সম্প্রীতি মোল্লা , কলকাতা, আপনজন: বুধবার ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় আবেদনকারী আবু তাহেরের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দিলো কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি এদিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের তলব প্রক্রিয়া নিয়ে কড়া সমালোচনা করে আদালত। সাক্ষী হিসাবে ডাকা কিংবা অভিযুক্ত কে তলব করার আইনী বিষয়গুলি ভালোভাবে জানবার পরামর্শ দেওয়া হয় এদিন। ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতা আবু তাহেরকে আগাম জামিন দিল না কলকাতা হাইকোর্ট । সেইসাথে এই তদন্ত নিয়ে সিবিআইকেও আদালতের তীব্র ভর্ত্সনার মুখে পড়তে হল এদিন।বুধবার সিবিআইয়ের উদ্দেশে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক বলেন,- 'আপনারা এই ভাবে মানুষকে হয়রানি করেন! ৪১-এ ধারায় নোটিস দিয়ে না ডেকে ১৬০ ধারা দিয়ে তলব করছেন? এদিকে আপনারা আদালতের কাছে চাইছেন আবেদনকারী আবু তাহেরকে হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করতে। কিন্তু তাঁকে সাক্ষী নোটিস দিয়ে তলব করছেন। আইনের বিষয়টি দেখুন।'ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় সিবিআই তদন্তের নামে হেনস্থা করছে বলে অতি সম্প্রতি পশ্চিম বর্ধমান থেকে অভিযোগ করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখ সুফিয়ান ছিলেন গত বিধানসভার নির্বাচনে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট। তিনি অবশ্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। তবে এদিন সিবিআই'কে কার্যত 'ধমক' দেয় আদালত। প্রশ্ন করা হয় কী ভাবে ৪১ এ নোটিশ দিয়ে না ডেকে ১৬০ নোটিশ দিয়ে তলব করা হয়েছিল আবু তাহেরকে? সিবিআই আদালতের কাছে চাইছে আবু তাহেরকে হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করতে। কিন্তু তাকে সাক্ষী নোটিশ দিয়ে তলব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইনের বিষয়টি সিবিআই'কে দেখার কথা বলেছে আদালত। এর আগে গত মে মাসে সিবিআইয়ের অস্থায়ী দফতরে তাহের-সহ নন্দীগ্রামের মোট ন'জন তৃণমূল নেতাকে তলব করা হয়েছিল। তবে সেই তলব তাহের এড়িয়ে যান। আশঙ্কা ছিল, জেরা করার জন্য ডেকে সিবিআই তাঁদের গ্রেফতার করতে পারে।গত বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দিন অর্থাত্ গত ৩ মে নন্দীগ্রামের একাধিক জায়গায় হামলা চালানো হয় এবং অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তখন নন্দীগ্রামের চিল্লোগ্রাম এলাকায় গুরুতর জখম হন দেবব্রত মাইতি এবং পরে কলকাতার হাসপাতালে গত।১৩ মে (২০২১) চিকিত্সাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী সেই ঘটনার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে এবং পরবর্তী সময়ে তাহের-সহ নন্দীগ্রামের মোট ন'জন তৃণমূল নেতাকে ডেকে পাঠায় তারা।সিআরপিসি রুল অনুযায়ী, কাউকে অভিযুক্ত মনে করলে তাঁকে ৪১-এ নোটিশ পাঠাতে হয় । অভিযুক্ত হিসাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নোটিশ না পাঠিয়ে কেন সাক্ষী হিসাবে নোটিশ পাঠানো হল, এদিন প্রশ্ন করে আদালত । একই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত শেখ সুফিয়ানের আগাম জামিনের আবেদন প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট খারিজ করে দিলেও পরবর্তীকালে সুপ্রিমকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি ।বুধবারের মামলার শুনানি চলাকালীন আবু তাহেরের আইনজীবী এজলাসে দাবি করেন,- "বিরোধী দলনেতা এই তদন্তের ওপরে প্রভাব খাটাচ্ছেন । বারবার তার বক্তব্যে তা প্রতিফলিত হয়েছে । বিরোধী দলনেতা প্রকাশ্যে বলেছেন সিবিআইয়ের হাতে লিস্ট রয়েছে কাকে কাকে ডাকা হবে । সিবিআই এই মামলায় দুবার চার্জশিট পেশ করেছে । দুটি চার্জশিটে আবু তাহেরের নাম নেই ।" অপরদিকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এর দাবি, -"দ্বিতীয় চার্জশিট পেশ করার পর আশিস দাস ও বিশ্বজিত্ পান্ডার গোপন জবানবন্দিতে আবু তাহেরের নাম উঠে আসে । তাঁকে নোটিশ করা হলেও তিনি সিবিআই-এর কাছে হাজিরা দিচ্ছেন না এবং তদন্তে কোনভাবেই সহযোগিতা করছেন না"। এরপরই কলকাতা হাইকোর্ট আবু তাহেরের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। প্রসঙ্গত কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ ভোট-পরবর্তী হিংসা মামলায় খুন ও ধর্ষণ সংক্রান্ত বিষয়গুলির উপরে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ জারি করে থাকে ।অপেক্ষাকৃত কম গুরত্বপূর্ণ মামলা গুলি রাজ্য পুলিশের সিট তদন্ত চালাচ্ছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct