মোল্লা মুয়াজ ইসলাম, বর্ধমান, আপনজন: পাঠান মুঘল যুগে বর্ধমানের নাম ছিল শরিফাবাদ । এই শহরকে ঐ সময়ের নবাব বাদশাহরা সুন্দরভাবে সাজিয়ে ছিলেন। বর্ধমান শহরের মধ্যেই আছে খাজা আনোয়ার ও তার ঐতিহাসিক নিদর্শন। আছে প্রাচীন স্মৃতিসৌধ খাজা সৈয়দ আনোয়ার ও ভাই খাজা সৈয়দ আবুল কাশেম দুই বীর যোদ্ধার সমাধি। ১৬৯৭ খ্রিস্টাব্দে পাঠান সর্দার রহিম খান দিল্লির সম্রাটদের দের বশ্যতা অস্বীকার করে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। সম্রাট ফারুক সিয়ার বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে এই দুই বীর সেনাপতিকে বর্ধমানে পাঠালেন। খাজা সৈয়দ আনোয়ার ছিলেন একদিকে জ্ঞানী গুণী আধ্যাত্মিক গুরু এবং অপরদিকে ছিলেন শৃঙ্খলাপরায়ণ বীর যোদ্ধা। তিনি রহিম খানকে আনুগত্য স্বীকার করে মোগল দরবারে যোগদানের জন্য অনুরোধ করেন। ধূর্ত রহিম খান সন্ধির জন্য মূলকাটি নামক গ্রামে তাদের আহবান করেন এবং অতর্কিত ভাবে তাদের দুই ভাইকে হত্যা করেন। দিল্লির দরবারে এই সংবাদ পৌঁছালে সম্রাট ফারুক সিয়ার খুবই দুঃখিত ও ক্ষুব্ধ হন। তিনি বিশাল সেনাবাহিনী পাঠিয়ে বিদ্রোহী রহিম খা কে দমন করেন। দুই বীর সেনানায়কের জন্য কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে বর্তমানে খাজা আনোয়ার বেড় নামক স্থানে পাঁচটি গ্রাম সহ একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন, যা ইন্দো সিরিয়া ও বাংলার আট চালার আকৃতি অপূর্ব ও সুদর্শন দেখতে। সম্রাট ফারুক সিয়ার এর নির্দেশে একটি পুকুর খনন করা হয় ,তার সাথে জল টঙ্গী, বেগমদের ব্যবহার এর জন্য হাওয়া মহল, একটু দূরে নবাবদের ভবন, পশ্চিম দিকে একটি মসজিদ। অপরূপ সুন্দর মসজিদটি এরও তিনটি গম্বুজ , চারটি মিনার আছে, এর কারুকার্য এক কথায় অপূর্ব সুন্দর। ১৮৯৭সালে খাজা আনোয়ারের মেয়ের বংশধররা সামনের গেটটি তৈরি করেন। লর্ড ওয়েলেসলি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সময় পাঁচটি গ্রামকে বর্ধমান মহারাজাকে দান করে জমিদারির মধ্যে ভরে দেন। বর্ধমানের মহারাজা ৩ হাজার ৬৯০ টাকা প্রতি বছর নবাবদের বংশধরদের দেবেন বলে অঙ্গীকার করেন। ১৯৪৮ সালে শেষবারের মতন ভাতা তার বংশধরদের দেয়া হয়। তারপরে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে তার বংশধররা ওই কবরস্থান পুকুর মসজিদ ওয়াকফ বোর্ডের শরণাপন্ন হয়ে ওয়াকফে আওলাদ করে দেন। যা বংশ পরম্পরায় ওদের ব্যক্তিগত ওয়াকফ সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।এই ব্যক্তিগত ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষণবেক্ষণ করার ক্ষমতা ওই পরিবারের নেই খোষে পড়ছে এই ঐতিহাসিক নিদর্শন। এ নিয়ে বর্ধমানের বিশিষ্ট সমাজসেবী মানোয়ার হোসেন বলেন, এটি বর্ধমানের সেরা পর্যটন হতে পারত। সরকার এগিয়ে না এলে এই ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ শেষ হয়ে যাবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct