মানুষের প্রকৃতির মধ্যে এবং মানুষে মানুষে মিথষ্ক্রিয়ার ভিতর দিয়ে সমাজের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার শক্তিতে বলীয়ান উন্নত সমাজগুলো সমাজ বা বাজার ব্যবস্থাকেই প্রকৃতির উপর স্থান দিতে অভ্যস্ত। এ অভ্যাস ও আচরণ থেকে উদ্ধুদ্ধ পরিণতিসমূহ বাজারভিত্তিক, সমাজকেন্দ্রিক আত্মম্ভরিতা সম্পর্কে নতুন উপলব্ধির সঞ্চার করছে। এ উপলব্ধিতে এটাই মূর্ত হয়ে উঠেছে যে, সমাজ আদৌ স্বয়ম্ভর কোনো সত্তা নয়, উপরন্তু এটি প্রকৃতির একটি অংশ বা সম্প্রসারিত রূপমাত্র। অন্য কথায় সমাজ কেবল প্রকৃতির সমাজীকৃত অংশ, সামাজিকভাবে বিকাশশীলতায় মানুষের ভূমিকার প্রাধান্য অনস্বীকার্য। পরিবেশের অবক্ষয় নিয়ে বিশেষ আলোচনা করেছেন আফতাব চৌধুরী। আজ প্রথম কিস্তি।
মানুষের প্রকৃতির মধ্যে এবং মানুষে মানুষে মিথষ্ক্রিয়ার ভিতর দিয়ে সমাজের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার শক্তিতে বলীয়ান উন্নত সমাজগুলো সমাজ বা বাজার ব্যবস্থাকেই প্রকৃতির উপর স্থান দিতে অভ্যস্ত। এ অভ্যাস ও আচরণ থেকে উদ্ধুদ্ধ পরিণতিসমূহ বাজারভিত্তিক, সমাজকেন্দ্রিক আত্মম্ভরিতা সম্পর্কে নতুন উপলব্ধির সঞ্চার করছে। এ উপলব্ধিতে এটাই মূর্ত হয়ে উঠেছে যে, সমাজ আদৌ স্বয়ম্ভর কোনো সত্তা নয়, উপরন্তু এটি প্রকৃতির একটি অংশ বা সম্প্রসারিত রূপমাত্র। অন্য কথায় সমাজ কেবল প্রকৃতির সমাজীকৃত অংশ, সামাজিকভাবে বিকাশশীলতায় মানুষের ভূমিকার প্রাধান্য অনস্বীকার্য। কিন্তু এ ভূমিকার সুবাদে মানুষ তার সংলগ্ন পরিবেশ ব্যবস্থায় যে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, সেজন্য প্রকৃতির সাথে তার সম্পর্কের ধরণটি পুনরীক্ষণ প্রয়োজন।
জীববিজ্ঞানী ও পরিবেশতাত্ত্বিক বটকিনের মতে, বর্তমানে বিশ্ব প্রকৃতির যান্ত্রিক শৃঙ্খলাবাদী ধারণা থেকে ক্রমে সরে গিয়ে ভিন্নতর উপলব্ধি ও ধারণার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। প্রকৃতিকে যেভাবে আমরা বুঝতে যাচ্ছি সেটি হলো এ প্রকৃতি যুগপৎ ঘটমান নানা জিনিস এবং সময় ও স্থানের বহুবিদ মানদণ্ডে নিয়ত পরিবর্তনশীল ব্যবস্থা বিশেষের সমন্বয়ে জটিল ব্যবস্থাদির এক জোড়াতালি। প্রকৃতির অসীম ছন্দের ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী কোনো ভিনদেশি অনুপ্রবেশকারী হওয়ার পরিবর্তে মানুষ প্রাকৃতিক শৃঙ্খলার এক অন্তর্নিহিত উৎপাদন মাত্র। যন্ত্রবৎ পরিচালিত হওয়ার পরিবর্তে জটিলতা, দৈবতা নানা ঘটনার যুগপততা, ইতিহাস এবং পরিবর্তন প্রকৃতির নিজস্ব গুণ। আমরা এটি শিখছি যে পরিবর্তনকে গ্রহণ এবং মন্দ থেকে ভালকে পৃথক করা ব্যতীত আমাদের উপায় নেই। প্রকৃতি নিজেই হবে আবশ্যিকভাবে আমাদের পথ প্রদর্শক। ভূমির উপর আমরা যেসব পরিবর্তন আরোপ করি সেগুলো যদি গুণ এবং গতির দিক থেকে প্রাকৃতিক হয়, তবে এসব পরিবর্তন ক্ষতিকারক নয়। দ্রুত পরিবর্তনসমূহ অথবা জৈব বিবর্তনের ইতিহাসে যেগুলো অভিনব যেমন, পরিবেশের মধ্যে নতুন কেমিক্যালসের প্রবর্তন, যেগুলো সমস্যার উদ্রেক করতে পারে। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, পৃথিবীর তাপবর্ধন আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয় ঘটমান পরিবর্তনের পরিমাণ বা আয়তনের জন্য নয়, বরং অভূতপূর্ব গতিতে পরিবর্তন সংঘটনের জন্য। কতক পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিদ, জীবাশ্ম জীববিজ্ঞানী, আবহাওয়াবিদ এবং অন্যরাও এখন স্বীকার করেন যে, তারা যেসব প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াদি অধ্যয়ন করেন সেগুলো সরল, নিয়মিত বা নিশ্চিত নয়, বরং সেখানে বিশৃঙ্খলা সর্বদাই উপস্থিত। মানুষ তার প্রয়োজনে প্রকৃতির সম্পদকে ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে চায়। এর জন্য যেমন দরকার প্রযুক্তি, যা প্রকৃতি পরিবর্তনে তাকে সহায়তা দেবে এবং সামাজিক সম্পর্ক, যার অস্তিত্ব প্রযুক্তির প্রয়োগে ও উন্নয়নের জন্য কাজ করে। একে আমরা যদি উৎপাদন অস্তিত্ব বলি তাহলে সামাজিক সম্পর্কের বৈধতা পায় যে আইনে, রীতিনীতিতে, সামাজিক অনুশাসনে তাকে আমরা সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব বলতে পারি। উৎপাদন অস্তিত্ব বদলানোর জন্য প্রযুক্তির প্রয়োজন। আমরা যাকে দূষণ বলি, তা প্রযুক্তির উন্নয়নের মাত্রায় নিরিখে নির্ধারিত হবে আবার সমাজিক পরিবেশ বা কাঠামোর প্রেক্ষাপটেই এটা বিচার্য। দূষণ কী? পরিবেশ কী? পরিবেশের দূষণই বা কী? দূষণের কারণগুলো কী? দূষণ বিষয়টি প্রচলিত ধারায় যা বলা হয় তার অতিরিক্ত দ্যোতনা ব্যক্ত করে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct