আপনজন ডেস্ক: ১ অক্টোবর, বিশ্ব কফি দিবস। দুই দিন আগে দিনটি বিশ্বজুড়ে পালিত হয়েছে। কফির মগে চুমুক না দিলে অনেকেরই দিনটি যেন ভালোই শুরু হয় না। এছাড়াও শত ব্যস্ততার মাঝে মানসিক প্রশান্তি পেতে সবাই কমবেশি কফি পান করেন। আধুনিক ডায়েটের একটি প্রধান অংশ কফি ছাড়া অনেকের যেমন দিন শুরু হয় না, তেমনি অনেকের রাত জাগাও সম্পূর্ণ হয় না। যদিও একসময় আরবের বাইরের লোকজন একে ‘আরবের ওয়াইন’বলতেন। যখন পবিত্র নগরী মক্কায় হজের উদ্দেশ্যে প্রতিবছর লাখো মুসলিমের সমাবেশ হতো, তখন ইথিওপিয়া থেকে বণিকরা কফির বীজ নিয়ে আসত। যা হজে আগত বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা বেশ আগ্রহসহকারে পান করত। কারণ, কফি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের রাত জেগে ইবাদত করার পেছনে দারুণ ভূমিকা রাখত। বর্তমানে কফি পুরো বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। তবে একসময় কফি নিয়ে বিভিন্ন ধর্মের লোকদের সন্দেহের শেষ ছিল না। কফির ইতিহাসের প্রথম দিকে ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা কফির তীব্র বিরোধিতা করে একে বলত ‘ড্রিংক অব দ্য ডেভিল, অর্থাৎ শয়তানের পানীয়। একসময় নারীবাদীরাও কফিকে ‘গন্ধযুক্ত নোংরা কাদাজল’বলে আখ্যা দিয়েছিল। সে যুগে অনেক মুসলিম রাষ্ট্রেও কফিকে খারাপ চোখে দেখত। অনেক দিন পর্যন্ত কফি নিষিদ্ধ ছিল মক্কার মতো জায়গায়। অবশেষে ১৫২৪ সালে ওসমানীয় সুলতান প্রথম সেলিম ফতোয়া জারি করে কফি খাওয়া আবার চালু করেন। ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে খুব দ্রুতই এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে বলকান, ইতালি থেকে শুরু করে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। ১৭২০ সালে লাতিন আমেরিকায় কফির আবাদ শুরু হয়। ইন্দোনেশিয়া ছাড়িয়ে প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও দ্রুতই সবার নজর কাড়ে কফি। যুগের পরিবর্তনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কফি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। জানা যায়, আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ ইথিওপিয়ার কাফা অঞ্চলের খালিদ নামের এক আরব বাসিন্দা ছাগল চরানোর সময় খেয়াল করেন যে জামের মতো এক ধরনের ফল খাওয়ার পর প্রাণীগুলোকে অনেক সতেজ দেখাচ্ছে। খালিদ সেই ফলগুলোকে সিদ্ধ করে সর্বপ্রথম কফি তৈরি করেন। এরপরই পানীয়টি ইথিওপিয়া থেকে ইয়েমেনে রপ্তানি করা হয়। সেখানে সুফি-সাধকরা বিশেষ উপলক্ষে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য এটি পান করেন। অনেকের মতে, খালিদ হঠাৎ দেখেন, তার ছাগলগুলো অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু বেশি দুরন্ত হয়ে উঠেছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি খেয়াল করেন, লাল জামের মতো একটি ফল খাচ্ছে তার ছাগলরা। সেবারে খালিদ সঙ্গে সঙ্গে সেই ফলটি নিয়ে হাজির হন স্থানীয় মসজিদের ইমামের কাছে। কাঁচা খাওয়া অসম্ভব দেখে ইমাম আগুনে ছুড়ে দিলেন ফলগুলোকে। তার কাছে প্রথমে এগুলোকে শয়তানের প্রলোভন বলে মনে হয়েছিল।কিছুক্ষণ পরেই তারা সুঘ্রাণ পেতে থাকেন। ইমামের ছাত্ররা চিন্তা করে দেখলেন, সিদ্ধ করে খেলে কেমন হয়। এরপর তারা রোস্ট করা বীজগুলোকে নিয়ে এক কড়াই গরম জলে সিদ্ধ করা হলো। এভাবেই তৈরি হয় পৃথিবীর প্রথম কফি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct