মালয়েশিয়ার এবারের নির্বাচন বেশ জটিল এক সমীকরণের দিকে এগোচ্ছে। আগেরবারের নির্বাচনে যেখানে উপদ্বীপ মালয়েশিয়ায় অনেকটাই দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল, সেখানে এবার সর্বত্র ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আর দুই সপ্তাহ পর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে; তার জন্য প্রাক-নির্বাচন মেরুকরণ ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই মেরুকরণের শেষে তিন প্রধান জোট তাদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছে। এরপর নির্বাচন পর্যন্ত কিছু বোঝাপড়ার অবকাশ থাকতে পারে। এ নিয়ে লিখেছেন মাসুম খলিলী। আজ প্রথম কিস্তি।
মালয়েশিয়ার এবারের নির্বাচন বেশ জটিল এক সমীকরণের দিকে এগোচ্ছে। আগেরবারের নির্বাচনে যেখানে উপদ্বীপ মালয়েশিয়ায় অনেকটাই দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল, সেখানে এবার সর্বত্র ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আর দুই সপ্তাহ পর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে; তার জন্য প্রাক-নির্বাচন মেরুকরণ ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই মেরুকরণের শেষে তিন প্রধান জোট তাদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছে। এরপর নির্বাচন পর্যন্ত কিছু বোঝাপড়ার অবকাশ থাকতে পারে, তবে সেটি হবে পর্দার অন্তরালে। আর চূড়ান্ত মেরুকরণ হবে নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর যেখানে মালয়েশিয়ার গভীর ক্ষমতা বলয়ই শুধু নয় সে সাথে দেশ বিদেশে প্রভাশালী কিছু পক্ষের নেপথ্য ভূমিকাও থাকতে পারে।এ সময়ের জনমত জরিপ মালয়েশিয়ায় জনমত জরিপের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান মনে করা হয় মারদেকা ফাউন্ডেশনকে। মারদেকা সংসদ ভেঙে দেয়ার পর ১৯ থেকে ২৮ অক্টোবরের মধ্যে একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। এ ধরনের ব্যাপকভিত্তিক সমীক্ষা এ পর্যন্ত আর কোনো প্রতিষ্ঠান এবারের নির্বাচন নিয়ে করেনি। এ সমীক্ষা অনুসারে ১৫তম সাধারণ নির্বাচনে ভোটারদের পছন্দের দিক থেকে আমনুর নেতৃত্বাধীন বারিসান ন্যাশনালকে (বিএন) তার প্রতিদ্বন্দ্বী পাকাতান হারাপান (পিএইচ) পেছনে ফেলেছে। মারদেকা সেন্টারের পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা পিএইচকে এবং ২৪ শতাংশ বিএনকে পছন্দ করেছেন। তারপরে রয়েছে বারাসাতু ও পাসের সমন্বয়ে গঠিত পেরিকাটান ন্যাশনালের (পিএন) স্থান, যার প্রতি সমর্থন রয়েছে ১৩ শতাংশের। তবে এখানে একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল যারা তাদের পছন্দের কথা জানাননি তাদের সংখ্যা ৩১ শতাংশ। আর ৪ শতাংশ কোনো ধরনের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। চূড়ান্তভাবে এ ৩৫ শতাংশের মতো ভোটার পুরো ভোটকে প্রভাবিত করবেন বলে মনে হয়। এর বাইরে দুই শতাংশ বলেছেন, তারা ডা: মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন গেরাকান তানাহ এয়ার (জিটিএ) বা অন্য কোন দলকে ভোট দেবেন। জাতিগত লাইন জুড়ে ভোট দেয়ার পছন্দ হিসাবে, মালয় ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৩২ শতাংশ বিএনকে পছন্দ করেছেন, তারপরে ২৯ শতাংশ বলেছেন- তাদের কোনো পছন্দ নেই বা তারা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। ২০ শতাংশ মালয় পিএনকে বেছে নিয়েছেন পছন্দের দল হিসেবে, হারাপান মালয়দের মধ্যে ১৩ শতাংশের সমর্থন পেয়েছে। জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৯ শতাংশ অনিশ্চিত মালয় ভোট নির্বাচনে যেকোনো উপায়ে প্রভাবশালী থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চিনা উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ বলেছেন, তারা হারাপানকে পছন্দ করছেন, পাঁচ শতাংশ বিএনকে বেছে নিয়েছেন এবং এক শতাংশ পিএনকে ভোট দেবেন। চিনাদের মধ্যে প্রায় ২৩ শতাংশ বলেছেন, তাদের কোনো পছন্দ নেই বা এখনো পছন্দ ঠিক করেননি। ভারতীয়দের মধ্যে সমীক্ষায় ৫১ শতাংশ হারাপানকে পছন্দ করেছেন, বিএনকে পছন্দ করছেন ৩২ শতাংশ এবং পিএনকে এক শতাংশ ভোট দেবে বলে জানিয়েছেন। আট শতাংশ ভারতীয় বলেছেন, তাদের কোনো পছন্দ নেই বা এখনো কাকে ভোট দেবে ঠিক করেননি। ভোটার উপস্থিতি প্রসঙ্গে জরিপে বলা হয়েছে, ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সিরা নির্বাচনে ভোট দিতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন। পূর্ববর্তী ৩০ জুলাইয়ের সমীক্ষায় ৭৮ শতাংশ এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের সমীক্ষায় ৮২ শতাংশ বয়সি ভোটার বলেছিলেন যে তারা ভোট দিতে আসবেন। সংসদ ভেঙে দেয়ার পরে, সংখ্যাটি কিছুটা কমে ৮০ শতাংশে নেমে আসে। আগের দু’টি জরিপে ৩১ থেকে ৫০ বছর বয়সি ভোটারদের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৭৯ শতাংশ এবং ৭৮ শতাংশ ভোট দেবেন বলে জানিয়েছিলেন; কিন্তু সংসদ ভেঙে দেয়ার পর আগ্রহ কমে ৭৪ শতাংশে নেমে এসেছে। ৩০-এর কম বয়সিদের মধ্যে ভোট দেয়ার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি কমেছে। আগের দুই সমীক্ষায় ৭৬ শতাংশ এবং ৭৪ জন উত্তরদাতা বলেছিলেন, তারা ভোট দেবেন। সর্বশেষ জরিপে সংখ্যাটি ৬৮ শতাংশে নেমে এসেছে। চিনাদের মধ্যে ভোটের প্রবণতা সব বয়সের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং মালয় ও ভারতীয়দের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে (৭৫-৮৬ শতাংশ) ছিল। আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফলের বিষয়ে মন্তব্য করে, মারদেকা সেন্টার বলেছে, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জোটের উপস্থিতি রয়েছে এবার। আর সেই সাথে সম্ভাব্য ভোটের হারের বিষয়ে অনিশ্চয়তার কারণে চূড়ান্ত ফলাফল কী হবে এ মুহূর্তে অনুমান করা কঠিন। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এ মুহূর্তে, বিএন-এর জন্য মালয় ভোটারদের সমর্থন প্রত্যাশিত স্তরের চেয়ে কম হওয়ায় এটা ধারণা করা যায় যে, কোনো জোটই এককভাবে মালয়েশিয়ায় ক্ষমতায় আসতে পারবে না। অন্য এক বা একাধিক দল বা জোটের সাথে সরকার গঠনে কোয়ালিশন করতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct