এহসানুল হক ও জুলফিকার মোল্লা, বসিরহাট, আপনজন: স্ত্রীর সাথে কথা হয়েছিল ঈদের আগে বাড়ি ফিরবে, ঈদের আগে বাড়ি ফিরলো কিন্তু পিঠে ব্যাগ নিয়ে নয় কফিন বন্দি হয়ে বাড়ি ফিরলো জওয়ান মহিউদ্দিন আহমেদের নিথর দেহ। মনিপুরে ভূমিধ্বসে শহীদ জওয়ানের দেহ ফিরল গ্রামে৷ বুধবার মাঝরাতে মণিপুরের টুপুলে ভয়াবহ ধস নেমে বাংলার একাধিক জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে৷ তাঁদের মধ্যে নিহত হন মহিউদ্দিন শেখও। ৪৮ ঘণ্টা লাগাতার চিরুনি তল্লাশির পর অবশেষে মাটির স্তূপ থেকে উদ্ধার হল নিখোঁজ সেনা জওয়ানের দেহ। রবিবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরের অবতরণ করে ভারতীয় জওয়ান শেখ মহিউদ্দিনের দেহ। তারপর ঘোড়ারাস এলাকায় পৌঁছায় বিকাল সাড়ে তিনটে নাগাদ। শেষবারের মতো জোয়ানের মুখ দেখতে হাজির হওয়ার বিভিন্ন দিক থেকে হাজার হাজার মানুষ। গান স্যালুটের মাধ্যমে শেষ বিদায় জানানো হয় তাকে। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিথর মরদেহ বাড়ি পৌঁছাতে তার পরিবার কান্নায় ভাসলো শেষ বিদায় জানালো তার স্ত্রী। মৃত্যুকালে রেখে গেল তার একটি দুই বছরের পুত্র সন্তান। এদিন তাকে শেষ বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন পুলিশ আধিকারিক থেকে শুরু করে বসিরহাট টু সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক জয়দীপ চক্রবর্তী। উপস্থিত ছিলেন বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সরোজ ব্যানার্জি, দক্ষিণ বঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন দপ্তরের ডিরেক্টর এটিএম আব্দুল্লাহ রনি, উপস্থিত ছিলেন বসিরহাট দুই নম্বর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক সভাপতি মিহির ঘোষ, বসিরহাট উত্তর বিধানসভার আইএনটিটিইউসি সভাপতি মাহমুদ হাসান ছাড়াও একাধিক বিশিষ্টজনেরা।
বসিরহাটের মাটিয়া থানার ঘোড়ারাস কুলীনগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘোড়ারাস উত্তরপাড়ার বাসিন্দা শেখ মহিউদ্দিন। ২০১৩ সালের চাকরিতে অংশ নেয়। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল মহিউদ্দিন। গ্রামের ইস্কুল এই পড়াশুনোর শুরু হয় তার। তারপর গোপালপুর ব্রহ্মনন্দ হাই স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। বেশ কয়েক বছর আগে বাবাকে হারিয়েছিলেন তারপর এক বছর আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল মহিউদ্দিনের মার। দুই ভাই একইসঙ্গে সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন, কয়েকদিন আগে বড় ভাই বাড়ি ফিরলেও ছোট ভাই ছুটি না পাওয়াই রয়ে গিয়েছিল মনিপুরে। আজ তাকে মৃতদেহ হয়ে বাড়ি ফিরতে হলো। মাটির স্তূপের নীচে থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। টেরিটোরিয়াল আর্মির ১০৭ নম্বর ব্যাটেলিয়নের সেনা জওয়ান শেখ মহিউদ্দিন সহ মোট তিন জওয়ানের নিথর দেহ উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারী দল। মহিউদ্দিনের স্ত্রী রিমানা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, বুধবার শেষ স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর। ঈদের আগে বাড়ি ফিরবেন বলেছিলেন। এরপর থেকে আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। ধসের কথা তাকে জানাননি কেউ। শুক্রবার সকালে ধসের কথা জানতে পারেন তিনি। তার আশা ছিল, সামান্য চোট লাগলেও বাড়ি ফিরে আসবেন মহিউদ্দিন। তাঁদের এক দেড় বছরের সন্তান রয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে স্ত্রী বলেন এইভাবে দেখব আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। এদিন বসিরহাট-২ সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক জয়দীপ চক্রবর্তী তিনি জানান, সমস্ত বিষয় নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখেছিলাম। আজ তার দেহ এসে পৌঁছাল তার বাড়িতে। অত্যন্ত মর্যাদার সাথে তার দেহ শেষ কার্যসম্পন্ন হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct