ভূতের কলম
আহমাদ কাউসার
গ্রামের স্কুলে ছেলে মেয়েরা সাধারণত হেঁটেই যায়।মিতুলও প্রতিদিন স্কুলে হেঁটে যায়।মিতুলের বাড়ি থেকে স্কুলে যেতে দশ পনের মিনিট সময় লাগে।সে কখনও স্কুল বন্ধ করেনা।স্কুলে যাবার সময় মিতুলের মা মজার মজার খাবার টিফিন বক্সে দিয়ে দেয়।মিতুল টিফিনের সময় খাবার গুলো খায়।মিতুল পড়াশোনায় খুব মনোযোগী কিন্ত মিতুলের একটা সমস্যা হলো, সে অংকে কাচা।অংক করার সময় তার কিছুই মনে থাকে না।তাই সে ক্লাশে কখনো প্রথম হতে পারেনা।সে ক্লাশ ওয়ান থেকেই তৃতীয় হয়ে আসছে।এখন পঞ্চম শ্রেণীতেও তার রোল তিন।মিতুলের মনে খানিকটা কষ্ট সে প্রথম হতে না পারার কারণে।বরাবরই জিহাদ প্রথম আর ইমু দ্বিতীয় হয়।তাই মিতুল বাড়িতে এসে বার বার অংক নিয়েই বেশী বেশী ব্যাস্ত থাকে।পরীক্ষার সময় সব কিছু উলট-পালট হয়ে যায়।অংকের নিয়ম কানুন সব ভূলে যায়।মিতুল তার মা’র কথামতো রুটিন মেনে পড়াশোনা করে।সকালে নিজ থেকে ঘুম থেকে জাগে।ঘুম থেকে ওঠার জন্য মা তাকে ডাক দিতে হয় না।স্কুলের যাবার সময় হলে নিজ থেকেই রেডি হয়ে নেয়।একদিন মিতুলের মা মিতুলকে টিফিনে খাবার হিসেবে নুডলস আর মিষ্টি বক্সে দিয়ে দিল।মিতুল কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হাতে টিফিন বক্স নিয়ে প্রতিদিনের মতো স্কুলে যাচ্ছে। পথিমধ্যে চার রাস্তার মোড়ে তালগাছ থেকে মিতুলের সামনে সাদাকাপড় পরে এক মহিলা দাঁড়িয়ে বললো
‘--মিতুল তোর টিফিন বক্সে মিষ্টি আছে, আমাকে একটা মিষ্টি দে।মিতুল মহিলার দিকে তাঁকিয়ে বললো ---’তুমি কে,কিভাবে বুঝলে আমার টিফিন বক্সে মিষ্টি আছে? ---আমি ভূত,এই তাল গাছেই আমি থাকি।ভূতেরা কোথায় কি আছে সব দেখতে পায়।তোর টিফিন বক্সে তিনটা মিষ্টি আাছে। ----’তুৃমি তো দেখতে মানুষের মতো।শুনেছি ভূত দেখতে খুব বিশ্রি, ভয়ঙ্কর ওদের চেহারা। --হ্যা,ঠিক বলেছিস,আমরা বিশ্রি। তবে আমরা যে কোন রূপ ধারণ করতে পারি।তুই যাতে ভয় না পাস তাই আমি মানুষের বেশ ধরেছি। --ওহ,তাই! --হ্যাঁ। --ভূতেরা নাকি খুব খারাপ? --সব ভূত খারাপ না,কিছু কিছু ভূত আছে খারাপ,তোদের মানুষের মধ্যেও তো খারাপ আছে ভালো আছে।দে আমাকে একটা মিষ্টি দে। --আচ্ছা দিচ্ছি। --এই নাও,তুমি তিনটে মিষ্টিই নিয়ে যাও। --আরে না একটা দে, আমাকে সব দিলে তুই কী খাবি। --আমি স্কুল শেষে বাড়িতে যেয়ে খাব,বাড়িতে অনেক মিষ্টি আছে।তোমার ছেলে মেয়েদের নিয়ে তিনটে মিষ্টি খেও। মিতুল মিষ্টিগুলো ভূতের হাতে তুলে দিল।ভূতটা মিষ্টি পেয়ে খুব খুশি হলো এবং মিতুলের হাতে একটা কলম তুলে দিল। --এই কলমটা দিয়ে তুই লিখবি। এটা সাধারণ কলম নয়।এটা দিয়ে তুই যা লিখতে ইচ্ছে করবি নির্ভূলভাবে তা লিখতে পারবি।
ভূতের কথাশুনে মিতুল জানতে চাইলো ---আমি অংক ভূলে যাই পরীক্ষায় অংক করতে গেলে কিছুই মনে আসেনা,এটা দিয়ে লিখলে কী ভূল হবে না? --না,তুই এটা দিয়ে যে অংকটা করতে চাইবি,সেটা একদম ঠিকঠাক করতে পারবি। --আমি স্কুুলে গিয়ে পরীক্ষা করে দেখবো তোমার কথা ঠিক কি না।তাহলে আমি এখন যাই,স্কুলের ক্লাশ শুরু হয়ে যাবে। --ঠিক আছে,যা তোর জন্য শুভকানা রইলো।মিতুল কলমটা ব্যাগে যত্ন করে রেখে দিল।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো ভূতের কথা যদি সত্য হয় তাহলে এবার পরীক্ষায় সে সব অংক সঠিকভাবে করতে পারবে।অংকে কম নাম্বার পাওয়ার কারণে সে প্রথম হতে পারেনা।মিতুল খুশি মনে স্কুলে গেল।ক্লাশ শুরু হতে আর বেশী দেরি নেই। তাই কলমটা দিয়ে স্কুলে লিখে দেখলো না।স্কুল শেষে মিতুল বাড়িতে এসে একটা খাতা নিয়ে ভূতের দেওয়া কলমটা দিয়ে অংক করতে বসলো।একে একে সে পুরো চ্যাপটার শেষ করলো, কোন অংকই ভূল হলো না।ভূতের সব কথা সত্যি হলো।মিতুল কলমটা যত্ন করে রেখে দিলো।এক মাস পর বার্ষিক পরীক্ষা তখন সে পরীক্ষায় এটা দিয়ে লিখবে।প্রতিদিন বাসায়ও স্কুলে অন্য কলম দিয়ে লিখে।ভূতের দেওয়া কলমটা দিয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় লিখবে।দেখতে দেখতে বার্ষিক পরীক্ষা চলে এলো।মিতুল প্রতি বিষয়ের পরীক্ষা এই কলমটা দিয়ে দিল।মিতুলের সব বিষয়ের পরীক্ষা খুব ভালো হলো।পরীক্ষার রেজাল্টে মিতুল প্রথম হলো।অংক সহ সব বিষয়ে মিতুল সবার চেয়ে বেশী নাম্বার পেয়ে প্রথন হলো।স্কুলের টিচাররা মিতুলের রেজাল্ট দেখে অবাক হয়ে গেল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct