নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: গত সোমবার এবং মঙ্গলবার টানা দুদিন ধরে চরম চাঞ্চল্য পড়ে রইলো কলকাতা হাইকোর্টের অন্দরমহলে। বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাস ঘিরে শাসক দলের আইনজীবীদের লাগাদার বিক্ষোভ প্রদর্শন এমনকি বিচারপতির বাসভবন এলাকায় পোস্টার লাগানো সবই কলকাতা হাইকোর্ট কে কলঙ্কিত করলো বলে আইনজীবীদের একাংশের অভিযোগ। যারা জোড়াফুল কিংবা পদ্মফুল, কাস্তে কিংবা হাত প্রতীকের অনুগামী নয় এমন আইনজীবীরা কলকাতা হাইকোর্ট কে রাজনৈতিক ময়দান করার জন্য চরম নিন্দা জানিয়েছেন। আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল জানান -'' আমরা সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের কাছে যেন ভূল বার্তা দিয়ে ফেলছি।আইনী পেশাগত বিষয়েও প্রশ্নচিহ্ন উঠছে"। গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে ১৩ নম্বর এজলাসের বাইরে বেনজির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তৃণমূলের সমর্থক বলে পরিচিত আইনজীবীদের একাংশ তীব্র হট্টগোল জুড়ে দিয়েছিলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাসে । সেই ঘটনার রেশ দেখা গেল মঙ্গলবারেও।এই ঘটনা ( এজলাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন) নিয়ে আদালত অবমাননার রুল জারি করে মামলা প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের এজলাসে পাঠালেন বিচারপতি মান্থার।এদিন বিচারপতি মান্থার গত সোমবারের ঘটনাকে বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সেইসঙ্গে বলেছেন, একাংশের আইনজীবী সোমবার যা যা করেছেন তাতে উশৃঙ্খল মনোভাব দেখা গিয়েছিল।শুধু তাই নয়। বিচারপতি মান্থার আরও বলেছেন, হাইকোর্টের ১৩ নম্বর এজলাসের বাইরে যে সিসি ক্যামারগুলি রয়েছে সেগুলির ফুটেজ সংরক্ষণ করে প্রধান বিচারপতির এজলাসে পাঠাতে হবে। সবটা দেখে প্রধান বিচারপতি সিদ্ধান্ত নেবেন ওই ঘটনায় কোনও ফৌজদারি মামলা রুজু হবে কিনা?গত সোমবার নির্ধারিত সময়ের প্রায় দু'ঘণ্টা পর এজলাসে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন বিচারপতি মান্থার। ওই ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে আখ্যা দিয়েছিলেন অনেক আইনজীবী। মূলত বিচারপতি মান্থার কিছু রায় নিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল ১৩ নম্বর এজলাসের বাইরে।ওই ঘটনার পর বা অ্যাসোসিয়েশনের এক পদাধিকারী চিঠি দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতিকে। এদিন তা নিয়েও কলকাতা বার অ্যাসোসিয়েশনকে প্রধান বিচারপতির কড়া কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। কেন গত সোমবার ওই সময়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল যাননি সেই প্রশ্নও তুলেছে হাইকোর্ট।এখন দেখার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়ার পর প্রধান বিচারপতি কী পদক্ষেপ করেন?তার দিকে তাকিয়ে অনেকেই। বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাস বয়কটের ডাক দিয়েছেন আইনজীবীদের একাংশ। ইতিমধ্যেই তাঁর এজলাসের নিরাপত্তাও বাড়ান হয়েছে। তবে এজলাসে কি কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন আছে? হাইকোর্টে সেই বিষয় নিয়ে এদিন জানালেন ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল।এজলাস বয়কট নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয়েছে। এদিকে প্রধান বিচারপতির এজলাসে ভীড় ছিল অত্যাধিক । একদিকে বয়কট বিরোধী আইনজীবীরা, অন্যদিকে বয়কটপন্থীরা। শুনানিতে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, মামলার নথি জমা দিয়ে গত সোমবার ও মঙ্গলবার ১৩ নম্বর এজলাসের সামনে অব্যবস্থা ছবি তুলে দেখাঁন। আবার বিচারপতি মান্থার এর বাড়ির সামনের পোস্টারের অংশও তুলে দেখান। যে ঘটনা ঘটনা হয়েছে তাতে রুল ইস্যু করে জবাব চাওয়া হোক, দাবি করেন। এর পাশাপাশি ১৩ নম্বর এজলাস বয়কট নিয়ে মধ্যস্থতায় হাজির ছিলেন আইনজীবী সপ্তাংশু বসু। তিনি বলেন, -'যা ঘটেছে তা এখানেই নিষ্পত্তি করা হোক। কারণ যা ঘটেছে সেটা আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে না। কিন্তু কিছু পদক্ষেপ হলে সেটা সহকর্মীদের জন্য খারাপ হবে'।প্রধান বিচারপতি এক্ষেত্রে পাল্টা প্রশ্ন করেন, - কেন গত সোমবার তারা এটা আটকালেন না। জানান, তারা চিত্কারও করছেন। এটা রেকর্ড করা হলে সেটা ভালো হবে না' বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ডেপুটি সলিসিটার জেনারেল বিল্লদল ভট্টাচার্য জানান, -' আদালত চাইলে কেন্দ্র সেন্ট্রাল ফোর্স দিতে তৈরি'। আদালতের কাছে আবেদন জমা পড়েছে বলেও জানা গিয়েছে।এখন প্রধান বিচারপতির এজলাসের দিকে তাকিয়ে এই রাজ্যের আইনমহল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct