সম্প্রতি ভারতে মুদ্রাস্ফীতি দ্রুত ভাবে ঊর্ধ্বগতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং সাধারণ আমজনতাকে খুবই সমস্যার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবের আগেই কার্যত ভারতীয় অর্থনীতি খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিল। গত ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বাধিক বেকারত্বের হার উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে দেশের মধ্যে উদ্বেগ প্রতিফলিত হয়েছে। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে ভারতীয় কোষাগারে ভয়ঙ্কর চাপ পড়ল। এ বিষয়ে লিখেছেন আমির আলি। আজ প্রথম কিস্তি।
সম্প্রতি ভারতে মুদ্রাস্ফীতি দ্রুত ভাবে ঊর্ধ্বগতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং সাধারণ আমজনতাকে খুবই সমস্যার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবের আগেই কার্যত ভারতীয় অর্থনীতি খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিল। গত ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বাধিক বেকারত্বের হার উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে দেশের মধ্যে উদ্বেগ প্রতিফলিত হয়েছে। “সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস” প্রকাশিত রিপোর্টে বিশ্ব ব্যাংক ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সুখবর শুনিয়েছিল তা বাস্তবায়িত হয় নাই, বরং কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে ভারতীয় কোষাগারে ভয়ঙ্কর চাপ পড়ল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে, মনে রাখা দরকার সারা পৃথিবীতে যে খাদ্য শস্য ও মোট ক্যালোরি বাণিজ্য হয় তার ১২ শতাংশ আসে ইউক্রেন- রাশিয়া থেকে এবং যে পরিমাণ গম উৎপন্ন হয় তার ২৮ শতাংশ, সূর্যমুখী ৭৫ শতাংশ বাণিজ্য করে এই দুটি দেশ। ভারত অন্যান্যদের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কারণ দেশের সূর্যমুখী তেল আমদানি ৯০% রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেক। ভারতের রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গেছে গভীর সংকটের মধ্যে পড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম পৌঁছে গেছে ১৪০ ডলার যা গত ১৩ বছরে তুলনায় সর্বোচ্চ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে এই ঘোষণার পরই অপরিশোধিত তেলের দাম হুহু করে বাড়তে শুরু করে দিয়েছে। ভারত তার ৮৫ শতাংশ অপরিশোধিত তেল আমদানি করে বিদেশ থেকে, সাধারণ আমজনতার উপর যে প্রভাব পড়বে এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের অপ্রত্যাশিত ভাবে চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্য নষ্ট হতে চলেছে । আশঙ্কা করা যাচ্ছে গমের চাহিদা বিশ্ববাজারে প্রভাব পড়বে, কারণ একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধরত দেশ দুটি চতুর্থ বৃহত্তম গম রপ্তানিকারক দেশ, অপরদিকে বিশ্ব উষ্ণায়নে গমের উৎপাদন কম। ভারত সরকার রপ্তানি উপর প্রতিবন্ধকতার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় গোটা বিশ্ব গম্ভীর পরিস্থিতিতে তৈরি হয়েছে। কভিডের মতো অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেনের ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতিকেও আমজনতা মেনে নেবে। মেনে নেবে না বিবেকবান আমজনতা বিবেকবর্জিত বিমুদ্রাকরণ নামে ২০১৬ সালে ৮ই নভেম্বরের আর্থিক সংস্কারকে। জার্নাল অব রিসার্চেস বিখ্যাত গ্রন্থে চার্লস ডারউইন লিখেছিলেন, “যদি দরিদ্রের চরম দুর্দশা প্রাকৃতিক কারণে না ঘটে বরং প্রাতিষ্ঠানিক কারণে ঘটে সেটা আমাদের পাপ”। নোট বাতিলের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণকে কার্যত পাত্তা না দিয়ে যে ক্ষমতার দাপটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে কালো টাকা, জাল টাকা, সন্ত্রাসবাদ বিনাশের লক্ষ্যে আর্থিক সংস্কার নামে যে নোট বন্দি- দেশের ৮৬ শতাংশ মুদ্রা এক ধাক্কায় বাতিল করে যে অভূতপূর্ব পাপ কর্মটির রাস্তা তৈরি করেছিল তখন থেকেই ভারতের অর্থনৈতিক তছনছ হয়ে গেছে আজও তার ফল ভুগছে ভারতবাসী।
ভারতের অর্থনীতির ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে পালিয়েছেন যারা তারা ভারতের প্রকৃত অর্থনীতির কান্ডারী ছিলেন। বিমুদ্রাকরণের পরই বিদায় নিয়েছেন রঘুরাম রাজন, অরবিন্দ পানাগরিয়া, অরবিন্দ সুব্রম্ভনিয়াম মত উজ্জ্বল মেধাবী স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদরা। রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধে অর্থনীতি মন্দা হলেও ভারতে এত করুণ অবস্থা হতো না। অর্থনৈতিক সংস্কার, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবকাঠামোগত ধাক্কা এখন মোদি সরকারকে বিব্রত করে তুলেছে। কর্মসংস্থান সংকটে মুদ্রাস্ফীতি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ হারিয়েছে অসংখ্য মানুষ। ডলারের বিপরীতে রুপির দামে রেকর্ড পতন আর জ্বালানির দাম আকাশছোঁয়া, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সামনে বড় চ্যালেঞ্জ মুদ্রাস্ফীতিকে প্রতিরোধ করা, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মূল্য বৃদ্ধির জন্য যতই যুদ্ধ করুন না কেন অদূর ভবিষ্যতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোন সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন না তার বক্তব্যে আভাস পাওয়া যায়।
লেখক বর্ধমান ইউনিভার্সিটি অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct