নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা, আপনজন: সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে পার্টি অফিস ভাঙার নির্দেশ দিল। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ জারি করেছে। মামলায় অভিযোগ , -' হেরিটেজ ভবনের অব্যবহৃত ঘর ভেঙে তৃণমূলের শিক্ষা বন্ধু সমিতির অফিস হয়েছে'। এই মামলার শুনানি পর্বে এই অভিযোগ জেনে বিস্ময় প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।এদিন কলকাতা হাইকোর্ট ওই পার্টি অফিস ভাঙার সময়ও বেঁধে দেয় কলকাতা পুরসভাকে।মামলাকারীর অভিযোগ ,-' জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির একটি অংশ গ্রেড-১ হেরিটেজ। সেখানকার অব্যবহৃত দুটি ঘর ভাঙা হচ্ছিল। ভেঙে সেই ঘরেই তৈরি হয়েছে তৃণমূলের অফিস। 'এই অভিযোগ নিয়েই জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে।সোমবার এই মামলার শুনানির সময় ঠাকুরবাড়িতে পার্টি অফিস তৈরি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। এদিনের শুনানি পর্বে আদালতের পর্যবেক্ষণ, -' হেরিটেজ ভবনের মধ্যে কিভাবে দলীয় কার্যালয় তৈরি হয়?' এরপর প্রধান বিচারপতি এজলাসে জানান , -' যদি হেরিজেট ভবন নাও হয়, তাও যেখানে সেখানে কি পার্টি অফিস তৈরি করা যায়?'এর আগে কলকাতা হাইকোর্ট হেরিটেজ ভবন ভাঙার ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। এদিন ঠাকুরবাড়িতে তৈরি হওয়া তৃণমূলের শিক্ষা বন্ধু সমিতির অফিস ভেঙে দেওয়া নির্দেশ দেয় আদালত। নির্দেশে বলা হয়েছে, -' আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে কলকাতা পুরসভাকে এই অফিস ভেঙে দুটি ঘরকে পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। প্রথমে হেরিটেজ কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে কোন অংশ হেরিটেজ এবং কোন অংশে পার্টি অফিস তৈরি হয়েছে। তারপরই কলকাতা পুরসভা ওই কার্যালয় ভেঙে দেবে'। আগামী ১৯ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে ।রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে কোনও ধরনের বেআইনি নির্মাণ বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়েছে আদালত । ইতিমধ্যেই সেখানে যে বেআইনি নির্মাণ করা হয়েছে, তা আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই ভেঙে ফেলতে হবে । সরিয়ে দিতে হবে দখলদারদের । সোমবার এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট । আদালতের এই নির্দেশ পালনের জন্য কলকাতা পৌরনিগম , সংশ্লিষ্ট হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটি এবং কলকাতা পুলিশের সাহায্য নিতে বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষককে । আগামী ১৯ ডিসেম্বর ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে। ।অভিযোগ উঠে হেরিটেজ আইনের তোয়াক্কা না করেই সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে । ওই কার্যালয়ের নাম দেওয়া হয়েছে 'শিক্ষাবন্ধু সমিতি'। এরই বিরোধিতায় কলকাতা হাইকোর্টে এই জনস্বার্থ মামলা রুজু । মামলাকারীর আইনজীবীর দাবি, -' যেভাবে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক কার্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে, তা একেবারেই বেআইনি । যাঁরা এই কাজ করেছেন এবং ওই নির্মাণ দখল করে রেখেছেন, তাঁদের আদৌ এসব করার অধিকার নেই'।এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তৃণমূলের তরফের আইনজীবীর কাছে জানতে চায়, -' তাদের কাছে এই সংক্রান্ত কোনও বৈধ নথি রয়েছে কিনা? এর জবাবে তৃণমূলের আইনজীবী জানান, -' আগে ওই ঘরে সিপিএম-এর কার্যলয় ছিল । এখন সেখানেই 'সারা বাংলা শিক্ষাবন্ধু সমিতি'র কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে' । হাইকোর্ট কে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,-' এই নির্মাণ একেবারেই বেআইনি এবং যাঁরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাঁরা সকলেই দখলদার'। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে এই নির্মাণ ভেঙে দিতে চায় এবং দখলদারদের হঠাতে চায় বলে জানায় ।এরপর কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ জারি করে জানায়, -' ভবন নির্মাণ আইন অনুসারে ওই নির্মাণ বেআইনি হলে, তা আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই ভেঙে ফেলতে হবে । হঠিয়ে দিতে হবে দখলদারদেরও । আর এই কাজে প্রশাসনই তাদের সাহায্য করবে । কলকাতা পৌরনিগম, সংশ্লিষ্ট হেরিটেজ সংরক্ষণ কমিটি এবং কলকাতা পুলিশের সাহায্য নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । পাশাপাশি, এই ঘটনার জেরে যদি হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের কোনও ক্ষতি হয়ে থাকে, তাহলে অবিলম্বে তারও সংস্কার করতে হবে' । এদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জোড়াসাঁকোর বাড়ি অর্থাত্ মহর্ষী ভবনে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয় ভাঙার নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও রাজর্ষি ভরদ্বাজ। ওই অংশের নির্মাণ পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হেরিটেজ বিভাগকেও।এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ১৯ ডিসেম্বর।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct