সম্প্রীতি মোল্লা, কলকাতা , আপনজন: আগামী মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের তরফে অগ্রগতি রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ রয়েছে। এরেই মধ্যেই শুক্রবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি পর্বে মামলাকারীদের পক্ষে অন্যতম আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এই দুর্নীতি সত্য উদঘাটনে রাজ্যের বিরুদ্ধে কৃত্তিম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার অভিযোগ তুললেন। প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় রাজ্য আসল দোষীদের আড়াল করতে চাইছে।এদিন শুনানি চালাকালীন এমনটাই দাবি করলেন মামলাকারীদের অন্যতম আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, -' মহাভারতে ইন্দ্রজিত্ যেমন মেঘের আড়াল থেকে যুদ্ধ করতেন, তেমনই ‘ইন্দ্রজিত্’কে আড়াল করতে অনেক ‘মেঘ’ তৈরি করছে রাজ্য'।ইতিমধ্যেই প্রাথমিকে নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগে ২৬৯ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে ছিল সেই মামলার শুনানি। আগামী মঙ্গলবার তদন্ত কতদূর এগিয়েছে, সেই রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে আদালত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই কে।এই মামলায় ভুল প্রশ্নর নম্বর নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। প্রশ্ন ভুল থাকায় কয়েকজনকে অতিরিক্ত ১ নম্বর দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কেন সবাই এই ১ নম্বর পেলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুক্রবার বোর্ডের তরফের আইনজীবী কিশোর দত্ত দাবি করেন, -''আদালতের নির্দেশেই ওই অতিরিক্ত ১ নম্বর দেওয়া হয়েছিল চাকরি প্রার্থীদের। এই মামলায় কোনও ‘স্ক্যাম’ নেই"। তিনি ব্যাখ্যা করেন, -" অক্সফোর্ডের অভিধানে ‘স্ক্যাম’ কথার অর্থ যাতে অসত্ উদ্দেশ্য থাকে। এ ক্ষেত্রে কোনও অসত্ উদ্দেশ্য নেই"। তবে বোর্ডের দাবি নস্যাত্ করে বিকাশ ভট্টাচার্য দাবি করেন, -" আদালত নির্দেশ দেওয়ার আগেই বাড়ানো হয়েছিল নম্বর।,২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন ভুল থাকার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তার আগেই ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর নম্বর বাড়িয়ে দিয়েছিল বোর্ড"।২০১৬-র প্রাইমারি টেট নিয়ে যে মামলা হয়েছে, তাতে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, - ‘মামলায় রাজ্য যেন ইন্দ্রজিতকে আড়াল করতে চায়। ইন্দ্রজিত্ যেমন মেঘের মধ্যে থেকে যুদ্ধ করতেন, তেমন রাজ্যও আরও মেঘ তৈরি করতে চাইছে। যাতে ইন্দ্রজিত্কে আড়াল করা যায়। দুর্নীতিকে আড়াল করা যায়।’ দ্বিতীয় প্যানেলের প্রকাশের বৈধতা কোথায় সেটাও স্পষ্ট নয় বলে দাবি করেছেন বিকাশবাবু। আগামী মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।পর্ষদ পক্ষের আইনজীবী কিশোর দত্ত ডিভিশন বেঞ্চে ফের একবার এই প্রশ্ন তুললেন।এদিন তিনি জানিয়েছেন, -' প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় ভাগ করা হয়। এক, মেধার ভিত্তিতে, দ্বিতীয়, প্রাক্তন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের পূর্বের নির্দেশে পর্ষদের ভুল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে নম্বর পাওয়া প্রার্থী। এই দুটি বিষয় সামনে রেখেই নিয়োগ করা হয়েছিল। পর্ষদের প্রশ্ন ভুল বিষয়টা সামনে আসা এবং আদালতের নির্দেশের পরই পর্ষদের পক্ষ থেকে নম্বর বাড়ানো হয়'। নিয়োগ আইন মেনেই করা হয়েছে বলে দাবি পর্ষদের। তবে মামলাকারীদের অন্যতম আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এজলাসে জানান , -'দুর্নীতির প্রশ্রয় দিচ্ছে রাজ্য সরকার'।এদিন আদালতে বিচারপতি সুব্রত তালুকদার পর্ষদের আইনজীবীর উদ্দেশ্য প্রশ্ন করেন, -' সমস্যা এক নম্বর দেওয়া নিয়ে। চাকরি প্রার্থীদের দাবি এটা স্বাভাবিক নিয়ম মেনে নিয়োগ নয়, একটা দুর্নীতি। এবিষয়ে পর্ষদের বক্তব্য কী'? প্রতুত্তরে বোর্ডের আইনজীবী জানান, -' প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের যে নিয়ম বা আইন রয়েছে তা মেনেই নিয়োগ করা হয়েছে এবং অবশ্যই স্বচ্ছতা বজায় রেখে। যারা ১ নম্বর বাড়ানো নিয়ে অভিযোগ তুলছেন তা সঠিক নয়'। এর পরিপ্রেক্ষিতেই অভিযোগকারী প্রার্থীদের পক্ষের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য ডিভিশন বেঞ্চে এদিন জানান, -' এই মামলায় মেঘের আড়াল থেকে দুর্নীতির প্রশ্রয় দিচ্ছে রাজ্য সরকার! সিবিআই রিপোর্ট বলেছে, বেশ কিছু পরীক্ষার্থী সাদা খাতা জমা দিয়েছেন। তারাও চাকরি পেয়েছেন। বোর্ড সিঙ্গল বেঞ্চের কাছে জানিয়েছিল, তারা বিক্ষোভকারীদের চাকরি দিয়েছিল। আবার কখনো বলছে ভুল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে প্রার্থীদের চাকরি দিয়েছে। কখনো আবার বলা হচ্ছে মেধা প্রার্থীদের। পর্ষদের দেওয়া তথ্যের সমস্যা রয়েছে, দ্বিতীয় প্যানেলের নিয়োগটাই সম্পূর্ণ বেআইনি। প্যানেলের বৈধতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ২৬৭ জনের মধ্যে চারজন মামলা করেছিল তাই চাকরি দিয়েছে। বাকিদের বোর্ড চাকরি দিল কী করে? উঠছে প্রশ্ন'। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি তালুকদার বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এর কাছে জানতে চান -' তিনি কী চাইছেন?' উত্তরে বিকাশবাবু জানান, -' স্বচ্ছতা থাকলে পর্ষদ ওয়েমার সিট দিক। স্বচ্ছ ওয়েমার সিট দিয়ে নিয়োগ নিয়ম মেনে করা হোক। দুর্নীতি সামনে আসুক। দোষীরা শান্তি পাক'। তিনি এটাই চাইছেন। আগামী মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। ওইদিনই সিবিআইয়ের অগ্রগতি রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ রয়েছে ডিভিশন বেঞ্চের তরফে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct