যে কোনও একটি সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অনুসারে, তার অনুসারীদের নিজস্ব ধর্ম থাকতে পারে। কিন্তু কোনো একটি সম্প্রদায় বা পন্থার ধর্ম সমগ্র দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। পৃথিবীতে বহুত্ববাদী দেশে একটি সম্প্রদায়ের বিশ্বাসকে দেশের স্বধর্ম বলে মেনে নেওয়ার ভুল করা হয়েছে, সেই দেশ ক্রমাগত দুর্বল হয়েছে এবং শেষে ভেঙে পড়েছে।কিন্তু অন্য এক বিশেষ অর্থে দেশেরও স্বধর্ম থাকতে পারে। দেশ যদি একটি রাজনৈতিক সম্প্রদায় হয়, তার নিজস্ব ধর্ম থাকা অসম্ভব নয়। এ নিয়ে লিখেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ শেষ কিস্তি।
দেশের স্বধর্মের অনুসন্ধান শুরু করতে হবে জনগণের মধ্যে। প্রতিটি দেশের মানসিকতায় কিছু আদর্শের বুনিয়াদ রয়েছে যা তাকে একটি অনন্য চরিত্র দেয়। এটি সাধারণ জনমত নয়, কারণ লোকেরা সাধারণত এই আদর্শ অনুসারে চিন্তা করে না এবং আচরণ করে না। তাই জনমত জরিপ এখানে কাজ করবে না। জনগণের ওপর বহু শতাব্দীর সাংস্কৃতিক ছাপ রয়েছে। কিন্তু তা কোনো প্রাচীন সনাতন ঐতিহ্য বা ধর্মগ্রন্থে সরাসরি পাওয়া যাবে না। একইভাবে আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের নকলনবিশি ভাষায় আমরা ভারতের স্বধর্ম পাব না। ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের স্বধর্ম এদেশের সভ্যতা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধের শিকড়ে রয়েছে। কিন্তু এই প্রাচীন সাংস্কৃতিক আদর্শগুলি এখনকার আধুনিক রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আধুনিক ভারতের জাতি গঠনের প্রক্রিয়ায় এই প্রাচীন আদর্শগুলি নবায়ন ও পরিমার্জিত হয়েছিল। সেই নির্মাণ চলাকালীন এদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে আমাদের মানসিকতার সম্পর্ক এবং ইউরোপের আধুনিক চিন্তাধারার সঙ্গমের মধ্যে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের স্বধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে। ভারতীয় রাজনৈতিক চিন্তাধারায় দেশীয় আধুনিকতার যে ব্যাখ্যা ঘটেছে তা ভারতের স্বধর্মের দিশা দেখাবে।
ঔপনিবেশিক আধুনিকতার হস্তক্ষেপে রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের চরিত্র পরিবর্তিত হয় এবং জাতীয় চেতনার জন্ম হয়। এখানে পুরানো দেশের ধর্ম মৌলিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। সভ্যতার ধর্মকে দেশধর্মের রূপ দেওয়া হয়েছে। আমাদের সংবিধানের প্রকৃত গুরুত্ব হল, এটি কেবল প্রজাতন্ত্রের মৌলিক দলিল নয়, বরং আধুনিক প্রেক্ষাপটে আমাদের সভ্যতায় বেড়ে ওঠা মূল্যবোধের পুনঃসংজ্ঞায়নের বুনন। সংবিধান আমাদের আমাদের দেশীয় আধুনিকতাকে এক সূত্রে গেঁথেছে।এই স্বধর্ম জড় এবং শাশ্বত নয়। আমাদের স্বধর্ম বহমান। দেশধর্ম কখনই চিরন্তন নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। যুগে যুগে রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশধর্মের সময়কাল সংজ্ঞায়িত করা হয়। ঔপনিবেশিক ভারতের যুগধর্ম আলাদা ছিল, স্বাধীন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের যুগধর্ম আলাদা। বিশ্বশক্তির কালচক্রও একে প্রভাবিত করে। এই নিবন্ধের পরবর্তী পর্বে আমরা আধুনিক ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের স্বধর্মের তিনটি মৌলিক নীতি সম্পর্কে আলোচনা করব। (সমাপ্ত...)
লেখক ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা।
অনুবাদ: সুদীপ্ত রায়
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct