মোল্লা মুয়াজ ইসলাম, বর্ধমান, আপনজন: বর্ধমান শহরের পুরাতন চকের “পীর বাহারাম” কবরস্থানের পিছনে, শাহ চেতন রোডের উপর এবং শাহচেতন পাড়ায় অবস্থিত শাহচেতন মসজিদ। এই শাহ চেতন মহল্লায় একটি বিদ্যালয়ও আছে যার নাম “শাহ চেতন প্রাইমারি বিদ্যালয়”। এই “পীর শাহ চেতনের” নাম অনুসারে পাড়ার নাম “শাহচেতন পাড়া “রাস্তার নাম” শাহ চেতন রোড “স্কুলের নাম” শাহ চেতন প্রাইমারি বিদ্যালয়”। কে ছিলেন এই শাহচেতন? পিছিয়ে যেতে হবে ৯৭০ হিজরী অর্থাৎ ১৫৬২- ৬৩ খ্রিস্টাব্দে। শাহ ওয়ার্দদি বায়াত অর্থাৎ পীর- দরবেশ- হাজী বাহারাম সাক্কা পারস্য প্রদেশের গভর্নরের বা নাজিমের দায়িত্ব ছেড়ে হজে যান। হজ থেকে ফিরে ভারতের দিল্লিতে বন্ধু “সম্রাট হুমায়ুনের “কাছে এলেন কিন্তূ ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে “সম্রাট হুমায়ুন” মৃত্যুবরণ করেন। “সম্রাট আকবর” পূর্বের সমস্ত ঘটনা জানতেন তাই তিনি সম্মান জানিয়ে রাজ দরবারে সম্মানিত করেন। জলদান কারী হিসাবে তখন তিনি সম্মানিত” সাক্কা বাবা “হয়ে ওঠেন। মন চাইল না রাজ দরবারে অতিথি আপ্যায়নে। বেরিয়ে পড়েন সিংহলের পথে। এসে হাজির হলেন সুবে বাংলার শরিফাবাদের, পুরাতন চকের “যোগী জয়পাল” এর আশ্রমে। প্রথমে সংঘাত পরে বন্ধুত্ব, এবং “যোগী জয়পাল “ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন,” দীন মোহাম্মদ” নাম ধারণ করেন। এবং ইসলাম ধর্মের প্রচারে মনোনিবস করেন । ইতিমধ্যে ৯৫০ হিজরী অর্থাৎ ১৫৬২ -৬৩ খ্রিস্টাব্দে “পীর বাহারাম “মৃত্যুবরণ করেন এবং ১৫৬৩-৬৪ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর “পীর বাহারামের” সমাধি নির্মাণ করে দেন, এবং ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দে পুরাতন চক, ফকির পুর, মির্জাপুর ,ও রায়ান, গ্রাম গুলি, পীরের সেবায় দান করেন।
যোগী জয়পাল এর আরো একটি বৌদ্ধ বন্ধু ছিলেন “যোগী চৈতন্য”। এই যোগ গুরুর আশ্রম ছিল বাঁকা নদীর তীরে অর্থাৎ আজ যেটিকে” শাহ চেতন “বলা হয়। “ যোগী জয়পাল “অর্থাৎ “দীন মোহাম্মদ” ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হয়ে ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে নিজের বন্ধু “যোগী চৈতন্য” কে ইসলামে আহ্বান করেন, এবং ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। শোনা যায় দীর্ঘ কয়েক মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলে অপরদিকে যোগী জয়পাল মৃত্যুবরণ করেন, তার ও সমাধি পীর বাহারামের প্রাক্তন আশ্রমে শেষ মাথায় আছে। “যোগী চৈতন্য” ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে যান, এবং তিনিও “শাহ” উপাধি ধারণ করেন। এখানে উল্লেখ্য” শাহ” ফার্সি শব্দ যার অর্থ বাদশা। এই “শাহ” শব্দ থেকেই হিন্দু সন্ন্যাসীরাও নিজেদের “মহারাজ” উপাধি ধারণ করেছিলেন বলেই জানা যায়। “ শাহ চৈতন্য” নাম অপভ্রংশ হয়ে “শাহ চেতন “নামের রূপ ধারণ করে। সম্রাট আকবর এই “যোগী চৈতন্য বা শাহ চেতন “এর নামেও বেশ কিছু সম্পত্তি দান করেছিলেন। ওয়াকফ বোর্ডের নথি অনুযায়ী ই সি নাম্বার ১১০৫/১০৯৫/৮৬২ তিনটি ওয়াকাফ্ নামায় প্রচুর সম্পত্তি ছিল যা বর্তমানে, মসজিদ ও শাহ চেতন এর মাজার/কবরস্থান ছাড়া কিছুই নেই। মতোয়ালি মোল্লা লিয়াকত হোসেন (ডালিম) জানালেন সমস্ত সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে, ২০০৫ সালে পুরাতন মসজিদের স্থানেই এই নতুন ত্রিতল মসজিদ নির্মাণ হয়। এর আগে ১৯৬০ সালে মসজিদ ও দরগা সংস্কার হয়েছিল যা ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে ফের মসজিদ নির্মাণকরতে হয়, তিনি জানালেন পেমরা গ্রাম নিবাসী সমাজসেবী ও ব্যবসায়ী শেখ মনির হোসেন একতলা ও দুতলা মসজিদের সমস্ত ইট দান করেছিলেন। এই মসজিদের মিনারটি স্টিলের পশ্চিমবাংলায় কোথাও স্টিলের মিনার নেই, দারুন সুন্দর এই মিনারটি। এটি তৈরি করে দিয়েছেন শেখ সেলিম খান বা সেলিম বেগ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct