আপনজন ডেস্ক: কর্নাটক হাইকোর্টের হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে মামলার নিষ্পত্তি হল না। বৃহস্পতিবার হিজাব নিষিদ্ধ মামলার রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া তাদের এজলাশে ভিন্ন মত পোষণ করেন। ফলে ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলায় ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি। এই দ্বিধাবিভক্তের মধ্যে বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত যথাযথ নির্দেশনা দিতে পারেন। ফলে, মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের আওতায় চলে যাচ্ছে। তাতে পাঁচজন বা তার বেশি বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ছূড়ান্ত সিদ্ধান নেবে। যদিও সুপ্রিম কোর্টে রায় মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চের অপেক্ষার পর বৃহস্পতিবার কর্নাটকের শিক্ষামন্ত্রী বিসি নাগেশ জানিয়েছেন, রায় দ্বিধাবিভক্ত। তাই রাজ্যের বিদ্যালয়ে হিজাব নিষিদ্ধের নির্দেশ বহাল থাকছে।
উল্লেখ্য, কর্নাটক হাইকোর্ট গত ১৫ মার্চ হিজাব মামলার রায়ে বলেছিল, হিজাব পরা ইসলাম ধর্মে অপরিহার্য নয়। সে জন্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘ইউনিফর্ম’ প্রাধান্য পেয়েছিল। রাজ্য সরকার ইউনিফর্ম মানার নির্দেশ সব ধর্মের পক্ষে বাধ্যতামূলক করার যে দাবি জানিয়েছিল, কর্নাটক হাইকোর্টের রায়ে তা মান্যতা পেয়েছিল। সেই রায়ের বিরুদ্ধে মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ঐকমত্যে না পৌঁছনোয় চূড়ান্ত রায় পেতে বেশি সময় লাগতে পারে। যদিও বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার এজলাসে এ মামলার শুনানি শেষ হয়েছিল গত ২২ সেপ্টেম্বর। সেই থেকে এই রায় সংরক্ষিত রাখা হয়। বৃহস্পতিবার ডিভিশন বেঞ্চে বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত কর্নাটক হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আবেদন খারিজ করে দেন। কিন্তু অপর বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া মুসলিম ছাত্রীদের আবেদনের যৌক্তিকতা মেনে কর্নাটক হাইকোর্টের রায় খারিজ করেন। সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হিজাব পরা না–পরা মুসলিম ছাত্রীদের পছন্দের অধিকার। এর বেশি বা কম কিছুই নয়। আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মেয়েদের শিক্ষার প্রসার।’ বিচারপতি ধুলিয়া আরও বলেন, হিজাব ইসলামের অপরিহার্য অংশ কি না তা বিবেচনা করার দরকার ছিল না। হাইকোর্ট ভুল পন্থা নিয়েছে। সংবিধানের ১৪ এবং ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, গোটা বিষয়টাই ঐচ্ছিক। এর বেশি বা কম কিছু নয়। আমার কাছে সর্বোপরি ছিল মেয়েদের শিক্ষা। উল্লেখ্য, হিজাব বিতর্ক জানুয়ারির শুরুতে কর্নাটকের উদুপির একটি সরকারি কলেজে শুরু হয়েছিল, যেখানে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরা থেকে বিরত করা হয়েছিল। স্কুল ম্যানেজমেন্ট এটাকে ইউনিফর্ম কোডের বিরুদ্ধে বলেছে। তা নিয়ে কর্নাটক হাইকোর্ট হিজাব পরিধানের উপর লাগাম টেনে দেওয়ায় বিতর্ক চরমে ওঠে।
এর বিরুদ্ধে মুসলিম মেয়েরা প্রতিবাদ করছে, যার বিরুদ্ধে হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত যুবকরাও জাফরান শাল পরে পাল্টা প্রতিবাদ শুরু করেছে। বছরের জানুয়ারি মাসে করআনটকের শ্রেণিকক্ষে হিজাব পরিহিত মুসলিম ছাত্রীদের বসতে বাধা দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, ইউনিফর্মের বাইরে কাউকে অন্য কোনো পোশাক পরতে দেওয়া হবে না। সেই সিদ্ধান্ত যে বিতর্কের জন্ম দেয়, অচিরেই তা সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্যের বাইরেও এর প্রভাব পড়ে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের অনুগামীরা গেরুয়া উত্তরীয় ও চাদর পরতে শুরু করেন। হিজাবের পক্ষে–বিপক্ষে শুরু হয় আন্দোলন। কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। বিতর্কের রেশ থাকতে থাকতেই কর্ণাটকের বিজেপি সরকার বিদ্যালয়ে পোশাকসংক্রান্ত নির্দেশ জারি করে জানায়, যেখানে পোশাক বিধি আছে, সেখানে তা মানতে হবে। যেখানে নেই, সেখানে এমন কিছু পরা যাবে না, যাতে শিক্ষালয়ের পরিবেশ, শৃঙ্খলা, ঐক্য ও ভারসাম্য নষ্ট হয়। রাজ্য সরকারের দাবি, ওই নির্দেশ সাম্প্রদায়িক নয়, ধর্ম নিরপেক্ষ। রাজ্য সরকার বিদ্যালয়ে পোশাকবিধির বাইরে হিজাবের মতো গেরুয়া উত্তরীয়ও নিষিদ্ধ করে। ওই সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু মুসলিম ছাত্রী হাইকোর্টে নির্দেশের বিরুদ্ধে মামলা করেন। হাইকোর্ট সেই মামলা খারিজ করে সরকারি নির্দেশ বহাল রাখেন। রায়ে বলা হয়, হিজাব পরা ইসলামে অপরিহার্য নয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন মুসলমান ছাত্রীরা। শুনানির সময় এ কথাও বলা হয়েছিল, এই নিষেধাজ্ঞা মুসলমান নারীদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মুসলমান নারীদের মধ্যে শিক্ষার যে বিকাশ ঘটছে, এই নির্দেশ তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। অনেকেই পড়া শেষ না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাচ্ছেন। কর্ণাটক হাইকোর্টে মুসলমান ছাত্রীরা এই আবেদনও করেছিলেন, যাঁরা হিজাব পরতে আগ্রহী, তাঁদের ইউনিফর্মের সঙ্গে মানানসই হিজাব পরার অনুমতি দেওয়া হোক। রাজ্য সরকার তা মানেনি। হাইকোর্টও সেই বিষয়ে মন্তব্য করেননি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct