আপনজন ডেস্ক: সেঞ্চুরি করে ব্যাট তুলে উদ্যাপন করলেন, মুখে দেখা গেল চওড়া হাসি। এমন চওড়া হাসির কারণ দুটি। একে তো স্পিন সহায়ক উইকেট দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে দলকে নিয়ে গেছেন ভালো অবস্থানে। সঙ্গে নিজেকে নিয়ে গেছেন এমন এক উচ্চতায়, যেখানে এর আগে পৌঁছাতে পারেননি ভারতের কোনো ক্রিকেটার। ভারতের একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে তিন সংস্করণেই সেঞ্চুরি পেয়েছেন রোহিত শর্মা। বিশ্বে চতুর্থ অধিনায়ক হিসেবে গড়েছেন এই কীর্তি। এর আগে অধিনায়ক হিসেবে তিন সংস্করণে সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিলকরত্নে দিলশান, ফাফ ডু প্লেসি ও বাবর আজম। ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন—এমন উইকেটে রোহিতের এই সেঞ্চুরির পাশাপাশি রবীন্দ্র জাদেজা ও অক্ষর প্যাটেলের জুটি ম্যাচ থেকে অনেকটা অস্ট্রেলিয়াকে ছিটকে দিয়েছে। এই দুই অলরাউন্ডারের ৮১ রানের জুটিতে দ্বিতীয় দিন শেষে ১৪৪ রানে এগিয়ে আছে ভারত। জাদেজা ৬৬ ও অক্ষর ৫২ রানে অপরাজিত আছেন। তৃতীয় দিনের শুরুতে এই জুটি ভাঙাই এখন অস্ট্রেলিয়ার বড় চ্যালেঞ্জ। বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭৭ রানে গুটিয়ে দিয়েছিল ভারত। টেস্টের প্রথম দিনেই আঁচ পাওয়া গিয়েছিল টেস্টের দ্বিতীয় দিনটা রোহিতের হতে পারে। ওয়ানডে মেজাজের ফিফটিতে ভারতকে প্রথম দিনেই এগিয়ে রেখেছিলেন এই ওপেনার। অপরাজিত ছিলেন ৬৯ বলে ৫৬ রান করে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস থেকে ১০০ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করেন রোহিত ও আগের দিন নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে ক্রিজে আসা রবিচন্দ্রন অশ্বিন। রোহিত ওয়ানডে মেজাজেই ব্যাট করতে থাকেন। উইকেটের অসমান বাউন্স তাঁকে টলাতে পারেনি। অশ্বিন ব্যাট করেছেন টেস্ট মেজাজে। টড মার্ফির বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে এই অলরাউন্ডার করেন ২৩ রান। ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায় ২৩ রানও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ক্রিজে এসে টিকে থাকতে পারেননি চেতেশ্বর পূজারাও। আউট হয়েছেন স্বভাববিরুদ্ধ শট খেলে। প্যাডেল সুইপ খেলতে গিয়ে টপ এজড হয়েছেন তিনি। হয়তো ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন উইকেটে তিনিও দ্রুত রান তোলার দিকেই মনোযোগী ছিলেন। রোহিত-বিরাট কোহলির জুটিটাও বড় হয়নি। প্রথম সেশনে ২ উইকেটে হারিয়ে ৭৪ রান তোলা ভারত দ্বিতীয় সেশনের প্রথম বলেই কোহলির উইকেট হারায়। মার্ফির লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে উইকেট দিয়ে আসেন কোহলি। অশ্বিনের পর পূজারা ও কোহলিকেও ফিরিয়েছেন অভিষিক্ত মার্ফি। কোহলির বিদায়ে ক্রিজে আসেন অভিষিক্ত সূর্যকুমার যাদব। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মতো টেস্টেও সূর্য রানের খাতা খুলেছেন বাউন্ডারি দিয়ে। মার্ফিকে ঠিকঠাকভাবে সামলালেও আরেক অফ স্পিনার নাথান লায়নের বলে বোল্ড হয়েছেন সূর্য। রাউন্ড দ্য উইকেট দিয়ে করা বল টার্ন করে ব্যাট প্যাডের মধ্যে দিয়ে সূর্যর স্টাম্পে আঘাত হানে।
এক প্রান্তে আসা যাওয়ার মিছিলের কারণে কিছুটা ধীরলয়ে ব্যাট করতে থাকেন রোহিত। বল হাতে পাঁচ উইকেট নেওয়া রবীন্দ্র জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে ৬১ রানের জুটি গড়েন তিনি। এই জুটির পথেই ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরির দেখা পান ভারতীয় অধিনায়ক। অধিনায়ক রোহিতকে ফেরান অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ইনিংসের ৮১তম ওভারে নতুন বল হাতে নিয়ে রোহিতকে বোল্ড করেন কামিন্স। কামিন্সের দুর্দান্ত এক বলে ১২০ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। অভিষিক্ত শ্রীকর ভরতও ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। ফিরেছেন ৮ রান করে। শ্রীকরের উইকেট দিয়ে অভিষেক টেস্টেও ৫ উইকেটের দেখা পেয়েছেন মার্ফি। ২৭০ রানে ৭ উইকেট তুলে নেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া যখন দ্রুত ভারতকে অলআউট করার কথা ভেবেছে, তাদের হতাশা বাড়িয়েছেন জাদেজা ও অক্ষর। উইকেট নিতে মরিয়া অস্ট্রেলিয়া মারনাস লাবুশেন ও ম্যাট রেনশকে দিয়েও বল করিয়েছেন এই সময়ে। তাঁরা উইকেট তো এনে দিতে পারেনইনি, উল্টো রান বিলিয়েছেন। দিনের শেষ ওভারে জাদেজাকে ফেরানোর সুযোগ পায় অস্ট্রেলিয়া। তবে স্টিভেন স্মিথ ক্যাচ মিস করেন। আর কোনো উইকেট না হারিয়েই দিনের খেলা শেষ করেছে ভারত। জাদেজা ও অক্ষর যখন প্যাভিলিয়নে ফেরেন, ভারতের প্রথম ইনিংসের রান ৭ উইকেটে ৩২১।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct