সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: দেশের আইনব্যবস্থার প্রতি আবার ভরসা ফিরছে সাধারণ মানুষের। বিশেষত, গত দু’মাসে। রবিবার পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় আইনবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এমনই মন্ত্যব করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, দেশের আদালত অনেকটা ‘ধর্মীয় স্থান’-এর মতো। মানুষ বিপদে পড়লে বিচারের আশায় কড়া নাড়েন আদালতের দরজায়। সেই ‘ধর্মস্থানের’ প্রতি মানুষের আস্থা এবং সম্মান যেন অটুট থাকে।
রবিবারের এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিত, কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব-সহ অন্য বিচারপতিরা। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের জন্য আজ ঐতিহাসিক দিন। আজ আপনারা আইনজীবী। কাল আপনাদেরই কেউ কেউ বসবেন বিচারপতির আসনে। আইন থাকবে আপনাদের হাতে।’’ তার পর মুখ্যমন্ত্রী মনে করান, মানুষের জন্য আইন, আইনের জন্য মানুষ নয়। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ যখন সমস্যায় পড়েন আইনের দরবারে ছুটে যান। দেশের বিচারব্যবস্থার ওপর আমাদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা রয়েছে। আদালত হল মন্দির, মসজিদ, গির্জার মতো। তাই আমরা বিশ্বাস রাখি মানুষের ক্ষোভ প্রশমন করে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করবেন।’’সুপ্রিম কোর্টের নতুন প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিতকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘বিচারব্যবস্থা ঠিক কাকে বলে, এই দু’মাসে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে।’’ পর ক্ষণেই মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘আমি বলছি না যে বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা চলে গিয়েছিল মানুষের। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিটাই এমন...। খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি। আইনব্যবস্থার উচিত মানুষের কান্না শোনা এবং বোঝা। কিন্তু আজ মানুষ দরজা বন্ধ করে কাঁদছে! এখন এমনই সব ঘটনা ঘটছে।’’
কিছু দিন আগে অন্য একটি অনুষ্ঠানে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সামনে আদালতের নিরপেক্ষতা সংক্রান্ত মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, ‘‘গণতান্ত্রিক দেশে বিচারব্যবস্থা, আইন- প্রশাসন, গণমাধ্যম হল এক-একটি স্তম্ভ। একটির মান নষ্ট হলে বাকিগুলিরও ক্ষতি হয়।’’ আর রবিবার তিনি দায়ী করলেন এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যমকে। মমতার দাবি, আদালতের বিচারের আগেই ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ করে রায় দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘গণমাধ্যম এখন আইনব্যবস্থার উপর প্রভাব খাটাচ্ছে। যা একেবারেই সমীচীন নয়।’’প্রসঙ্গত, গত দু’মাসে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ এবং রায়ে স্বস্তি পেয়েছে তৃণমূল। ২০২১ সালে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে বিধানসভার ভোটের ফল সংক্রান্ত মামলাটি কলকাতা হাই কোর্ট থেকে সরিয়ে অন্য আদালতে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী নেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। সেই আবেদন খারিজ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। কয়লা পাচার মামলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রক্ষাকবচ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে মানিক ভট্টাচার্যকে অপসারণ সংক্রান্ত কলকাতা হাই কোর্টের একক বেঞ্চের রায়কে খারিজ করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct