সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর মুখ্যমন্ত্রিত্ব না ছেড়ে উদ্ধব ঠাকরের উপায় ছিল না। তাঁর নিজের ও শিবসেনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ শেষ পর্যন্ত কোন দিকে বাঁক নেবে, অজানা। পরাজিত ও বন্দী সম্রাটের মতো তাঁর আক্ষেপ, ‘বালাসাহেবের হাতে তৈরি সৈনিকেরাই আজ তাঁর ছেলেকে ক্ষমতাচ্যুত করলেন। তাঁদের ক্ষমতাবান করার পাপের ফল ভুগতে হচ্ছে।’ অস্তিত্বের সংকট কতখানি, এ আক্ষেপ তার প্রমাণ। উদ্ধবের প্রকৃতি নরম। একটু বেশি মাত্রায় গণতান্ত্রিক। মহারাষ্ট্র নিয়ে লিখেছেন সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ প্রথম কিস্তি।
৬২ বছরের জীবনে উদ্ধব ঠাকরেকে বড়সড় দুশ্চিন্তায় বিশেষ পড়তে হয়নি। ৫২ বছর বয়স পর্যন্ত বাবা বালাসাহেব ঠাকরে বটবৃক্ষ হয়ে যাবতীয় রাজনৈতিক ও পারিবারিক ঝড়ঝাপটা সামলেছেন। নির্বিঘ্ন ও নিরুপদ্রব জীবন কাটানোর পাশাপাশি উদ্ধব মনোযোগী ছিলেন ফটোগ্রাফির নেশায়। ছবি তিনি ভালোই তোলেন। জাহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শনী করেছেন। ছবির বইও ছাপিয়েছেন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে রাজনীতির ক্যানভাসে তাঁর জীবনের যে ছবি আঁকা হলো, তা অনুজ্জ্বলই শুধু নয়, চুরচুর হয়ে ভেঙে পড়া মাঝদরিয়ায় লুণ্ঠিত দিশেহারা পরাস্ত এক নাবিকের প্রতিচ্ছবি। বাবার কাছে ‘হার্ড কোর’ রাজনীতির হাতেখড়ি হলেও উদ্ধব খুশি ছিলেন দলীয় মুখপত্র সামনার সম্পাদনায়। প্রথম রাজনৈতিক ঝটকা, পারিবারিকও, চাচাতো ভাই রাজ ঠাকরের বিদ্রোহ। বালাসাহেবই সামলেছিলেন। ২০০৬ সালে। জীবনের উপান্তে রাজের বিদ্রোহ তাঁকে আহত করেছিল। কিন্তু ভেঙে পড়েননি। বালাসাহেব নির্ভরতা খুঁজেছিলেন উদ্ধবের মধ্যে। উদ্ধবও বাবার দেখানো ‘হিন্দুত্বে’ ভর দিয়ে এগোতে চেয়েছেন। ২০১২ সালে বালাসাহেবের মৃত্যুর পর দলের সভাপতি হন। ২০১৪ বিধানসভার ভোটে আগের তুলনায় বাড়তি ১৮টি আসন জিতলেও বালাসাহেবের নামে সহানুভূতি ভোট ৩ শতাংশের বেশি তিনি টানতে পারেননি। অথচ বিজেপির ভোট বাড়ে প্রায় ১৪ শতাংশ! কেননা, তত দিনে রাজনীতিতে নিঃশব্দে ঘটে গেছে বিরাট এক গুণগত পরিবর্তন।
বালাসাহেবের বাসস্থান ‘মাতশ্রী’র গুরুত্ব যতটা কমেছে, তার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপির বোলবোলাও। উদ্ধবের ‘রোলার কোস্টার’ রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাতও তখন থেকে। বুধবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর মুখ্যমন্ত্রিত্ব না ছেড়ে তাঁর উপায় ছিল না। তাঁর নিজের ও শিবসেনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ শেষ পর্যন্ত কোন দিকে বাঁক নেবে, অজানা। পরাজিত ও বন্দী সম্রাটের মতো তাঁর আক্ষেপ, ‘বালাসাহেবের হাতে তৈরি সৈনিকেরাই আজ তাঁর ছেলেকে ক্ষমতাচ্যুত করলেন। তাঁদের ক্ষমতাবান করার পাপের ফল ভুগতে হচ্ছে।’ অস্তিত্বের সংকট কতখানি, এ আক্ষেপ তার প্রমাণ। আজকের মহারাষ্ট্রীয় রাজনীতির চালচিত্রও তা। এ জন্য দায়ী উদ্ধবই। তাঁর কাজের স্টাইল বালাসাহেবের চেয়ে আলাদা। উদ্ধবের প্রকৃতি নরম। একটু বেশি মাত্রায় গণতান্ত্রিক। আধুনিক। বাবা ও ভাই রাজের মতো উগ্র আন্দোলনকে জনপ্রিয়তা অর্জনের উপায় বলে মনে করেননি। তিনি উন্নয়নকামী। শারীরিকভাবে দুর্বল এবং অন্তর্মুখী। এ কারণে বাবার মতো জননেতা হতে পারেননি। বালাসাহেবের ‘ইচ্ছা’ই ছিল ‘নির্দেশ’। সরকারি পদ গ্রহণ না করে, ভোটে না দাঁড়িয়েও তিনিই ছিলেন মহারাষ্ট্রের ‘সরকার’। বালাসাহেবের আদলে নিজেকে গড়তে চেয়েছিলেন রাজ ঠাকরে। ব্যর্থ তিনিও। সেই অবকাশে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে শিবসেনার তৈরি জমি নিঃসাড়ে দখল করতে থাকে বিজেপি। প্রভাব খোয়ানোর সেই চরিত্র কেমন, ২০১৯ সালের নির্বাচন এর প্রমাণ। উদ্ধবের টনকও নড়ে তখনই।
সৌজন্যে: প্র. আ
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct