আমাদের জীবন পরিচালনার পথে অনেক বস্তুর ওপর নির্ভর করে চলতে হয়, যেগুলোর মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম আধুনিক আবিষ্কার মোবাইল ফোন একটি। সোনালি সকালের অলস ঘুম ভাঙাতে এ্যালার্ম দেয়া থেকে দৈনন্দিন সকল কাজেই প্রায় মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা যায়। এর মাধ্যমে অনলাইন পত্রিকা পড়ে বিশ্বের আপডেট খবর মুহূর্তেই জানা যায়। তবে এ যন্ত্রের যেমন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে অনেক, তেমনি ক্ষতির দিকটিও বেশ মারাত্মক। এর অপব্যবহার নীরবে দিন দিন আমাদের তরুণ্যকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনের অতিপ্রয়োজনীয় এই ডিভাইসের ভালর চেয়ে মন্দের দিক সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জ্ঞান সীমিত। মোবাইল ব্যবহারের সচেতনতা নিয়ে লিখেছেন রানা আহমেদ।
আমাদের জীবন পরিচালনার পথে অনেক বস্তুর ওপর নির্ভর করে চলতে হয়, যেগুলোর মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম আধুনিক আবিষ্কার মোবাইল ফোন একটি। সোনালি সকালের অলস ঘুম ভাঙাতে এ্যালার্ম দেয়া থেকে দৈনন্দিন সকল কাজেই প্রায় মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা যায়। এর মাধ্যমে অনলাইন পত্রিকা পড়ে বিশ্বের আপডেট খবর মুহূর্তেই জানা যায়। তবে এ যন্ত্রের যেমন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে অনেক, তেমনি ক্ষতির দিকটিও বেশ মারাত্মক। এর অপব্যবহার নীরবে দিন দিন আমাদের তরুণ্যকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। দৈনন্দিন জীবনের অতিপ্রয়োজনীয় এই ডিভাইসের ভালর চেয়ে মন্দের দিক সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জ্ঞান সীমিত। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের একটানা দীর্ঘক্ষণ কথা বলা, গেমস খেলা, গান শোনা, সিনেমা দেখা, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। মোবাইলে একটানা বেশ কিছুক্ষণ আলাপ করলে বা কানে হেডফোন নিয়ে জোর ভোলিয়মে দীর্ঘক্ষণ গান শুনলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়। তাছাড়া মোবাইলে দীর্ঘক্ষণ অনুরাগী কথা বললে তা আমাদের হৃৎপিণ্ডে আঘাত আনতে সক্ষম এবং মস্তিষ্কে খারাপ প্রভাব বিস্তার করে। ফলে অনেক শিক্ষার্থীর যেমন মেজাজ খিটখিটে থাকে তেমনি অস্থিরতা বাড়তে থাকে, পড়াশোনায় অমনোযোগিতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। এগুলো মোবাইল ফোনের মানবশরীরে কিছু সরাসরি প্রভাব বিস্তার করা ক্ষতিকর দিক।
মোবাইল ফোনের পরোক্ষ ক্ষতিকর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে- দৃষ্টিশক্তির অক্ষমতা। দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোনের মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে আমাদের দৃষ্টিশক্তির কার্যক্ষমতা কমে আসে। এ জন্য দূরের দৃষ্টি হারাচ্ছে বর্তমান বিশ্বের তরুণ প্রজন্ম। চোখের জ্যোতি কমে যাওয়ার বিষয়টিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘এপিজেনেটিক্স’ সম্পর্কিত বিষয়। ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে একজন সাধারণ স্মার্টফোন দিনে প্রায় ২ হাজার থেকে ৫ হাজারের ওপরে স্ক্রিনে ট্যাপ, ক্লিক ও সোয়াইপ করে। যার ফলে আঙ্গুলের জয়েন্টে ব্যথ্যা হয়, প্রজনন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়। এছাড়াও মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়, চিন্তা কমে যায়। মোবাইল ব্যবহারকারী গ্রাহকদের জন্য সুউচ্চ নেটওয়ার্ক টাওয়ার নেই এমন হয়তো বর্তমান আমাদের দেশে কোন অঞ্চল পাওয়া যাবে না। এই টাওয়ারগুলোর ওপরে নানা ধরনের তরঙ্গ থাকে, যা প্রাণীজগতের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তরঙ্গ সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। যার মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিবার পরিজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারি। এ তরঙ্গ প্রবাহমানকালে বিজ্ঞানের ভাষায় চারপাশে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড উৎপন্ন হয়ে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন সৃষ্টি করে। যা মানবসভ্যতাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে নিয়ে যায় খুবই সহজে। প্রযুক্তির এসব উন্নয়ন আরও উর্ধে নিয়ে যেতে বিভিন্ন দেশ গবেষণা করছে। অন্যদিকে বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রেও গবেষণার বস্তু হয়েছে মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোনের জন্য হার্ট এ্যাটাক, কিডনি রোগ ও ব্রেনে ক্যান্সার হয় বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়। মাদক থেকেও বর্তমানে মোবাইলে ক্ষতিকারক দিকটি অনেক বেশি হচ্ছে। সম্প্রতি গবেষকরা জানেছে কম্পিউটার ও মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে চার ভাগের এক ভাগ শিশু চরম আকারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে। টাওয়ারের রেডিয়েশনের ফলে ধারণা করা হয় সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যা। শুধু মানব জাতিতে না উচ্চ টাওয়ারের রেডিয়েশনের ফলে তার আশপাশে অবস্থিত সকল পাখি, ফসলের জমি ফলন ফলা ও গাছপালা মারা যায়। এসব সমস্যার সমাধান নিয়ে যেন ভাবার কেউ নেই। এভাবে চলতে থাকলে সামনের প্রজন্ম যেমন হবে মেধাশূন্য তেমনই হবে বিকলাঙ্গ। কারণ এ রেডিয়েশন গর্ভবতী মায়ের শরীরে খারাপ প্রভাব বিস্তার করবে। সুস্বাস্থ্য, নয়নজুড়ানো ও শঙ্কামুক্ত আগামী দিন পেতে ও প্রজন্ম রক্ষায় এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct