কেউ কেউ ব্রতপালনের মতো পথ চলে আবার কেউ বা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে, কারও কারও পথচলার মধ্যে থাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে হেঁটে যাওয়া মানুষের সংখ্যা খুব কমই রয়েছে। রাজনৈতিক মিছিলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এতেও কিছু মানুষ পর্যটকের মতো শামিল হন, কেউ বা দর্শনার্থীর মতো, আবার কারও কারো অংশগ্রহণ নেহাতই টিকিটের জন্য। নির্বাচনী প্রচারেরও দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে আমাদের দেশে। সাম্প্রতিক পদযাত্রা নিয়ে লিখেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ শেষ কিস্তি।
পদযাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকেই অনেক উৎসাহী দর্শকও আমাদের চোখে পড়ছে। এই গণমানুষের একটা অংশ সেরকম সাধারণ লোকেরা, যাঁরা কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, সংঘবদ্ধ হননি, এই দীর্ঘতম মিছিলে নিজেরাই এসেছেন। এইসব জনতার চোখে সেই দীপ্তির দেখা মিলেছে, যা অনেক অন্ধকারের মাঝেও একটু আশার আলো জাগায়। এঁদেরকে কংগ্রেসের ভোটার বা সমর্থক মনে করা ঠিক নয়। হতে পারে এমন পদযাত্রায় প্রতি এটা তাঁদের সম্মান প্রদর্শন, যা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। সেসব আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বোঝা যাবে। তবে এই সফর যে ইতিবাচক অবস্থা ইতিমধ্যেই তৈরি করেছে, তা অস্বীকার করা যায় না। এর নির্বাচনী ফলাফল কী হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। গুজরাত ও হিমাচলের নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়বে বলেও মনে হয় না। কিন্তু যে ইতিবাচক আবহ তৈরি হচ্ছে, তার মধ্যে কোথাও রাজনৈতিক নিস্পৃহতার পরিবেশ ভাঙার সম্ভাবনাও রয়েছে। দেশের জনতার মর্জির ওপর এই পদযাত্রা কতটা প্রভাব ফেলবে, সে সম্পর্কে আগাম মন্তব্য করা অপ্রয়োজনীয়। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত। কংগ্রেসের মতো একটি বড় দলের নেওয়া এই উদ্যোগ দেশের নীরবতা এবং একাকীত্বের অনুভূতিকে ভেঙে দিয়েছে। বহু মানুষ যাঁরা কংগ্রেসকে সমর্থন করেন না, প্রকাশ্যে কংগ্রেসের বিরোধিতা করেছেন, তাঁরা এই যাত্রার সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন, দেশের গণ-আন্দোলন সমূহের একটা বড়ো অংশ কন্যাকুমারী থেকেই এই পদযাত্রায় সামিল হয়েছে। এই আন্তরিক ও অপ্রত্যাশিত সমর্থন খোদ কংগ্রেসের পদযাত্রীদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে যাঁরা পদযাত্রায় যোগ দিতে ইচ্ছুক, তাঁদের কাছ থেকে বার্তা আসছে যে অন্তত একটি ছোট পরিসরে হলেও অনুভূতিটা এমন যে আমরা একা নই। দেশ বদলানোর ডাক এখন থেকে বড় বড় কথার মতো শোনাতে পারে। কিন্তু যাঁরা দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে চান, তাঁদের মধ্যে নিজেদের বদলানোর সূচনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এই সূচনাটা খুব সুন্দর। কিন্তু এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।(সমাপ্ত...)
লেখক ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা।
অনুবাদ: অতনু সিংহ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct