সেখ মহম্মদ ইমরান, মেদিনীপুর, জয়প্রকাশ কুইরি, পুরুলিয়া, আপনজন: পঞ্চায়েত নির্বাচেনর ঘোষণা এখনও হয়নি। তবে, তার জন্য শাসক দলের তরফে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা সফরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। একের পর এক জেলায় পা বাড়াচ্ছেন। নানা প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন। আর তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছে পঞ্চায়ত নির্বাচনের যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুর ও পুরুলিয়া দুটি সভা করেন। প্রথমে মেদিনীপুর পরে পুরুলিয়ায়। মেদিনীপুরের মঞ্চ থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ঢালাও উদ্বোধন ও শিলন্যাস করলেন মুখ্যমন্ত্রী । মেদিনীপুর কলেজ ময়দানের প্রশাসনিক সভায় দাঁড়িয়ে ৪৫ টি প্রকল্পের উদ্বোধনের পাশাপাশি ৯৬ টি প্রকল্পের শিলান্যাস। করলেন ডার জন্য বাজেট বরাদ্দ ৬৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্য দিয়ে মমতা জানিয়ে দিলেন তার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে উন্নয়নই। তবে প্রতিটি বক্তব্যের মাঝেই কেন্দ্রীয় বঞ্চানার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি । ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কেন্দ্রকে দুষে তিনি বলেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের বিষয়টা আমরা অলরেডি প্রসেস শুরু করেছি, এটা হয়ে গেলে ১৭ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এখনো পর্যন্ত ক্লিয়ারেন্স দিচ্ছেন না। আমাদের মন্ত্রীরা গিয়েও তিন চারবার সাক্ষাৎ করে এসেছে দিল্লিতে। আমরা নিজেদের টাকা দিয়ে কিছু কাজ করেছি। বাংলার বাড়ি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ১০০ দিনের কাজ, সবেতেই টাকা বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। এদিন আদিবাসীদের দাবিকে মান্যতা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, বল ঠেললেন কেন্দ্রের দিকে। তিনি বলেন, আমি মনে করি কুড়মীদের জন্য কুড়মী একাডেমি আছে। আদিবাসীদের জন্য সাঁওতালি একাডেমী আছে। আপনাদের সরি এবং সারনা ধর্ম নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই চিঠি লিখেছি কেন্দ্রীয় সরকারকে। আমরা চাই এটা হোক। এতে মানুষের সেন্টিমেন্ট রয়েছে। আমরা আপনাদের এই বিষয়টা সমর্থন করি। কুড়মি মাহাতোরাও একটা অনুরোধ করেছিল তাদের বিষয়টাও কেন্দ্র সরকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছি। প্রতিটা মানুষের জাতিগত সমস্যা আছে সেগুলো সমাধান করা দরকার। এদিনই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, পুরুলিয়ার সার্বিক উন্নতির জন্য তৃণমূল সরকার কাজ করছে। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার হুটমুড়া প্রশাসনিক সভা মঞ্চ থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে কারা কারা উপভোক্তা, তার উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযোগের সুরে বলেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদিবাসীদের জন্য কিছু করেনি। কিন্তু তৃণমূল সরকার প্রায় সব কাজই করে দিয়েছে। কুর্মি-সহ জনজাতিদের জন্য আলাদা বোর্ড গড়ে দেওয়া হয়েছে বলেও স্মরণ করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। গত লোকসভা নির্বাচনে তো বটেই, গত বিধানসভা নির্বাচনে পুরুলিয়ায় আশানুরূপ ফল করতে পারেনি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। তাও আমরা পুরুলিয়াকে ভুলিনি আমরা। এরপরই বিজেপিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, যারা বলেছিল সব করে দেবে, তারা কিছুই করেনি। উল্টে আমাদেরই সব করতে হচ্ছে। আবাস প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক এবং একাধিক ক্ষেত্রে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে সরগরম হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই নিয়ে জনগণের ক্ষোভ প্রশমিত করতে তিনি বলেন, বাড়ি করতে দিচ্ছে না কেন্দ্র সরকার। আমাদের একটু সময় দিন, আমরা করে দেব। গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ১০০ দিনের কাজ অনেকের কাছেই বিশেষ ভরসার জায়গা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেওয়া বন্ধ করায় থমকে গিয়েছে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প। বিজেপির কেউ কেউ ভুল বোঝাতে এলে, সেগুলো না শোনারও পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। কেন্দ্রীয় সরকার অনগ্রসর শ্রেণির পড়ুয়াদের বৃত্তি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে তাঁর সরকার মেধাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে এই সব পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের বৃত্তি দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি। পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে ছৌ অ্যাকাডেমি কিংবা স্বনির্ভর গোষ্ঠীরল মাধ্যমে পলাশ ফুল থেকে ভেষজ আবির তৈরির পরিকল্পনা যে তাঁরই মস্তিষ্ক প্রসূত, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জোগাড় হবে? কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে না। বঞ্চনা করছে আর মিথ্যে কথা বলছে। বিজেপি নেতারা গিয়ে বিভিন্ন খাতে টাকা দিতে বারণ করছে। ওদের লজ্জা থাকা উচিত কারণ এটা মানুষের টাকা। জনগণের ট্যাক্স থেকে দিল্লি এই টাকা তুলে নিয়ে যায়”। এদিন উন্নয়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেও তিনি যে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন তাও এদিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দাসপুরে তৈরি হচ্ছে গোল্ড হাব। সেখানে অনেক মানুষের চাকরী হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। বেকার যুবকদের জন্য নতুন প্রকল্পেরও ঘোষণা করেছেন তিনি। ওই প্রকল্পের নাম ‘ভবিষ্যৎ’। ওই প্রকল্পের আওতায় ২ লাখ যুবককে আনা হবে। পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণের সুবিধাযুক্ত স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে তাদের। ঋনের জন্য গ্যারেন্টার হবে রাজ্য সরকারই। বেকার যুবকদের ব্যবসামুখী করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের একাধিক জনমুখী প্রকল্প বিশ্বের দরবারে সমাদৃত। কন্যাশ্রী বিশ্বসম্মান অর্জন করেছে। কেন্দ্রের পুরষ্কার পেয়েছে দুয়ারে সরকারও। একের পর এক প্রকল্পে সুবিধা পাচ্ছেন উপভোক্তারা। এদিনই জেলার ৩৫ টি পয়েন্ট থেকে প্রায় চার লক্ষ মানুষের কাছে সরাসরি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রীও এদিন সভামঞ্চ থেকে পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানিয়ে দেন এজেলায় সবুজসাথী প্রকল্পে ৪৭ হাজার ছাত্রছাত্রীকে সাইকেল প্রদান, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প পেয়েছেন ৪৪ হাজার, খাদ্যসাথী ২৫ হাজার, স্বাস্থ্যসাথী ৩৬ হাজার, কন্যাশ্রী ১৮ হাজার, কৃষকবন্ধু ৬৪ হাজার জনকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আছে আরও প্রকল্পের সুবিধা। উন্নয়নের মাধ্যমেই যে তিনি সব শ্রেনীকে এক সুতোয় মালার মতো গেঁথে রাখতে চান সেটাও বারেবারে বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একটা সময় এই জেলার জঙ্গলমহল ছিল মাওবাদীদের কবলে। ছিল সন্ত্রাস। গতকাল তিনি যখন মেদিনীপুরে তখন কয়েক বছর আগে সেই দিনটিতে শিলদায় ২৪ জন ইএফআর জওয়ানের মৃত্যু ঘটেছিল মাওবাদীদের আক্রমনে। সেকথাও এদিন স্মরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু পালাবদলের পর মাওবাদী সমস্যা আর নেই। মূলস্রোতে ফিরে এসেছে তারাও। মুখ্যমন্ত্রীও এদিন বলেছেন, যেসব মাওবাদীরা আত্মসমর্পন করেছিল তাদের আমরা চাকরী দিয়েছি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct