এম মেহেদি সানি, সাঁতরাগাছি, আপনজন: হাওড়ার সাঁতরাগাছির কাছে আল আমীন মিশনের নয়াবাজ ক্যাম্পাসের হস্টেল বিল্ডিংয়ের ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল শুক্রবার সন্ধ্যায়। হাওড়ার খলতপুরে আশির দশকে পথ চলা শুরু করে আল আমীন মিশন রাজ্যের শিক্ষা মানচিত্রে আজ মহীরূহে পরিণত হয়েছে। শুধু এ বছরেই আল আমীন মিশনের পাঁচশোরও বেশি পড়ুয়া ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আল আমীন মিশনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তথা সমাজ গড়ার কারিগর এম নুরুল ইসলামের হাত ধরে আজ রাজ্যের প্রায় সিংহভাগ জেলায় শাখা স্থাপন করার পাশাপাশি দিল্লি ও বিহারেও পা বাড়িয়েছে। বিশেষত সংখ্যালঘু সমাজের শিক্ষার উৎকর্ষের বিকাশে অাল আমীন মিশন যে ভূমিকা নিয়ে চলেছে তাকে আরও ত্বরান্বিত করতে হাওড়ার নয়াবাজে নূতন ক্যাম্পাসের যাত্রা শুরুর লক্ষ্যে ভিত্তিপ্রস্তর করলেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। শিলান্যাস অনুষ্ঠানে ছাত্রকালীন ও অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে বিজ্ঞানের যুগে অগ্রগতির ধারায় সংখ্যালঘু সমাজে যে শিক্ষার নবজাগরণ ঘটেছে তা তুলে ধরেন ফিরহাদ। এ বিষয়ে ফিরহাদ হাকিম বলেন, একসময় সংখ্যালঘুদের জীবনযাত্রা মানেই আলু, টমোটা বিক্রি করা। এখন সেই ধারণা আমূল পাল্টে গেছে। সংখ্যালঘু সমাজ থেকে আজ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়িার, অধ্যাপক হচ্ছেন। আর খুব বেশি দিন আর বাকি নেই, যেদিন দেখা যাবে রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতালে আলি, ইরফান প্রমুখ মুসলিম ডাক্তারদের দেখা যাবে।
ফিরহাদ জানান, সংখ্যালঘুরা আরও বেশি সাফল্য পান, এই কামনা করে থাকেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা চান সংখ্যালঘু সমাজ আরও বেশি আসুক। মুখ্যমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে রাজ্যের সংখ্যালঘুরা যে শিক্ষায় আজ অনেকটাই অগ্রসর, সেই দাবি করে ফিরহাদ বলেন, আগে শোনা যেত সংখ্যালঘুদের মধ্যে ৬০ শতাংশই আসামি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সংখ্যালঘুদের ৬০ শতাংশ ইন্টেলেকচ্যুয়াল। রাজ্যের প্রায় প্রতিতি মেডিক্যাল কলেজে মুসলিম পড়ুয়াদের উপস্থিতি হল আল আমীন মিশনের ফসল। তাদের সেই অবদান সমাজে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ফিরহাদ আশাপ্রকাশ করেন, সেই দিন শীঘ্রই আসবে যেদিন আল আমীন মিশনের পড়ুয়ারা শুধু ডাক্তার নয়, রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপক হিসেবে রয়েছেন। তবে, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের এখন আধিক্য থাকায় সমাজে সিভিল সার্ভেন্টের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন ফিরহাদ। তাই ফিরহাদ বলেন, এবার আল আমীন মিশন আইএএস, আইপিএস গড়ার কাজে এগিয়ে আসুক। আর সেই কাজ সম্পন্ন হলে মুসলিম ছেলেমেয়েরা তখন গর্ব ভরে বলতে পারবে, হাম কিসিসে কম নেহি। এদিন বিগত কয়েক বছরে আল আমীন মিশন থেকে যেসব ছাত্রছাত্রী ডাক্তারিতে সুযোগ পেয়েছেন সেই সব কৃতীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।এদিনের অনুষ্ঠানে সভপতিত্ব করেন মুহাম্মদ আলি। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অরূপ রায়, জেআইএস বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সরদার চরণজিৎ সিং, ডিরেক্টর অমনজিৎ সিং, স্থানীয় বিধায়ক কল্যাণ ঘোষ, বৌদ্ধ নেতা অরুণজ্যোতি ভিক্ষু, অবু সালেহ মুহাম্মদ রেজওয়ানুল করিম, মারুফ আজম, হাসিব আলম, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ একেএম ফারহাদ, উচ্চপদস্থ আধিকারিক শামসুর রহমান প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন দিলদার হোসেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটির তদারকিতে ছিলেন হাফিজুর রহমান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct