সুব্রত রায়, আপনজন: উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার অঞ্চলে এক অসহায় বিধবার সম্পত্তি জোর করে দখল করা হচ্ছে বলে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে । একই সঙ্গে উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরা মন্মথ কেবিন বিলুপ্তর পথে ।বিধান সরণিতে যে অংশটি দখল করার চেষ্টা হচ্ছে ,সেটি কলকাতা পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত । ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কলকাতা পৌরসভার বর্তমান ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। তিনি নাকি সবকিছু জেনেও নিরবতা পালন করছেন। যদিও অতীন ঘোষ দাবি করেছেন, তিনি এই ধরনের বেআইনি কাজের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত নয় বা প্রশ্রয় দিচ্ছেন না । গোটা বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তাই প্রশাসন ও আদালত যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে । অভিযোগ, ৯৯ এ বিধান সরণিতে পৃথা নন্দী থাকেন। তার স্বামী অশোক নন্দি গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হয়েছেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে ওই বাড়ির এক তলার একটি দোকান ঘরের ভাড়াটিয়া সুশান্ত সুতার ও পৃথা নন্দীর ননদ অন্নপূর্ণা গোটা বাড়িটি দখল নেওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছেন। পৃথা দেবীর ওই বাড়িতে রেস্তোরাঁ ছিল। যার নাম মন্মথ কেবিন। ওই কেবিনে এক সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে বহু বিখ্যাত মানুষজনের আসা যাওয়া ছিল। এমনকি বিধান চন্দ্র রায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে পরিচিতদের সঙ্গে বসে ওই কেবিনে চা খেয়েছিলেন অনেকবার। ডাক্তার ভুপেন বোস, গগন বোস, মোহনবাগান ক্লাবের বহু খেলোয়াড় এবং রামদাস ভাদুড়ি ও শিবদাস ভাদুড়ির মতো মানুষজন মন্মথ কেবিনে নিয়মিত আড্ডা দিতেন। দু পয়সায় ডবল ডিমের অমলেট ও আট পয়সা দু পিঠে মাখন লাগানো টোস্ট রুটি মন্মথ কেবিনের যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। এমনকি এই কেবিনে বসে স্বাধীনতা সংগ্রামীরাও বহু আলোচনা করতেন। ফলে ব্রিটিশ পুলিশের নজর থাকতো এই রেস্তোরাঁর ওপর। সেই ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁ লুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে ।১৯৪১ সালে মন্মথ নন্দী প্রয়াত হওয়ার পর তার পুত্র আশুতোষ নন্দী এই রেস্তোরা পরিচালনার ভার নেন। অভিযোগ এলাকার কিছু সমাজবিরোধী সেই মন্মথ কেবিনের বর্তমান অংশীদার পৃথা নন্দী কে গত ১৫ই মার্চ মারধর করে। উদ্দেশ্য তাকে ভয় দেখিয়ে ওই বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে গোটা সম্পত্তি দখল নেওয়া। এমনকি তার ব্যাংকের বই ও স্থায়ী আমানতের কাগজপত্র কেড়ে নেয় ।ওই মহিলা গত ২৬ শে ফেব্রুয়ারি স্থানীয় শ্যামপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগ গোটা বাড়িতে দখল করে বেআইনি নির্মাণ কাজ হচ্ছে। পুরসভা কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপরন্তু স্থানীয় পুর পিতা অতীন ঘোষ ঘটনাস্থলে এসে গোটা বিষয়টি দেখে গেলেও তিনি কোন ব্যবস্থা সেভাবে নেননি। যদিও স্থানীয় কাউন্সিলর ও কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ দাবি করেছেন, যেহেতু গোটা বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন তাই এতে পুরসভা হস্তক্ষেপ করতে পারে না। অগত্যা ওই ভুক্তভোগী মহিলা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আদালত বিষয়টি জেনে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয় । তবে নির্মাণ কাজ সাময়িক বন্ধ থাকলেও ফের তা শুরু হয়েছে ।এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁ এবং তার ইতিহাস এই বেআইনি নির্মাণ কাজে হারিয়ে যেতে চলেছে এমনটাই অভিযোগ। ইতিমধ্যে এই গোটা বিষয়টি নিয়ে লিখিতভাবে আক্রান্ত মহিলা পৃথা নন্দী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছেন। অপেক্ষা এখন তাদের হস্তক্ষেপের।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct