নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: বেশ বেনজির ঘটনা। একটি অর্থবর্ষে শুধুমাত্র ১টি জেলা থেকেই প্রায় ১ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্যসাথীর পরিষেবা পেলেন। যে জেলায় এই ঘটনা ঘটেছে সেটি হল কলকাতা লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা। চলতি অর্থবর্ষে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ স্বাস্থ্যসাথী খাতে পরিষেবা পেয়েছেন। জেলার স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা মনে করছেন মার্চ মাসের মধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই জেলা থেকে স্বাস্থ্যসাথী খাতে পরিষেবা পাবেন। সেই হিসাবে দেখতে গেলে এই জেলা থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১ লক্ষেরও বেশি মানুষ স্বাস্থ্যসাথী খাতে পরিষেবা পাচ্ছেন। এই ঘটনাকে তাঁরা রীতিমত বেনজির হিসাবেই চিহ্নিত করছেন। কেননা বাংলায় এই জেলা থেকেই সব থেকে বেশি অভিযোগ গিয়েছে যে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে রোগী ভর্তি করাচ্ছে না বা পরিষেবা দিচ্ছে না। তারপরেও লক্ষ মানুষ যে পরিষেবা পেয়েছেন এটাই অনেক।জানা গিয়েছে, ২০২১-২২ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে ৮৯ হাজারের মতন মানুষ স্বাস্থ্যসাথী খাতে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়েছিলেন। তার জন্য রাজ্য সরকারের খরচ হয়েছিল ১৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু তার পরেও অভিযোগ উঠেছিল অনেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড চেয়েও পাননি। সেই অভিযোগ গিয়েছিল জেলারই ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ তথা বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে। তিনি আবার বিষয়টি জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তারপরেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। স্রেফ এই কার্ডের আবেদন নেওয়ার জন্যই শিবির করা হয়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দু’দফায় জেলার সব ব্লকেই এই কর্মসূচি গ্রহণ করে ২৫ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে এই কার্ড তৈরি করে দিয়েছে প্রশাসন। এছাড়া ইউআরএল নম্বর আরও অনেকের তৈরি হয়ে গিয়েছে। এমন আরও ১০ হাজার আবেদনকারীর কার্ড তৈরি স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু এর পাশাপাশি স্বাস্থাসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা করাতে সমস্যা হচ্ছে– এমন অভিযোগ নিয়ে জেলার বহু বাসিন্দাই প্রশাসনের কাছে নালিশ করেছিলেন।যদিও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, গত অর্থবর্ষে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জন্য রাজ্য সরকার স্বাস্থ্যসাথী খাতে ১৩৫ কোটি টাকা খরচ করেছিল। এর মধ্যে সিংহভাগ টাকাই হাসপাতালগুলি পেয়ে গিয়েছে। তারপরেও এই জেলা থেকেই বার বার অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী ভর্তি করাতে চাইছে না। তার জেরে ওই সব হাসপাতাল ও নার্সিংহোমেও অভিযান চালাতে হয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের। এই সব কারণেই তাঁদের ধারনা হয়েছিল চলতি অর্থবর্ষে এই জেলা থেকে স্বাস্থ্যসাথী খাতে কম লোকই চিকিৎসা পরিষেবা নেবেন। কিন্তু অর্থবর্ষ শেষের মুখে এসে তাঁরা দেখছেন ইতিমধ্যেই ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ চলতি অর্থবর্ষের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা করিয়ে ফেলেছেন। কেউ করিয়েছেন ক্যান্সারের চিকিৎসা। কারও জটিল অস্ত্রোপচারে কাজে লেগেছে কার্ডটি। শুধু তাই নয়, এই বছরে কেউ কেউ একাধিকবার এই সুবিধা নিয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।যা অবস্থা তাতে দেখা যাচ্ছে মার্চ মাস অবধি ধরলে চলতি অর্থবর্ষে শুধুমাত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকেই ১ লক্ষের বেশি মানুষ স্বাস্থ্যসাথী খাতে চিকিতসার পরিষেবা পেয়েছেন বা পাচ্ছেন। এর জন্য শুধু এই জেলার জন্যই চলতি আর্থিক বছরে রাজ্য সরকারের ১৩০ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। তার মধ্যে ১১০ কোটি টাকা হাসপাতালগুলিকে মিটিয়েও দেওয়া হয়েছে। জেলায় যে এই কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসার হার বাড়ছে, তা চলতি বছরের সংখ্যাই বলে দিচ্ছে। এই কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে জেলার বেসরকারি হাসপাতালগুলি কার্ড নিচ্ছে না, এমন অভিযোগের মধ্যেও যে হারে মানুষজন সুবিধা পেয়েছেন, তা এক প্রকার বেনজির বলেই তাই মনে করছেন জেলার স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct