সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: সাম্প্রতিক কালে বাংলা খবরের শিরোনামে সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। সেই তিনিই আদালতে বসে শোনালেন ভূতের গল্প। গা ছম ছমে সেই গল্প শুনলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবীরা। বিচারপতি এও বলেলেন, এই সব গল্প পুরোপুরি মিথ্যে নয়! আঁতকে উঠছেন? কেমন হবে ভূতেরা যদি বলেন, ‘মহামান্য আদালত আপনি আমাদের মর্যাদা দিয়েছেন’ বা ‘হুজুর আমার কোনও কসুর নেই’…সন্ধ্যা নামলেই হাইকোর্ট হয়ে ওঠে হানা বাড়ি। এই কথা শোনা যায় আনাচে কানাচে কান পাতলেই। আদালত কর্মী থেকে পুলিশ বা আইনজীবী বারবার বলেন, অশরীরীদের কথা। সেই কথাই এজলাসে বসে বললেন ‘কড়া’ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০১৪ সালের টেট মামলার শুনানি ছিল মঙ্গলবার। এদিন তিনি পর্ষদের আইনজীবীদের বলেন, সুপ্রিমকোর্ট ২৬৯ জনকে যে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, সেই সমস্ত মামলা শোনা যেতে পারে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। আর বিচারপতি এই কথা বলা মাত্রই এক আইনজীবী বলেন, সন্ধ্যের পরে মামলা মানেই তো ‘তাঁদের’ আনাগোনা। একথা অনেকের জানা। এরপরেই বিচারপতি শুরু করেন ‘সত্যি ভূতের গল্প’। বললেন, তিনি জানেন আদালতের প্যাঁচানো সিঁড়িতে ভূতেদের আনাগোনার কথা। এই গল্প ‘পুরোপুরি মিথ্যে নয়’। এরপরেই তিনি শুরু করেন সেই গল্প। আর আইনজীবী, আদালত কর্মী থেকে সকলে হয়ে ওঠেন ‘শ্রোতা’।
গা ছমছমে সেই গল্প বলতে গিয়ে বিচারপতি টেনে আনেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় কথা। বলেন, অনেক বছর আগে এই হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে একবার এক পুলিশকর্মী জানিয়েছিলেন ‘ভূতের কথা’। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় না কি ওই পুলিশকর্মীকে কেউ ধাক্কা মারে। তিনি না কি দেখেওছেন ‘তাঁকে’! তাই তো সন্ধ্যে নামলেই আজও বন্ধ করে দেওয়া হয় ১১ নম্বর এজলাস লাগোয়া সেই প্যাঁচানো সিঁড়ি। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর আগে হাইকোর্টে নৈশপ্রহরাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল কলকাতা পুলিশ মহলে। কথিত আছে, রাতে হাইকোর্টে কর্মরত পুলিশকর্মীদের শৌচালয় ব্যবহার করতে যেতে হত ভেতরে। সেই সময় না কি অনেক পুলিশকর্মীরাই এক ‘অন্য ধরনের অনুভূতি’ অনুভব করেন। রাতে হাইকোর্টে ডিউটি করাকে কেন্দ্র করে পুলিশকর্মীদের মধ্যে শুরু হয় অনীহা। গোটা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন তৎকালীন কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (রিজার্ভ ফোর্স)। বর্তমানে পুলিশকর্মীরা রাতে ডিউটি করলে তাঁরা হাইকোর্টের নতুন বিল্ডিংয়ের শৌচালয় ব্যবহার করতে যান। রাতভর আদালতের মূল ফটক বন্ধ থাকে। উল্লেখ্য, সেবার থেকেই এখানে মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশকর্মী। হাইকোর্টের বারান্দা থেকে সিঁড়িতে ‘ভূত’দের কথা বারবার শোনা গিয়েছে। তবে খোদ বিচারপতির মুখে ‘তাঁদের’ কথা! এবার ভূতেরা জাতে উঠলেন। সন্ধ্যে বেলা কোনও দিন তাঁরা বলে উঠতেই পারেন ‘থ্যাঙ্কস মাই লর্ড’। থুড়ি, ভূতের মুখে ‘ভগবান’-এর নাম আসে না। তবে ধন্যবাদ জানাতে বাধা কই?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct