রামাল্লার উত্তর-পশ্চিমে জিবিয়া গ্রামের কাছে একটি বিশাল সবুজ উদ্যান আছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরের ঘনবসতিপূর্ণ জীবনের ব্যস্ততা থেকে স্থানীয় ফিলিস্তিনিরা একটু স্বস্তিতে নিশ্বাস ফেলতে বহু দিন ধরে এই উদ্যানে বেড়াতে আসেন। ছুটির দিনে অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসেন। এখানে যেসব ইসরাইলি জোর করে বসতি গেড়েছেন, তাদের অনেকে সশস্ত্র অবস্থায় ইসরাইলি সেনাদের সমর্থন নিয়ে উদ্যানে ঘুরতে আসা লোকদের হয়রানি করছেন ও তাড়িয়ে দিচ্ছেন।এ নিয়ে লিখেছেন জালাল আবু খাতের। আজ শেষ কিস্তি।
তাঁরা বলতে লাগলেন, আমরা নাকি ওই কৃষককে জলপাই তোলাতে, ফসল কাটাতে অংশ নিয়ে তাঁদের সমস্যায় ফেলেছি। এই বলে তঁারা আমাদের চলে যেতে বলছিলেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে থাকা কৃষক ওই জমির বৈধ মালিক ছিলেন। এ কারণে আমরা সরে গেলাম না। সেখান থেকে আমাদের সরাতে পাশের একটি পাহাড়ে উঠলেন। এ সময় তাঁরা সবাই মুখোশ পরে ছিলেন। তাঁরা আমাদের দিকে পাথর ছুড়তে শুরু করলেন। তাঁরা জলপাই পাড়তে আসা কৃষক, সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবকদের পার্ক করা গাড়িও ভাঙচুর করলেন। আমি যখন সেই অবৈধ দখলদার লোকগুলোর পাথরের আঘাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছিলাম, তখন আমি একটি আলের মতো জায়গা থেকে পড়ে গিয়েছিলাম। আর একটা ধাতব রডের মতো কিছু একটা আমার পায়ে বিদ্ধ হয়েছিল। আমি কোনোরকমে দৌড়ে গাড়ির ভেতর ঢুকে দ্রুত সেখান থেকে গাড়ি চালিয়ে চলে আসতে পেরেছিলাম। পরে শুনেছি, ওই দিন ওই সেটেলারদের পাথরের আঘাতে সেখানে থাকা ১১টি গাড়ি ভেঙে গিয়েছিল। খেয়াল করার বিষয়, মুখোশধারীরা যখন আমাদের গাড়ি ভাঙচুর করছিলেন, তখন ইসরাইলি পুলিশ পাশেই দাঁড়িয়েছিল। তারা এগিয়ে আসেনি। কারণ তারা আদতে এখানে শান্তি বজায় রাখার জন্য নিয়োজিত হয়নি। তাদের এখানে মোতায়েন করা হয়েছেই উসকানি দেওয়া এবং সেটেলারদের অবৈধ কাজকে সমর্থন দেওয়ার জন্য। এই কথিত খামারগুলোতে যে ইসরাইলিরা বসত করেন, তাঁরা কখনো একা একা হামলা করেন না। তাঁদের এই হামলায় ও হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডে পুলিশের পূর্ণ সমর্থন থাকে।
জেরুজালেমভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা বি’সেলেম–এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখানে অবৈধভাবে বসতি গাড়া ইসরাইলিরা স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের কোণঠাসা করতেই হয়রানিমূলক কাজ করে থাকে। সরকারের জমি দখলপ্রক্রিয়ার পরিকল্পনার এটিও একটি অংশ। তারা বলেছে, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেটেলাররা কমপক্ষে ৬৫টি খামার করেছে এবং জোর করে করা এসব খামার বানানোর মাধ্যমে ২ হাজার ৮৬ হেক্টর জায়গা তারা দখল করে নিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে সেখানে খালেদ নোফাল নামের এক ফিলিস্তিনিকে এ অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা গুলি করে মেরেছে। তারা খালেদকে মারার পর পুলিশকে বলেছে, খালেদ তাদের সেই অবৈধ খামারে নাকি ঢুকতে চেয়েছিলেন। তাদের সমর্থন করে ইসরাইলি পুলিশ চার বছরের কন্যার পিতা খালেদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছে। গত শুক্রবার বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ইসরাইলে আরও কট্টর শাসক এলেন। এখন অবৈধ সেটেলাররা পশ্চিম তীরে আরও দ্রুততায় ফিলিস্তিনিদের জমি চুরি করার চেষ্টা করবে। আমাদের জিবিয়া উদ্যানকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তা পারবে না। এই মাঠ, এই উদ্যান এই জমি আমাদের। আমাদের যত ভয়ভীতি দেখানো হোক, আমরা আমাদের মাটি ছেড়ে যাব না। (সমাপ্ত...)
লেখক জেরুসালেমের বাসিন্দা ও স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ ডুন্ডি-র ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস অ্যান্ড পলিটিকস বিভাগের ছাত্র।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct