নিজস্ব প্রতিনিধি, আপনজন: গরু পাচার মামলায় সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল করলেন অনুব্রত মন্ডল এর একদা দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের আইনজীবী। যারফলে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে একতরফা শুনানি হবেনা।ইডি কোন পিটিশন দাখিল করলে সেখানে সওয়াল-জবাবে সুযোগ পাবেন সায়গল হোসেনের আইনজীবী। গরু পাচার মামলায় সায়গল হোসেনকে দিল্লি নিয়ে যেতে মরিয়া ইডি। গত মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে ইডির আর্জি খারিজ হয়েছে। এবার সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল করলেন সায়গলের আইনজীবী। জানা গেছে, এদিন অর্থাৎ বুধবার সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল করা হয়েছে।ইডি কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যাতে সুপ্রিম কোর্টে গেলেও একতরফা কোনও সুবিধা না পায়, তার জন্যই এই ক্যাভিয়েট দাখিল করা হয়েছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল । বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের প্রাক্তন দেহরক্ষীকে জেরা করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছে ইডি। তাই আগামীতে ইডির সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণেই আগেভাগে এই ক্যাভিয়েট দাখিল করলেন গরু পাচার মামলার অন্যতম অভিযুক্ত সায়গল হোসেন। ইডি সুপ্রিম কোর্টে গেলে, যাতে একতরফা শুনানি না হয়, সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত সায়গলের বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ।অনুব্রত মন্ডলের প্রাক্তন দেহরক্ষীর নামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির সন্ধান মিলেছে । এরপরই সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন সায়গল হোসেন। তাঁকে জেরা করে গরু পাচার সংক্রান্ত অনেক তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলেই সিবিআই সূত্রে প্রকাশ ।
এই মামলায় সিবিআই যে চার্জশিট পেশ করেছে, তাতেও উল্লেখ করা হয়েছে, -'বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রতর হয়ে গরু পাচারের টাকা সরাসরি নিতেন সায়গল'। গত শুক্রবার আসানসোল জেলখানায় জেরা চালিয়ে সায়গলকে গ্রেফতার করেছে ইডি। এরপরই দিল্লি নিয়ে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছিল আসানসোল আদালতে। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে। দুটিতেই ইডির আবেদন কে মান্যতা দেয়নি নিম্ন আদালত ও কলকাতা হাইকোর্ট।গত মঙ্গলবার ইডি-র আর্জি খারিজ হয় কলকাতা হাইকোর্টে। নিম্ন আদালত ইডির আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল আগেই।তবে দিল্লিতে (হাইকোর্ট) সেই বিষয়টি নিয়ে চ্যালেঞ্জ না করে, কেন কলকাতায় আবেদন করা হল? সেই প্রশ্ন তোলে আদালত। সঠিক প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট না থাকলে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সম্মতি থাকবে না বলেই জানিয়েছে আদালত। ইডি যে গরু পাচার মামলার তদন্ত করছে, তা হচ্ছে মূলত দিল্লিতে ইডি-র হেডকোয়ার্টার থেকে। তাই এরপর কী পদক্ষেপ করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত দিল্লি থেকে নেওয়া হবে বলে ইডি সূত্রে প্রকাশ এর পাশাপাশি , এই মামলায় বুধবার ফের তলব করা হয়েছে সায়গল হোসেনের স্ত্রীকে। এর আগেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। মূলত সায়গলের পরিবারের সম্পত্তির উৎস খুঁজতে চাইছে ইডি। কিভাবে একজন কনস্টেবল এত বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেন, সেটাই সবথেকে বড় প্রশ্ন ইডির কাছে।গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত সায়গলকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা করতে চায় ইডি। সে কারণে গত সপ্তাহে আসানসোল জেলে গিয়ে সায়গলকে গ্রেফতার করে তারা। তবে আসানসোল আদালতে প্রথম ধাক্কার মুখে পড়ে ইডি। জেলের মধ্যে জেরা চলাকালীন ইডি যেভাবে সহগলকে গ্রেফতার করেছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন আসানসোল আদালতের বিচারক। আদালতের প্রশ্ন ছিল, -' ইডির কোনও মামলা আসানসোল আদালতে নেই। তা হলে কিসের ভিত্তিতে ইডি সায়গলকে গ্রেফতার করে দিল্লি নিয়ে যেতে চাইছে? ' পাশাপাশি আসানসোল আদালতের তরফে বলা হয়েছিল, -' দিল্লির আদালত থেকে উপযুক্ত নথি এনে ইডিকে তা আদালতে জমা দিতে হবে। আদালত সন্তুষ্ট হলে তবেই সহগলকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার 'ট্রানজিট রিমান্ড' মঞ্জুর করা হবে'।আসানসোল আদালতের পর ইডি কলকাতা হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়। এ বিষয়ে জরুরি শুনানির আবেদন খারিজ করলেও মঙ্গলবার মামলাটি শোনেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। শুনানি পর্বে আরেক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, -' ইডি সায়গলকে হেফাজতে নিতে চাইলে তাদের তরফে কোনও আপত্তি নেই'। এর প্রতুত্তরে সায়গলের আইনজীবী সওয়াল করে বলেন, -' যে মামলার প্রেক্ষিতে তাঁর মক্কেলকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইছে ইডি ,তা এই রাজ্যের। তাহলে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা করার কি দরকার '? দুপক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ ইডির দিল্লি নিয়ে যাওয়ার আবেদন খারিজ করে থাকে। এই নির্দেশ জারির চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়েট দাখিল করলেন সায়গল হোসেনের আইনজীবী। যাতে ইডি সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হলে একতরফা শুনানি না ঘটে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct