মোল্লা মুয়াজ ইসলাম, বর্ধমান, আপনজন: মধ্যযুগের শরীফাবাদ অর্থাৎ বর্ধমানের এটি একটি অন্যতম প্রাচীন মসজিদ এর নাম "কালে খাঁ মসজিদ"।এই মসজিদটি বাঁকা নদীর দক্ষিণ তীরে "ভাতশালা" নামক স্থানে অবস্থিত । মুঘল যুগে এখানে ধাতু গলাবার জন্য বড় বড় ভাট্টি শালা ছিল তাই এটাকে ভাট্টি শালা বলা হতো । পরবর্তীকালে অপভ্রংশ হয়ে ভাতশালা হয়ে গেছে । এই মসজিদ টি প্রাচীনতম নিদর্শন বহন করে চলেছে। বয়স ৩৩১ বছর। এই মসজিদের দেওয়ালে অর্থাৎ গোল গম্বুজের তলায় আরবি হরফের শিলালিপিতে দেখা যায় যে এটি ১১১৩ হিজরীতে নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটি সম্রাট আওরঙ্গজেবের নামে উৎসর্গ করা আছে। শিলালিপির বঙ্গানুবাদ--" আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় । মসজিদ নির্মাণ ১ হাজার ১১৩ হিজরী। বাদশা রহমান সুভান সুলতান ইবনে সুলতান অর্থাৎ বাদশার পুত্র বাদশা সম্রাট অরঙ্গজেব স্মৃতির উদ্দেশ্যে । ফলকটি আরবি লিপিতে লিখিত কিন্তু বর্ধমানে সমস্ত মসজিদে ফার্সিলিপি লিপিবদ্ধ আছে এটাও আরেকটি বৈশিষ্ট্য। মসজিদটির নামকরণ " কালে খাঁ মসজিদ " কিন্তু বস্তুত এই মসজিদটির নাম" কুলি খাঁ" মসজিদ যা অপভ্রংশ হয়ে "কালে খাঁ" হয়ে গেছে। এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন মুর্শিদাবাদের নবাব সুজাউদ্দিন মোহাম্মাদ খান । মসজিদটি অন্যান্য মসজিদের মতনই গোল গম্বুজ, চারটি মিনার, একটি দরজা, দুটি জানালা । মসজিদটির একটি বারান্দা ও আছে, যার তিনটি পিলার , সবটাই খিলেনের উপরে ও চুন সুরকির । মসজিদের সাথে তৎকালীন যুগের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।একটি বৈশিষ্ট্য এই মসজিদের গম্বুজটি গোলাকার কমলালেবুর মতন বা ছাতার আকৃতি, যা অন্যান্য মুঘল স্থাপত্যের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। মুর্শিদকুলি খাঁ জন্ম ১৬৬৫ মৃত্যু ১৭২৭,-৩০ শে জুন। সমাধি- কাটরা মসজিদ মুর্শিদাবাদ। ১৭০০ সালে মুর্শিদকুলি খাঁ কে বাংলার শাসক নিযুক্ত করেন সম্রাট আওরঙ্গজেব। ১৭১৭ বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা ,রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ তুলে আনেন মুর্শিদ কুলি খাঁ । ১৭২৭ --৩০ শে জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৭২৭ সালে মুর্শিদকুলি খার জামাতা সুজাউদ্দিন মোঃ খান বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব এর আসন গ্রহণ করেন। এবং ১৭৩৯,- ২৬ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন, সমাধি রোশনি বাগ মুর্শিদাবাদ। নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ আজীবন সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে এসেছিলেন। তার জামাতা সুজাউদ্দিন মোঃ খান এই মসজিদটি নির্মাণের সময় সম্রাট আওরঙ্গজেবের নামে উৎসর্গ করেন এবং নাম দেন মুর্শিদকুলি খানের নাম অনুসারে "কুলি খান মসজিদ" যা পরবর্তীকালে অপভ্রংশ হয়ে "কালে খান" হয়ে গেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct