সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: শিলিগুড়িতে সরকারী বিজয়া সম্মীলনীর মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন,‘অনেকে অনেক মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছেন। সিঙ্গুর থেকে টাটাকে তৃণমূল কংগ্রেস তাড়ায়নি, তাড়িয়েছে সিপিআইএম। ওরা জোর করে কৃষকদের জমি নিয়েছিল। আমরা সেই জমি ফিরিয়ে দিয়েছি।’ মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবিকে ঘিরে সরব হয়েছে বিরোধিরা। তাঁদের দাবি মুখ্যমন্ত্রী নিজে মিথ্যা বলছেন। সেই দাবির বিরুদ্ধেই এবার পাল্টা সরব হলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরনিগমের মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ এদিন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রাযয়ের জন্মদিন। সেই উপলক্ষ্যেই দক্ষিণ কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে সিদ্ধার্থবাবুর মূর্তিতে মাল্যদান করতে এসে সিঙ্গুর প্রসঙ্গে বিরোধীদের বিঁধলেন ফিরহাদ। সিঙ্গুর কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোন ভুল কথা বলেননি। তার কারণ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন টাটার বিরুদ্ধে ছিল না। তৎকালীন সিপিআইএম তথা বামফ্রন্ট সরকারের জমি অধিগ্রহ নীতির বিরুদ্ধে এই লড়াই সংগ্রাম ছিল। ভারতবর্ষের মতো একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জোর করে পুলিশ দিয়ে সাধারণ মানুষের জমি সম্পত্তি ও জমির অধিকার কখনও কেড়ে নেওয়া যায় না। সেটাই করতে চেয়েছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। জোর করে জমির অধিকার হরণের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনে নেমেছিলেন। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। টাটাকে যদি কারখানার জন্য জমি দিতেই হত- তাহলে কেন সে সময় বামফ্রন্ট নেতৃত্বাধীন সরকার ল্যান্ডব্যাঙ্ক তৈরি করে টাটাকে তা থেকে জমি দিল না। কেন জোর জবরদস্তি করে এক ফসলি দু ফসলী তিন ফসলি জমি মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে টাটার হাতে তুলে দেওয়া হল?
ঘটনাচক্রে এদিন সিঙ্গুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, ‘মমতার ধরনার জন্যই টাটারা সিঙুর ছেড়ে চলে গিয়েছে। শুধুমাত্র সিপিএমের জন্য টাটা চলে গেছে এটা আমি বিশ্বাস করি না। সিঙুর আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ আমাদের সবার ধরনার জেরেই টাটারা সিঙুর ছেড়ে চলে যায়। তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর সামনে শাসক ও আন্দোলনকারীদের যে চুক্তি হয়েছিল, সেই চুক্তি বাতিল করে দিয়েছিল সিপিএমের পলিটব্যুরো। সম্ভবত সেজন্য মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সিপিএম টাটাদের তাড়িয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ঠিক বলছেন না। কারণ, সেই চুক্তির কপি কখনও টাটাদের কাছে পৌঁছয়নি। কারখানার গেটের সামনে ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনার জেরেই টাটারা সিঙুর ছেড়ে চলে যান।’ রবিবাবুর এই বক্তব্যের বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছেন ফিরহাদ। তিনি জানিয়েছেন, ‘ওনার বয়স হয়েছে। অনেক কিছুই ভুলে গিয়েছেন। উনি জানেন না উনি কী বলছেন।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct