মোল্লা মুয়াজ ইসলাম, বর্ধমান, আপনজন: বর্ধমান শহর শুধু নয়, আশেপাশের গ্রাম গুলিতে ও প্রাচীন মসজিদের খোঁজ পাওয়া যায়, যেমন পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না থানার খালিনা গ্রামে এই প্রাচীন অপরূপ সুন্দর মসজিদটি বর্তমান আছে। স্থানীয় মানুষদের কাছে জানা যায় আনুমানিক ২৫০ বছরের পুরনো এই মসজিদ। মসজিদে গেটে যে কালো মার্বেল ফলকটি লাগানো আছে ফারসি ভাষা, বঙ্গানুবাদ করলে দেখা যায়, তোরাব মোহাম্মদের নির্মিত এই মসজিদ। স্থাপিত ১১৯৫ হিজরী অর্থাৎ ২৫৯ বছর পূর্বে।
তোরাব মোহাম্মদ বর্ধমানের পুরাতন চক নামক স্থানে বসবাস করতেন। শোনা যায় তোরাব মোহাম্মদের বংশ ধররা শেরআফগান এর সময়ে পুরাতন চক এ উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি জাতিতে পার্সি মুসলিম ছিলেন। তিন ভাই ,বড় তোরাব মোহাম্মদ, মেজ জান মোহাম্মদ, ছোট গুল মোহাম্মদ। এরা দক্ষিণ দামোদরের বাবরক পুড়ে যে নবাবদের হাতিশালা ছিল, ওখানে উঠে আসেন এবং ভাগ্য অন্বেষণ এ ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। তোরাব মোহাম্মদ এইখানে গ্রামে এসে ব্যবসা করে বিশাল অর্থের মালিক হন, মায়ের নির্দেশএ জনহিত কর কাজ শুরু করেন, শোনা যায় দামোদর নদের পাড় থেকে আরামবাগ পর্যন্ত যত পুকুর ছিল সংস্কার করেছিলেন। এখনো শ্যাম দাস বাটি গ্রামে “তোরাব দীঘি” পুকুরটি বর্তমান আছে। এবং খালনেতে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।তোরাব মোহাম্মদের কোন বংশধর ছিল না, গুল মোহাম্মদের পুত্র সন্তান ছিল না, তবে কন্যা সন্তান ছিলো। জান মোহাম্মদ পরবর্তীকালে বাবরক পূর থেকে খান্নে গ্রামে উপস্থিত হন ,আজও তাদের বংশধররা জীবিত। মসজিদটি প্রাচীন এবং পারস্যের গঠনশৈলীর নিদর্শন বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এটিও এক গম্বুজ , চারমিনার, চুন সুর্কির দেওয়াল, খিলেনের উপর দাঁড়িয়ে আছে গম্বুজটি। অপরূপ সুন্দর মসজিদের গঠন শৈলী। আরো একটি বৈশিষ্ট্য এখানে যে নকশা আছে মসজিদের গায়ে একটির সাথে আরেকটির কোন মিল নেই। অর্থাৎ দেয়ালের গায়ে যত গুলি ফুল কারুকার্য আছে প্রত্যেকটা পৃথক পৃথক এটাই এই মসজিদের বৈশিষ্ট্য। প্রাচীন মসজিদের পুরাতত্ত্ব বিষয়টি না জানা থাকায় মসজিদের একটি অংশ নতুন ভাবে নির্মাণ করেছেন গ্রামবাসী। এই মসজিদ” তোরাব মোহাম্মদ ওয়াকাফ্ স্টেট” নামে ওয়াকফ বোর্ডএ নথিভুক্ত আছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct