বিসর্জনের রাতে মালবাজারে হড়পা বানের জেরে আকস্মিক ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে রাজ্যের তরফ থেকে মাল বাজার দুর্ঘটনায় উদ্ধারকারীদের নায়ক মুহাম্মাদ মানিক সহ আরো ছয়জনকে সাহসিকতার শংসাপত্র এবং এক লক্ষ টাকার চেক প্রদান করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদেরকে চাকরির প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাদের দাবি— সিভিক নয়, স্থায়ী কোন চাকরি দেওয়া হোক! এ নিয়ে লিখেছেন মোসাররাফ হোসেন। আজ প্রথম কিস্তি।
বিসর্জনের রাতে মালবাজারে হড়পা বানের জেরে আকস্মিক ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে রাজ্যের তরফ থেকে মাল বাজার দুর্ঘটনায় উদ্ধারকারীদের নায়ক মুহাম্মাদ মানিক সহ আরো ছয়জনকে সাহসিকতার শংসাপত্র এবং এক লক্ষ টাকার চেক প্রদান করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদেরকে চাকরির প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। এদের মধ্যে অনেকেই সিভিক ভলেন্টিয়ারের চাকরি গ্রহণ করেছে আবার অনেকেই সিভিক ভলেন্টিয়ারের চাকরি নিতে নারাজ। মুহাম্মাদ মানিকের দাবি— সিভিক নয়, তাকে স্থায়ী কনস্টেবল বা অন্য কোন চাকরি দেওয়া হোক!তবে মানিকের দাবি কতটুকু পূরণ হবে,তা সময় বলবে। বিবেচনাধীন হলেও মানিকের দাবির যৌক্তিকতা আছে বলেই ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা! মানবিকতার মূর্ত প্রতীক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী মুহাম্মাদ মানিক এখন অনেকেরই অনুপ্রেরণা। মানিকদের সাথে মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ,শুভেচ্ছা বিনিময়,শংসাপত্র প্রদান ও সাময়িক অর্থ সাহায্য অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে , তবে মুহাম্মাদ মানিক সহ অন্যান্যদের চাকরির দাবিটাও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত।মানিক কেন আলোচনার বিষয়বস্তু , তা একটু পর্যালোচনা করা দরকার বইকি ! “যদি কেউ একটি প্রাণ রক্ষা করে সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো।”(আল কোরআন, সুরা মায়িদাহ্ ৩২ নং আয়াত)।
সম্প্রতি বিজয়া দশমীর সন্ধ্যাবেলায় মালবাজারের মালনদীতে দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় এক ভীষণ মর্মান্তিক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে।প্রতিমা বিসর্জনের সময় হঠাৎই হড়পা বানে ভেসে যায় বহু মানুষের প্রাণ ; এ এক অপূরনীয় ক্ষতি।এই বীভৎস দুর্ঘটনায় বাকরুদ্ধ-ভাষাহীন হয়ে গেছি। সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই ! সেই অসহায় পরিবার গুলির বেদনার কথা ভেবে এখনও হাড় হিম হয়ে যাচ্ছে।বড় অবাক লাগে যখন এই বিপর্যয়ের বীভৎসতাকে উপেক্ষা করেও অনেকেই হীন রাজনীতিতে মত্ত। এমতাবস্থায় সুষ্ঠু সমাজ গড়তে অসহায় পরিবার গুলিকে দিশা দেখাতে নাগরিক সমাজকেই মানবিকতার দায়ভার নিতে হয়।বর্ষার শেষের দিকে পাহাড়ী নদীতে হঠাৎ জলোস্ফীতি হওয়াটাই স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য; যা মুহূর্তে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।পাহাড়ি অঞ্চলে জলধারার আকস্মিক প্লাবন হওয়ায় স্বাভাবিক রীতি , যার ফলে যে কোনও বিপদ মুহূর্তে ঘটতে পারে।তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম সতর্কতা থাকতে বলা হয়েছিল কিন্তু কে শোনে কার কথা ! জনতা প্রশাসনের সতর্ক বাণীতে কান দিলে হয়তো আরো কিছু মানুষের প্রাণ বেঁচে যেত। অন্যান্য বছরের মত এ বছরেও ডুয়ার্সের মালবাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা প্রতিমা বিসর্জন দিতে আসে মালনদীতে।ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ কাতারে কাতারে হাজির হয় প্রতিমা বিসর্জন দেখতে। তাদের সাথে প্রতি বছরই বিসর্জন দেখতে মালনদীতে হাজির হয় মুহাম্মাদ মানিকও। কিন্তু এক লহমায় তীব্র জলস্রোত সব কিছুকে তছনছ করে দিল! ফল স্বরূপ নদীতে তলিয়ে গেল বাচ্চা থেকে বয়স্করা। বিপর্যয়ের বীভৎস রূপ দেখে বসে থাকতে পারে নি জলপাইগুড়ির পশ্চিম তেশিমিলা গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মাদ মানিক। নিমেষে নিজ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে, সাঁতার জানার আত্মবিশ্বাসে ভর করে চোখের সামনে ডুবে যাওয়া মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। প্রাণপণ চেষ্টা করে ১০ জন মানুষের প্রাণ সে বাঁচাতে পেরেছে। মুহাম্মাদ মানিক এখন প্রকৃত অর্থেই মানিক, সকলের নয়নের মণি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct