সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: হাওড়া শহরের শিবপুরএলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী শৈলেশ পাণ্ডের ৩টি বাড়ি থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত মোট ৮ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। এর বাইরে তার ২টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে থাকা ২০ কোটি টাকা ব্লকও করে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছিল এই সব টাকার উৎস কী? শৈলেশ কী বাংলার নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত? নাকি তিনি গরু পাচার ও কয়লা পাচারের অন্যতম মাথা? ওই ৩টি সূত্রেই কী টাকা ঢুকেছে শৈলেশের হাতে? যদিও প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারনা শৈলেশ বিদেশের কালো টাকা এখানে এনে সাদা করতেন। নিয়োগ দুর্নীতি বা গরু পাচার ও কয়লা পাচারের কোনও যোগসূত্র মেলেনি শৈলেশের টাকার সঙ্গে। তবে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মজার কথা শৈলেশের বিষয়টি নিয়ে বামেরা যতটা সরব হয়েছে ঠিক ততটাই মুখে কুলুপ এঁটেছে বিজেপি। এখন দেখার বিষয় শৈলেশের সঙ্গে গেরুয়া যোগ সূত্র উঠে আসে কিনা। তবে এই ঘটনায় পাণ্ডে পরিবারের ৩ ভাই অর্থাৎ শৈলেশ পাণ্ডে, তার ভাই রোহিত পাণ্ডে ও অরবিন্দ পাণ্ডের নামে লুকআউট নোটিস জারি করে দিল কলকাতা পুলিশ।হাওড়ার শিবপুরে ফরশোর রোডের ধারে থাকা একটি বহুতলে শৈলেশের গাড়িতে প্রথমে টাকা ও গয়নার সন্ধান মেলে। কার্যত সেই সময় থেকেই উধাও হয়ে যান শৈলেশ। পরে পুলিশ শিবপুরের কৈপুকুর ও মন্দিরতলা এলাকায় শৈলেশের আরও ২টি ফ্ল্যাটের সন্ধান পায়। এই ৩টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে মোট ৮ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। সব টাকা ৫০০টাকার নোটে।
এই বিপুল টাকা নিয়ে কলকাতা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ছক কষেছিল শোইলেশের ভাই রোহিতের। যদিও পুলিশি তৎপরতায় তা আর হয়ে ওঠেনি। বিদেশ থেকে কালো টাকা এনে এখানে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখাগুলিতে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে তা সাদা করতেন তিনি। বিদেশ থেকে টাকা আসত হাওয়ালার মাধ্যমে। শৈলেশদের ৩টি ফ্ল্যাটই ইতিমধ্যে সিল করে দিয়েছে পুলিশ। যদিও গা ঢাকা দিতে সক্ষম হয়েছে শৈলেশ ও তার দুই ভাই সহ পরিবারের অনান্য সদস্যরা। পুলিশের ধারনা এরা সবাই ইতিমধ্যেই ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন। সেখান থেকেই তারা বিদেশ পালাবার ছক কষছেন। সেই সূত্রেই তাদের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি করা হয়েছে যাতে তারা বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন। শৈলেশের এই ঘটনার সঙ্গে এখনও রাজনীতির কোনও যোগ মেলেনি। তবে এই ঘটনা ঘিরে অদ্ভূত ভাবে মুখে কুলুপ এঁটেছে পদ্মশিবির। বিজেপির কোনও নেতা এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়নি। বরঞ্চ কিছুটা হলেও সরব হয়েছেন বাম নেতারা। রবিবার শিবপুরে শৈলেশদের ২টি ফ্ল্যাটে হানা দেয় পুলিশ। সেখানে তাঁদের তালা ভেঙে ঢুকতে দেয়। তাঁরা দেখেন অদ্ভূত ভাবে দুটি ফ্ল্যাটেই কোলাপসিবল গেটে তালা ঝোলানো থাকলেও মূল দরজা ছিল ভেজানো। কৈপুকুরের ফ্ল্যাটে সুটকেস বোঝাই টাকা পায় পুলিশ। আর মন্দিরতলার ফ্ল্যাটে ৩টি বক্স খাটে মেলে কোটি কোটি টাকা। এই ঘটনা সামনে আসতেই ওই ২টি ফ্ল্যাটের আবাসিকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তাঁদের দাবি, দোষীদের দ্রুত শাস্তি দিতে হবে। ওই দুটি ফ্ল্যাটের আবাসিকেরা জানিয়েছেন, দুটি জায়গাতেই শৈলেশ পাণ্ডের পরিবার থাকত। রোহিত মাঝে মধ্যে আসতেন। ফ্ল্যাট অনেকদিনেরই। প্রায় ৭-৮ বছর। তাঁদের ধারণা ছিল না এমন হতে পারে। দুটি জায়গাতেই অবশ্য শৈলেশরা কারোর সঙ্গে মিশতেন না। ফ্ল্যাট মূলত বন্ধই থাকত। এখন তাঁদের ধারনা, থাকার জন্য নয়, টাকা লুকিয়ে রাখার জন্য ওই দুটি ফ্ল্যাট কিনেছিল শৈলেশের পরিবার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct