আপনজন ডেস্ক: বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করল এপিসিআর। এদিন কলকাতার কুমেদান বাগান লেনে আব্দুল ফাত্তাহ অডিটোরিয়ামে মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস এর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য আহ্বায়ক মো. আবদুস সামাদ, উপদেষ্টা কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম ও ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমের ইনচার্জ সৈয়দ ইমতিয়াজ আলি। উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে তাঁরা বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই সংকটজনক। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কোনও নাগরিকের মানবাধিকার সুরক্ষিত নয়। আইন, প্রশাসন, সরকার সবকিছু থাকা সত্ত্বেও অশুভ শক্তি সমানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আইনকে তারা বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবাধে মানুষের সব ধরনের অধিকার লঙ্ঘন করছে, কেড়ে নিচ্ছে। আজকের দিনে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত গ্যারান্টি দিতে পারছে না কেউ। এমতাবস্থায় এপিসিআর স্লোগান তুলেছে “আমাদের সংবিধান, আমাদের অধিকার। এসো আমরা এক হই, রুখি যত অবিচার”। তাঁরা আরও বলেন, সবথেকে বেশি লঙ্ঘিত হচ্ছে নারীজাতির সম্মান, ইজ্জত, মর্যাদা ও অধিকার। এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে, সে প্রশ্ন তোলেন এপিসিআর নেতৃত্ব। মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১০ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ এক সপ্তাহব্যাপী রাজ্যজুড়ে প্রচার অভিযান হাতে নিয়েছে বলেও জানান তাঁরা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানবধিকার লংঘনের ঘটনা দেশবাসীকে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে। সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের উপর আঘাত হানার প্রয়াস কোনো কোনো মহল থেকে করা হচ্ছে। অসহিষ্ণুতার উদ্বেগজনক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের উপর আঘাত হানার সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রচেষ্টা নাগরিক সমাজ ও বিদ্বজ্জনদের উৎকণ্ঠিত করে তুলেছে। মানুষের উপর আক্রমণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ধর্মাচরণের স্বাধীনতা, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, পেশা গ্রহণ ও নিজ নিজ সংস্কৃতির লালন পালনের অধিকার সংবিধান দিয়েছে। তাতে ভারতের বহুত্ববাদী চিন্তাকে পরিপুষ্ট করেছে। সম্প্রতি দাদরির ঘটনা, গোবিন্দ পানসারে, কালবুর্গি ও দাভোলকার ও গৌরী লঙ্কেশ হত্যা সংবিধান প্রদত্ত অধিকারকে ইচ্ছাকৃতভাবে পদদলিত করার যে প্রয়াস চালানো হয়েছে তা নিন্দনীয়। এ.পি.সি.আর এই ধরণের অপকর্মের তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানাই। ভারতের সংবিধানের মৌল কাঠামোকে পরিবর্তন করার যে কোনো অপচেষ্টাকে এ.পি.সি.আর জনমত গঠন করে রোখার চেষ্টা চালাবে। সকল প্রকার সন্ত্রাসবাদের এ.পি.সি.আর বিরোধী। গোষ্ঠী ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ উভয়ই নিন্দনীয়। সন্ত্রাসবাদের নামে নির্দোষ সংখ্যালঘু ও দলিত যুবকদের ধরা হচ্ছে। কোথাও রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে ধরপাকড় করা হচ্ছে। স্রেফ সন্দেহের বশে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারকে বিধস্ত করা হচ্ছে। তাদের মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। আইএসের নামে মুসলিম সমাজকে বদনাম করা তাদের হয়রানি কারার যে মিডিয়ায় প্রচার চালানো হচ্ছে সে বিষয়ে মিডিয়াকে দায়িতত্বশীল ভূমিকা পালনের আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। যে সমস্ত কালা কানুন মোকা, ইউএপিএ, আফস্পা জারি আছে সেগুলিকে তুলে দিয়ে প্রচলিত কানুনকে ব্যবহার করার এ.পি.সি.আর দাবি জানায়। দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর যে কোন ধরনের আঘাতের বিরোধী এপিসিআর। গো-রক্ষকদের সংখ্যালঘুদেও প্রতি আক্রমণ, সংস্কৃতিক কর্ম ও সাংবাদিকদেরও প্রতি হুমকি ও হত্যা গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করার নামান্তর। ফ্যাসিবাদী শক্তি হুমকি ভারতীয় সমাজ জীবনে এক মারাত্মক বিভাজন নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। মানবতা এতে বিপর্যস্ত হচ্ছে। গণতন্ত্রকে মজবুত করতে হলে মানবতার ওপর যে কোন ধরনের হামলাকে রুখতে হবে। এপিসিআর দাবি করছে- গণতন্ত্রকে রক্ষা সর্বাবস্থায় করতে হবে। মানবতার সব মানুষের মর্যাদাকে সম্মানের চোখে দেখে থাকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct