কেউ কেউ ব্রতপালনের মতো পথ চলে আবার কেউ বা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে, কারও কারও পথচলার মধ্যে থাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে হেঁটে যাওয়া মানুষের সংখ্যা খুব কমই রয়েছে। রাজনৈতিক মিছিলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এতেও কিছু মানুষ পর্যটকের মতো শামিল হন, কেউ বা দর্শনার্থীর মতো, আবার কারও কারো অংশগ্রহণ নেহাতই টিকিটের জন্য। নির্বাচনী প্রচারেরও দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে আমাদের দেশে। সাম্প্রতিক পদযাত্রা নিয়ে লিখেছেন যোগেন্দ্র যাদব। আজ প্রথম কিস্তি।
পদযাত্রা কেমন চলছে? আপনি কোনো প্রভাব দেখেছেন? নির্বাচনে কোনো সুবিধা হবে কি? এই যাত্রা থেকে আদৌ কিছু অর্জন করা যাবে? যখন কন্যাকুমারী থেকে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ বেরিয়েছে, তারপর আমার ফোন বেজেই চলেছে। খুব চেনা প্রশ্নের ঝড় বয়ে যাচ্ছে চলভাষের ভিতর। টিভিতেও “তু-তু, ম্যায়-ম্যায়” শুনছি যেন। যাত্রা থেকে কী অর্জন করা যাবে তা নির্ভর করছে এর উদ্দেশ্যের ওপর। পদযাত্রা অনেক ধরনের হতে পারে। কারও জন্য এটা নিছক হাঁটা এবং কারও জন্য ব্যায়াম। আবার যাযাবর সমাজের জীবনযাত্রার অঙ্গই এই হেঁটে চলা, পথব্যবসায়ীদের কাছে আবার হাঁটাই হল বাণিজ্য। কেউ কেউ ব্রতপালনের মতো করে পথ চলে আবার কেউ বা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে – কারও কারও পথচলার মধ্যে থাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে হেঁটে যাওয়া মানুষের সংখ্যা খুব কমই রয়েছে।
রাজনৈতিক মিছিলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এতেও কিছু মানুষ পর্যটকের মতো শামিল হন, কেউ বা দর্শনার্থীর মতো, আবার কারও কারো অংশগ্রহণ নেহাতই টিকিটের জন্য। নির্বাচনী প্রচারেরও দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে আমাদের দেশে। আবার ইতিহাসে এমন কিছু পদযাত্রার নজির রয়েছে, যার মাধ্যমে দেশ নিজেকে চিনতে পেরেছে, ফিরে পেয়েছে হারানো আত্মবিশ্বাস। উল্লেখিত সমস্ত কিছুরই নমুনা রয়েছে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’-তে। দেশের একটি বড় দল আয়োজিত এই ধরনের লম্বা এক পদযাত্রায় যদি কিছু সংখ্যক পদযাত্রী থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই সেখানে পর্যটক, পালোয়ান, টিকিট প্রত্যাশী এবং দর্শকরাও থাকবেন। স্পষ্টতই এই যাত্রার সাফল্য-ব্যর্থতা এইসব ছোটখাটো আকাঙ্ক্ষার দাঁড়িপাল্লায় পরিমাপ করা যায় না। রাজনীতির পণ্ডিতরা এটিকে কংগ্রেস পার্টি বা রাহুল গান্ধির লাভ-ক্ষতির প্রেক্ষিতে বিচার করবেন। তবে কোনো একটি দল বা নেতার মুনাফা জাতীয় স্বার্থের মাপকাঠি হতে পারে না।
আজকের প্রেক্ষাপটে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’-র সাফল্যের একটাই মাপকাঠি হতে পারে। আমার মতো মানুষ কিছু প্রত্যাশা নিয়ে এই যাত্রায় যুক্ত হয়েছে। যেমন, দেশের ভবিষ্যতের কালো মেঘ দূর করতে, আমাদের গণতন্ত্র, সংবিধান, স্বাধীনতা ও উত্তরপ্রজন্মকে বাঁচাতে, দেশকে যাঁরা ঐক্যবদ্ধ করেছেন তাঁদের পক্ষে রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্য গড়ার লক্ষ্যে এই পদযাত্রা অবদান রাখতে পারে। দেশের সংকটময় সময়ে এই পদযাত্রাকে অন্য আর কোনোভাবে দেখতে চাইলে, সেটা উদাসীন হয়ে থাকা ছাড়া অন্য কিছু নয়। প্রথম ৫ দিনের ভিত্তিতে দীর্ঘ ৫ মাসব্যাপী পদযাত্রা সম্পর্কে আগাম উপসংহার রচনা হাস্যকর হবে। তবে সূচনার কয়েকদিন অতিক্রান্ত হওয়ার ফলে গোটা যাত্রা সম্পর্কে যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে তা থেকে অনেক কিছুই প্রত্যাশা করা যায়। প্রথম সপ্তাহে, এই যাত্রা তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী এবং কেরালার তিরুবনন্তপুরম জেলাগুলির মধ্যে দিয়ে গেছে। দুটিই কংগ্রেসের অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী এলাকা। তাই এইসব এলাকায় এই পদযাত্রায় যে বিপুল জনসমর্থন মিলিছে, তা বিস্ময়কর নয়। তবে এটাও উল্লেখযোগ্য যে এই এলাকাগুলো দিয়ে পদযাত্রার গোটা সময় এই সফরকে স্বাগত জানাতে রাস্তার দু’পাশে মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন, এমনকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ভিড় জমিয়ে রেখেছিলেন জনতা। এটা হতেই পারে যে, জনতার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ দলীয় কর্মীদের মাধ্যমেই সমবেত হয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটা একটা অর্জন।
লেখক ‘স্বরাজ ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা।
অনুবাদ: অতনু সিংহ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct