সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: বাংলার মানুষদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই যুগান্তকারী প্রকল্প হল ‘স্বাস্থ্যসাথী’ও ‘স্বাস্থ্যইঙ্গিত’। প্রথম প্রকল্পটির হাত ধরে বাংলার মানুষ সরকারি-বেসরকারি হাসাপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা পান সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এবং দ্বিতীয় প্রকল্পটির মাধ্যমে বাংলার মানুষ পান নিখরচায় নামী চিকিৎসকদের কাছ থেকে টেলিমেডিসিন পরিষেবা। ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রায় ৩ কোটি পরিবার যেমন স্বাস্থ্যসাথীর পরিষেবার আওতায় চলে এসেছেন তেমনি প্রায় ১ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্যইঙ্গিত প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। এবার এই দুই প্রকল্পের ক্ষেত্রেই বড়সড় পদক্ষেপ নিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন সরকার। প্রথমত স্বাস্থ্যইঙ্গিত প্রকল্পের আওতায় এবার জুড়ে যাচ্ছে গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি অর্থাৎ পেটের নানাবিধ রোগের চিকিৎসা এবং দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের জন্য বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতাল্গুলির জমে থাকে ১৪০০ কোটি টাকা মিটিয়ে দেওয়া হল স্বাস্থ্য দফতরের তরফে। যার অর্থ আগামী দিনে এই দুই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলার আরও বেশি সংখ্যক মানুষ উপকৃত হতে চলেছেন। মাত্র ১০ মাস আগে বাংলার বুকে চালু হয়েছে ‘স্বাস্থ্যইঙ্গিত’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের অধীনে বাংলার মানুষ বিনামূল্যে সরকারি হাসপাতাল থেকেই টেলিমেডিসিনের সুযোগ পান। এখনও পর্যন্ত রাজ্যের গ্রামীণ ও শহরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে এই পরিষেবা চালু করা হয়েছে যাতে সেখানকার মানুষ তাঁদের বাড়ির কাছে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে বিনামূল্যে টেলিমেডিসিনের পরিষেবা পান রাজ্যের সরকারি মেডিকেল কলেজ ও সরকারি স্বনামধন্য চিকিৎসকদের কাছ থেকে। আর সবটাই বিনামূল্যে। এই পরিষেবায় এতদিন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ছিল না। এবার সেই সুবিধাও জুড়ে গেল এই প্রকল্পের সঙ্গে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের দাবি, জেনারেল মেডিসিন, প্রসূতি রোগবিদ্যা, শিশুরোগ, চর্মরোগ, চক্ষুরোগ, মানসিক রোগ, নাক-কান-গলার চিকিৎসার ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন পরিষেবা আগেই শুরু হয়েছিল। চলতি বছরের মে মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ক্যান্সারের মতো রোগের চিকিৎসা এবং স্নায়ুরোগের চিকিৎসার ব্যবস্থাও স্বাস্থ্যভবন করে দিয়েছে। তাতে মানুষ যেমন উপকৃত হয়েছেন, তেমনই বেড়েছে টেলি মেডিসিনের চাহিদা। এবার চালু হচ্ছে পেটের রোগের চিকিৎসা। বাংলার কোটি কোটি মানুষ পেটের নানা সমস্যায় ভোগেন। এবার তাঁরা এই সমস্যার হাত থেকেও মুক্তি পাবেন। রাজ্যের অন্যতম বিশিষ্ট চিকিৎসা কেন্দ্র এসএসকেএম হাসপাতালের মাধ্যমে বাংলার মানুষকে ওই পরিষেবা দেওয়া হবে।
অন্যদিকে রাজ্যের বুকে বার বার অভিযোগ উঠছিল নানা বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্যস্বাথী প্রকল্পে রোগী ভর্তি করতে বা চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করতে চাইছে না। কেননা তাঁদের অভিযোগ, আগে তাঁরা এই প্রকল্পের অধীনে পরিষেবা প্রদান করলেও তার বিল বকেয়া রয়েছে। এর জন্য বার বার স্বাস্থ্য দফতরে কোটেশন পাঠানো হয়েছে বকেয়া বিল মেটানোর জন্য। কিন্তু বিল না মেটানোয় তাঁরা টাকা পাননি। সেই কারণে তাঁরা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে রোগী ভর্তি করতে পারছেন না। এই সমস্যায় সব থেকে বেশি অসুবিধার মুখে পড়ছিলেন বাংলার মানুষ। এবার স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়েছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে যত বিল বকেয়া ছিল তাঁর ৯৫ শতাংশ টাকা চলতি মাসেই মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। মোট ১৪০০কোটি টাকার বকেয়া বিল মেটানো হয়েছে। এর মধ্যে ১১৫০ কোটি টাকা বেসরকারি হাসপাতগুলির বকেয়া বিল বাকি ২৫০ কোটি সরকারি হাসপাতালের বকেয়া বিল। অর্থাৎ বেসরকারি হাসপাতলগুলি এবার থেকে আর বিল বকেয়ার অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অধীনে রোগী ভর্তি না করে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। তাঁদের এই প্রকল্পের মাধ্যমে রোগী ভর্তিও করতে হবে, চিকিৎসা প্রদানও করতে পারবে। এর অনথ্যা হলেই সেই বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে রাজ্য সরকার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct