অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মালয়েশিয়ায় ক্ষমতায় আসা আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকার কতদিন টিকবে এই হিসাব শুরু করেছে অনেকে। যদিও প্রাথমিক পরীক্ষাগুলো তিনি বেশ ভালোভাবে উতরে গেছেন। এর মধ্যে পেরিকাতানের বাইরের সব এমপির সমর্থনে সংসদের স্পিকার নির্বাচিত করতে সক্ষম হয়েছেন আনোয়ার। আস্থা ভোটে জয়ী হওয়ার চ্যালেঞ্জেও তিনি জিতেছেন। মন্ত্রিসভা গঠনে বিপত্তি হয়নি। এর পরও বেশ কিছু উদ্বেগ ও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে আনোয়ারের সামনে। এ নিয়ে লিখেছেন মাসুম খলিলী। আজ প্রথম কিস্তি।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে মালয়েশিয়ায় ক্ষমতায় আসা আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকার কতদিন টিকবে এই হিসাব শুরু করেছে অনেকে। যদিও প্রাথমিক পরীক্ষাগুলো তিনি বেশ ভালোভাবে উতরে গেছেন। এর মধ্যে পেরিকাতানের বাইরের সব এমপির সমর্থনে সংসদের স্পিকার নির্বাচিত করতে সক্ষম হয়েছেন আনোয়ার। আস্থা ভোটে জয়ী হওয়ার চ্যালেঞ্জেও তিনি জিতেছেন। ঐক্য সরকারের অংশীদার দলগুলোর মধ্যে একটি সম্মত সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর হয়েছে এর আগেই। মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে কিছু সমালোচনা এলেও তা বড় ধরনের বিপত্তি সৃষ্টি করেনি। আনোয়ার সমালোচনাকে গ্রাহ্য করছেন, তবে ‘প্রধানমন্ত্রী ইহুদিবাদের দালাল’ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন সমালোচনাকে তিনি জবাবদিহিতার মধ্যে এনেছেন। এর পরও বেশ কিছু উদ্বেগ ও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারের সামনে। তার ঐক্য সরকার কতদিন স্থায়ী হবে সেই বিবেচনার ক্ষেত্রে এসব চ্যালেঞ্জ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ লিম কিট সিয়াং-এর মতে, আনোয়ার ও তার ঐক্য সরকারের দীর্ঘায়ু নির্ধারণ করবে ক্ষমতার প্রথম বছরে ছয়টি ‘টিকে থাকার পরীক্ষা’ কতটা ভালোভাবে পাস করেন তার ওপর। এর বাইরে আরো কতগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে আনোয়ারের সামনে। আনোয়ারের সরকারের জন্য প্রথম লিটমাস পরীক্ষাটি শুরু হয় ১৯ ডিসেম্বর দেওয়ান রাকয়াতের (সংসদ) উদ্বোধনের মাধ্যমে। ২২২ আসনের সংসদে ১৪৭ ভোট পেয়ে শাসক জোট মনোনীত স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এই নির্বাচনেই নিশ্চিত হয়ে যায় সমসংখ্যক ব্যবধানে আনোয়ার আস্থা ভোটে জিতে যাচ্ছেন। সেটিই বাস্তবে ঘটেছে আস্থা প্রস্তাব পাস হওয়ার পর। পেরিকাতান জোটে বারসাতু ও পাসের ৭৪ জন সংসদ সদস্যের বাইরে কেউই ঐক্য সরকারের বিপক্ষে ভোট দেবে না নিশ্চিত হয়ে বিভক্তি ভোট দাবি করেনি বিরোধী পক্ষ। এ অবস্থার পেছনে ঐক্য সরকারের শরিক দলগুলোর স্বাক্ষর করা সমঝোতা স্মারকের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। আনোয়ার ইব্রাহিম শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবেলায় নিজের করণীয় ঠিক করে নিয়েছেন বলে মনে হয়। তিনি নিজেই বলেছেন, এবারের সরকার পাকাতান হারাপানের সরকার নয়। এটি হলো জাতীয় ঐক্যের সরকার। ফলে এই সরকারের অংশীদার জোটগুলো ঠিক করবে কারা সেই জোটের মন্ত্রী হবেন। এভাবে মন্ত্রিসভা হওয়ায় সমালোচনা বা বিভক্তি বিভাজন কম হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম তার প্রতি আস্থা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, ‘এখন সময় কাজ করার এবং জনগণ যে পরিবর্তনগুলো কামনা করছে তা বাস্তবে রূপ দেয়ার।’ এর আগে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের নেতৃত্বাধীন পেরিকাতান ন্যাশনাল (পিএন) জোট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনোয়ারের নিয়োগের সমালোচনা করেছিল এবং সংসদে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রদর্শন করার জন্য চ্যালেঞ্জ করেছিল। সংসদে আস্থা ভোটের পর সেই চ্যালেঞ্জ অকার্যকর হয়ে পড়ল। আনোয়ারের সামনে এখন পরবর্তী পরীক্ষা হবে জোটের শরিক বারিসানের প্রধান দল উমনুর নেতৃত্ব নির্বাচন। নির্বাচনের জন্য উমনুর নেতৃত্ব নির্বাচন ছয় মাসের জন্য পিছিয়ে দেয়া হয়। আগামী ১১-১৪ জানুয়ারি দলটির সাধারণ অধিবেশনে দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। এতে দলের বর্তমান প্রধান ও উপপ্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ হামিদিকে চ্যালেঞ্জ করার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী খাইরি জামাল উদ্দিন। উমনু সভাপতি দাতুক সেরি আহমেদ জাহিদ হামিদির জন্য নেতৃত্ব নির্বাচন একটি বড় পরীক্ষা, যাকে পাকাতান হারাপানের সাথে উমনু জোটের স্থপতি বলা হয়। গত সাধারণ নির্বাচনে বারিসান ন্যাশনালের পরাজয়ের পর তিনি দলের সভাপতি হিসাবে এমনকি দলের সদস্যদেরও সমালোচিত হন। কিন্তু সেটিকে অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত উমনুকে ঐক্য সরকারের অংশ বানাতে তিনি সক্ষম হন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct