রাজু আনসারী, অরঙ্গাবাদ, আপনজন: নদীর উপর অবৈধভাবে মাটি ভরাট করে অবাধে চলছে দোকান কিংবা বাড়ি তৈরির কাজ। তৈরি হচ্ছে বড় বড় বিল্ডিং। ফলে ঐতিহ্যবাহী মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের মাধবজানি নদী আজ অস্তিত্ব সংকটের মুখে। দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে দোকান পাট কিংবা বাড়ি বিল্ডিং তৈরি করার কাজ চললেও নির্বিকার পুলিশ প্রশাসন। হেলদোল নেই বিডিও, ভূমি সংস্কার কিংবা ভাঙন প্রতিরোধ দপ্তরেরও। ক্রমশ নদী দখল হলেও ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি নদী ভরাট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্লক প্রশাসন, ভাঙন প্রতিরোধ দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন প্রতাপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। যদিও অভিযোগ জানানোর পরেও জয়কৃষ্ণপুরে নদীর উপরে রাতের অন্ধকারে বিল্ডিং তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। স্বাভাবিক কারনেই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
জানা গিয়েছে, সামসেরগঞ্জের কাকুড়িয়া সংলগ্ন প্রতাপগঞ্জ-উত্তর মোহাম্মদপুরের কাছে গঙ্গা থেকে উৎপত্তি হয়েছে মাধবজানি নদীর। দৈর্ঘ্য প্রস্থে বিশালাকারের এই নদী নিমতলা, কোহেতপুর, নামো চাচন্ড, ঘোষপাড়া, জয়কৃষ্ণপুর, চাঁদনীদহ হয়ে লস্করপুরের কাছে ফরাক্কা থেকে বয়ে আসা ফিডার ক্যানেলে সঙ্গে মিশেছে। আগে এই নদী দিয়েই চলেছে অনেক নৌকা। মাঝিদের মুখে শোনা গেছে ভাটিয়ালী গান। সন্ধার সময় বন্ধুদের গল্পের আড্ডা বসত নদীর ধারে। মাছেদের খেলা, কিশোরদের সাঁতার প্রতিযোগিতার পাশাপাশি এলাকার জল নিকাশি ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম ছিল এই নদী। মানুষের রুটি রোজগারের একটা উৎসও ছিল এই মাধবজানী। চাষবাসের জল সরবরাহ করার পাশাপাশি প্রাইমারীর পাঠ্যপুস্তকে পড়ানো হতো এই মাধবজানী সম্পর্কে।সামসেরগঞ্জের জয়কৃষ্ণপর গ্ৰামের নামকরণ হওয়ার পিছনেও মাধবজানি নদীর গল্প রয়েছে। জানা যায়, জয়কৃষ্ণপরের কাছে প্রচন্ড বেগে বয়ে আসত নদীর স্রোত। তৎকালীন হিন্দু অধ্যুষিত এই গ্রামে মাঝিরা দাঁড় টানতে গিয়ে “জয় কৃষ্ণের জয়” বলে ধ্বনী উচ্চারন করতেন এবং পরবর্তীতে সেই হিসাবে গ্রামের নাম হয় জয়কৃষ্ণপুর। কিন্তু বর্তমানে সেসমব অতীত। জয়কৃষ্ণপর, চাঁদনীদহ এবং লস্করপুরের কিছু কিছু জায়গায় মাধবজানীর ছিটেফোটা দেখা গেলেও বাকি প্রায় সব জায়গায় বিলুপ্ত। কোথাও মাটি ভরাট করে বড় বড় বিল্ডিং তৈরী করা হয়েছে, কোথাও আবার দোকানঘর। কোথাও ঘর-বাড়ি তৈরী করা হয়েছে। ফলে জল নিকাশি ব্যবস্থা বিলুপ্ত ও নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। ঐতিহ্যবাহী এই মাধবজানি নদী অবিলম্বে সংস্কার করে রক্ষণাবেক্ষণের দাবিতে সরব হয়েছেন সাধারণ মানুষ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct