আপনজন ডেস্ক: রাহুল গান্ধিকে লোকসভা থেকে অযোগ্য ঘোষণা করায় বিজেপির বিরুদ্ধে সোচ্চার কংগ্রেস নেতা ও কর্মীরা রবিবার সারা দেশে বিক্ষোভ দেখান। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ভাদরা অভিযোগ করেন, সরকার জনগণের আওয়াজ উত্থাপনের জন্য “শহীদের পুত্রকে” চুপ করানোর চেষ্টা করছে। ফৌজদারি মানহানি মামলায় দোষী সাব্যস্ত রাহুল গান্ধি ওবিসিদের অপমান করেছেন বলে বিজেপির অভিযোগের জবাবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি প্রশ্ন তোলেন, যে নেতার পরিবার ‘গণতন্ত্রকে লালন-পালনের জন্য রক্ত দিয়েছে’ এবং যিনি কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ঐক্যের বার্তা নিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন, তিনি কীভাবে দেশ বা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে অপমান করতে পারেন? প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য বিজেপি নেতারা বারবার তাঁর পরিবারের সদস্যদের অপমান করেছেন, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিজেপি অবশ্য কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেছে, তারা কি দেশের সংবিধান বা যে আইনের অধীনে রাহুল গান্ধিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে নাকি দেশের সমগ্র অনগ্রসর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তার মন্তব্যকে ন্যায়সঙ্গত করার জন্য। রাহুল গান্ধির বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপের নিন্দা জানানোর পর কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা অশোক গেহলট এবং অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, এই ইস্যুটি বিরোধীদের একত্রিত করেছে এবং দিন যত যাবে এই ঐক্য আরও বাড়বে।
মহাত্মা গান্ধি স্মৃতিসৌধে পুলিশ ‘সংকল্প সত্যাগ্রহ’ অনুষ্ঠানের অনুমতি না দেওয়ায় দিল্লির রাজঘাটের বাইরে ‘সংকল্প সত্যাগ্রহ’ বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া খাড়গে প্রশ্ন তোলেন, পলাতক নীরব মোদি ও ললিত মোদির সমালোচনা করা হলে বিজেপি কেন কষ্ট পাচ্ছে? তারা এখন ওবিসি নিয়ে কথা বলছে, ললিত মোদি ওবিসি, নীরব মোদি ওবিসি, মেহুল চোকসি ওবিসি, তারা জনগণের টাকা নিয়ে পালিয়েছে। তারা যদি পলাতক হয়, তাহলে তাদের সমালোচনা করা হলে আপনি কেন কষ্ট পাচ্ছেন? খাড়গে বলেন, ‘যারা দেশকে বাঁচানোর জন্য কাজ করে তাদের শাস্তি দিন এবং যারা দেশকে লুট করে তাদের বিদেশে পাঠান। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতিকে সমর্থন করে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বলেন, তার ভাইকে যখন মীরজাফর বলা হত তখন কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি। একজন শহীদ প্রধানমন্ত্রীর ছেলে কি দেশকে অপমান করতে পারেন, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বলেন, ‘এটা সেই প্রধানমন্ত্রীর অপমান, যিনি নিজের জীবন দিয়েছেন। তিনি বলেন, তার পরিবার দেশকে রক্ত দিয়েছে এবং কংগ্রেস গণতন্ত্র রক্ষার জন্য যে কোনও কিছু করতে প্রস্তুত এবং ভয় পায় না। তিনি বলেন, ‘আপনি শহীদের ছেলেকে মীরজাফর, দেশদ্রোহী বলেছেন, সংসদে তার মাকে অপমান করেছেন। সংসদে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, কেন এই পরিবার ‘নেহরু’ উপাধি ব্যবহার করে না। আপনি পুরো পরিবার এবং কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঐতিহ্যকে অপমান করছেন। কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আপনি কোনও মামলা বা দুই বছরের মেয়াদ পাবেন না এবং কেউ আপনাকে অযোগ্য ঘোষণা করবে না। কেন? এই তিনি জিজ্ঞেস করেন প্রিয়াঙ্কা। পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির অভিযোগ নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, “আপনি একজন কে কতটা অপমান করবেন?’ প্রিয়াঙ্কা গান্ধি প্রশ্ন তোলেন, নির্বাসনে পাঠানো ভগবান রাম কি ‘পরিবারবাদী’ ছিলেন? তিনি বরেন, “ওরা আমাদের বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ এনেছে। ভগবান রাম কে ছিলেন? তাকে নির্বাসিত করা হয়েছিল এবং তিনি তার পরিবার এবং মাতৃভূমির প্রতি তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভগবান রাম কি ‘পরিবারবাদী’ ছিলেন? পাণ্ডবরা কি ‘পরিবারবাদী’ ছিলেন কারণ তারা তাদের পরিবারের মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য লড়াই করেছিলেন। আমাদের কি লজ্জিত হওয়া উচিত যে আমাদের পরিবারের সদস্যরা এই দেশের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।” প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বলেন, “আজ পর্যন্ত তারা আমাদের পরিবারকে অপমান করছে এবং আমরা চুপ করে রয়েছি কিন্তু আর নয়।” রাজঘাটের বাইরে তিনি বলেন, “সময় এসে গেছে এবং আমরা আর চুপ করে থাকব না। প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, শিল্পপতি গৌতম আদানি সম্পর্কে প্রশ্ন করার জন্য রাহুল গান্ধিকে আক্রমণ করা হচ্ছে, অথচ পুরো সরকার তথা শাসক দল তাকে রক্ষা করছে। তিনি বলেন, ‘আমাকে জেলে নিয়ে যাও, কিন্তু সত্যি টা হল এই দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন কাপুরুষ। তিনি তার ক্ষমতার আড়ালে লুকিয়ে আছেন এবং (তিনি) অহংকারী। কিন্তু এই দেশের ঐতিহ্য হল মানুষ একজন অহংকারী রাজাকে জবাব দেয়।
‘গণতন্ত্র হুমকির মুখে’ থাকায় মিডিয়াকে তাদের দায়িত্ব বোঝার আহ্বান জানান প্রিয়াঙ্কা গান্ধি। তিনি বলেন, ‘যিনি প্রশ্ন করেন, তাকে যদি আট বছরের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেওয়া হয়, তাহলে তা দেশ বা গণতন্ত্রের জন্য ঠিক হবে না। সময় এসে গেছে - ডারো মাত (ভয় পেয়ো না)’।কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাসের মধ্যে তিনি বলেন, “তাদের মুখোমুখি হোন এবং ঐক্যবদ্ধ হোন এবং দেশের ঐক্য নিশ্চিত করুন এবং এটিকে এগিয়ে নিয়ে যান।” জাতীয় রাজধানীতে, কংগ্রেস তাদের দিনব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচির জন্য মহাত্মা গান্ধির স্মৃতিসৌধের বাইরে একটি মঞ্চ স্থাপন করেছে, যেখানে মহাত্মা গান্ধির ছবি এবং ‘সত্যমেব জয়তে’ লেখা একটি হোর্ডিং রয়েছে। অন্যদিকে গুজরাতে আন্দোলন করার জন্য বেশ কয়েকজন দলীয় কর্মীকে আটক করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং গুজরাটের মতো অনেক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কংগ্রেস কর্মীরা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। তামিলনাড়ু কংগ্রেস প্রধান কে এস আলাগিরি, যিনি কুড্ডালোরে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, বলেছেন, এটিকে জনগণের আন্দোলনে পরিণত করার জন্য রেল রোকো এবং স্ট্রিট কর্নার সভা সহ আরও বিক্ষোভ হবে। খাড়গে গণতন্ত্র রক্ষায় রাহুল গান্ধি ও কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমস্ত বিরোধী দলকে ধন্যবাদ জানান। গেহলট বিজেপির সমালোচনা করে বলেন, তার দল অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য অনেক কিছু করেছে, যার মধ্যে তার মতো একজন ওবিসি নেতাকে তিনবার মুখ্যমন্ত্রী করা রয়েছে। বিধানসভায় ওবিসি মালি সম্প্রদায়ের মাত্র একজন সদস্য রয়েছেন এবং তিনি আমি। ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলও ওবিসি সম্প্রদায়থেকে এসেছেন। এদিকে, ‘সংকল্প সত্যাগ্রহ’ নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করে বিজেপি অভিযোগ করেছে যে তারা দেশের সংবিধান এবং দেশের সমগ্র অনগ্রসর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে রাহুল গান্ধির মন্তব্যকে ন্যায়সঙ্গত করার জন্য আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। সংবাদ সম্মেলনে বিজেপির মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী কংগ্রেসের আন্দোলনকে মহাত্মা গান্ধির অপমান বলে অভিহিত করে বলেন, জাতির পিতা যখন সামাজিক কারণে সত্যাগ্রহের আয়োজন করেছিলেন, তখন কংগ্রেস ব্যক্তিগত কারণে তথাকথিত সত্যাগ্রহ ের আয়োজন করেছিল। সত্যের জন্য লড়াই করার সঙ্গে এই আন্দোলনের কোনও সম্পর্ক নেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct