আমার ওপর ভরসা রাখুন। পবিত্র রমজান মাস চলছে। সবাই শান্তিতে থাকুন।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct