মাসুদের সংসার
মোঃ আব্দুর রহমান
মাথার হেলমেটটা খুলে টেবিলের উপর ঠাস করে রাখলো ক্লান্ত মাসুদ। ধপাস করে বসে পড়লো চেয়ারে। ঘামে পুরো জামা-কাপড় বেয়ে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে! এভাবেই প্রবাসে চলছে দুই দশক..। যদিও সে অফিসের একজন সিনিয়ার কর্মচারী। তারপরও দায়িত্বের কথা চিন্তা করেই নিজে কাজ করে। এমনকি ঘাম বিক্রি করে মাসের টাকাটা গোনে,মালিকের তিতে কথা শোনে, কখনও চোখের পানি ফেলে। সেই সত্যিটা অবশ্য কেউ জানেনা। দেখে শুধু দিনের রবি মিয়া আর রাতের চাঁদ মামা।আজতো অসুস্থার জন্য নাস্তাটাও করতে পারেনি বেচারা.....। আবার মাঝে মাঝে টাকা বাচাতেও না খেয়ে থাকে। এমনকি ঠান্ডা-জ্বরে ভুগেও কোনভাবেই কাজে বিরতি নিলোনা!
যাহোক মোবাইল ফোনটা হাতে নিলো। উপরেই তিনটি মানুষের একটি যুগল ছবি।সোনার টুকরো দুই ছেলে। বড় ছেলে রাফিনের বয়স পাঁচ বছর। দুই মাসের ছোট ছেলে রাফানের মুখটা এখনও দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তাইতো মনটা খাঁচার পাখির মতো সারাক্ষন ছটফট করে। শেষমেষ চোখ পড়লো সেই মায়াবিনী মুখটার দিকে। একটা লাল ওড়নায় ঢাকা চুলগুলো। মুখে কোনো মেকাপ নেই, সাজগোজ নেই, তারপরও মনে হয় আলোকিত করে তুলেছে পুরো ছবিটাকে। একদিকে দায়িত্ব আর একদিকে পরিবারের সকলের চাহিদা পূরণ করতে করতে নিজের বিয়ের বেলাটা যখন ডুবতে বসেছিল, শেষমেষ এই দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়েটিকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পায় মাসুদ। যার নাম পারভীন। পারভীন অবশ্য স্বামীর খুব খেয়াল রাখে। স্বামীর বয়স নিয়েও কেউ কোন কিছু বলতে চাইলে বলে দেয়,” আমি অনেক সুখে আছি। তার মতো স্বামী পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।” আর তাতেই মাসুদের মন গর্বে ফুলেফেঁপে ওঠে। যাহোক আর দেরী নয়, আগামীকাল দেশে ফিরছে মাসুদ।পারভীন শুনেই দিয়েদিলো আদেশ,” কোথাও কিছু খাবেনা। একবারে বাড়ীতে এসে তোমার প্রিয় রান্না করা খাবারগুলি দিয়ে একসাথে বসে খাবো...।” কিন্তু রাতের বেলায় হঠাৎ জ্বরটা বেরেগেলো! হাসপাতালে নেওয়া হলো মাসুদকে। ধরা পড়লো করোনা!অবহেলার কারণেই এই দুর্দশা। আর উঠলোনা... মাসুদ। এদিকে স্বামীর প্রিয় খাবারগুলি সাজিয়ে ঠিক বসে রইলো পারভীন। বাবা ডাকার অপেক্ষায় রাফি, আর প্রথমবার কোলে উঠার অপেক্ষায় ছোট্ট রাফান....।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct