সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: সপ্তাহের শুরুতেই রামধাক্কা খেলেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এমনিতেই বিজেপি কথায় কথায় আদালতে দুড়ায় মামলা ঠোকার জন্য। তার জেরে তৃণমূল তো বটেই অনান্য বিরোধী দলগুলিও কটাক্ষ হেনে বলে, ‘বিজেপি বন্দি এসি রুম আর আদালতে’। কার্যত সেই দাবিকে সত্যি করেই শুভেন্দু অধিকারী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা ঠুকেছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় আদালত ডেকে পাঠিয়েছিল ডিজিকে। সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরের মেনে পালন করেন ডিজি। হাজিরা দেন আদালতে। কিন্তু সেই মামলাই এবার খারিজ করে দিল আদালত। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য মামলাটি খারিজ করে দেন। এর জেরে শুভেন্দু সুপ্রিম কোর্টে যাবেন বলে তাঁর আইনজীবী সূত্রে জানা গিয়েছে। ঠিক কী হয়েছে? বাম জমানার শেষ দিকে জঙ্গলমহলের বুকে লালগড়ে নেতাই গ্রামে নৃশংস গণহত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল বামেরা। তাঁদের পোষা হার্মাদ বাহিনী গুলি করে মেরেছিল ৯জন গ্রামবাসী যাদের মধ্যে মহিলারাও ছিলেন। আরও অনেকেই আহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনার জেরে প্রতিবছর ওই নির্দিষ্ট দিনে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ‘নেতাই দিবস’ পালন করা হয়। শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে বিজেপিও সেই দিনটিতে তাঁদের কর্মসূচি রাখতে শুরু করে দেয়। এই অবস্থায় চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লালগড়ে নেতাই গ্রামে শহিদ-স্মরণে যোগ দেওয়ার ঘোষিত কর্মসূচি ছিল শুভেন্দুর। কিন্তু সেদিন লালগড় যাওয়ার রাস্তাতেই পুলিশ শুভেন্দুর কনভয় আটকে দিয়েছিল। তার জেরেই শুভেন্দু রাজ্য পুলিশের ডিজির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, পূর্বত একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায় ছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি তিনি যাতে রাজ্যের সর্বত্র যেতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশ প্রশাসনকে। এমনকি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতে আশ্বস্ত করেছিলেন, বিরোধী দলনেতা রাজ্যের যে কোনও প্রান্তে যেতে পারেন। পুলিশ তাঁকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেবে। তা সত্ত্বেও তাঁকে নেতাইয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টেই মামলা দায়ের করেন শুভেন্দু।শুভেন্দুর করা মামলার জেরে রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য, ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছিল উচ্চ আদালত। শুভেন্দুর তরফে তাঁর আইনজীবী মামলার শুনানিকালে প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, আদালতের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও তাঁর মক্কেল তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে কেন নেতাইয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হল? পুলিশের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননা হবে না? এর জবাব চেয়ে রাজ্য পুলিশের ওই ৩ আধিকারিককে তলব করে আদালত। তার জেরে ওই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরাও দিয়েছিলেন ডিজি। এ বার সেই মামলাই খারিজ করে দেওয়া হল। তাতেই ধাক্কা খেলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এখন দেখার বিষয় সুপ্রিম কোর্ট এই ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct