দেশের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দেশের সুরক্ষা আর দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল দেশের যুব সমাজ। দেশের বেকার যুবদের কাজ চাই এবং সেই কাজের একটা নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্বও চাই। ভারতবর্ষের মত প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই ভাবনা কোনো অমূলক নয়। বরং অপরাধী তাঁরা, যাঁরা দেশের সংবিধানের মূল ভিত্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে একটার পর একটা আইন তৈরি করে দেশটাকে রসাতলে পাঠাতে চাইছেন। এ বিষয়ে লিখেছেন সনাতন পাল। আজ প্রথম কিস্তি।
দেশের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেশের সুরক্ষা আর দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো দেশের যুব সমাজ। যুব সমাজকে বাদ দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা মানেই খানিকটা উটের পিঠে চড়ে মরুভূমিতে জল খুঁজতে যাওয়ার মতো। দেশের বেকার যুবদের কাজ চাই এবং সেই কাজের একটা নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্বও চাই। ভারতবর্ষের মত প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই ভাবনা কোনো অমূলক নয়। বরং অপরাধী তাঁরা, যাঁরা দেশের সংবিধানের মূল ভিত্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে একটার পর একটা আইন তৈরী করে দেশটাকে ভোগে পাঠাতে চাইছেন। দেশের যুব সমাজের চাহিদা অনুযায়ী তাঁরা কাজ পাবেন পরে তাঁরাই আবার দেশের চাহিদা পূরণ করবেন। ঠিক যেমনটা রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “আমার তৃষ্ণা তোমার সুধা,তোমার তৃপ্তি আমার সুধা” একেই বোধহয় বলে একে অপরের পরিপূরক।
বেশ কয়েক বছর আগে আমরা দেখেছি সর্বশিক্ষা মিশনের মাধ্যমে ‘প্যারা টিচার’ নামক ঠিকা শিক্ষক নিয়োগ করতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক সব ক্ষেত্রেই চুক্তির ভিত্তিতে এই শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। আবার রাজ্যে দেখেছি চুক্তির ভিত্তিতে পুলিশ নিয়োগ, যার পোষাকি নাম দেওয়া হয়েছে সিভিক পুলিশ। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও চলছে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ। সম কাজে সমবেতনের ঠিক পরিপন্থী হল ঠিকা নিয়োগ। দেশ এবং মানুষের মৌলিক বিষয় গুলিরও ঠিকা দেওয়া হচ্ছে। এখন আবার ঘোষণা করা হয়েছে যে,’অগ্নিপথ’ প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে ঠিকা সেনা নিয়োগ করে কার্যত দেশের সুরক্ষা ব্যবস্থাকেই ঠিকাতে পরিণত করা হচ্ছে । ঠিকা ভিত্তিক এই সেনা নিয়োগ দেশের যুব সমাজ চাইছেন না । তাই তো তাঁরা আজ প্রতিবাদে পথে নেমেছেন। তবে একথা অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আসলে নিজেদেরই ক্ষতি করা হয় । কারণ সরকারি সম্পত্তি মানেই দেশের সমস্ত মানুষের সম্পত্তি। যাঁরা বিতর্কিত আইন তৈরী করে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বেকারদের ভবিষ্যত নিয়ে রাজনীতির জুয়া খেলছেন তাঁদের পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। প্রথমে প্রতিবাদ শুরু হয় বিহারে, এখানে সমস্তিপুর এবং লক্ষ্মীসরাইয়ে দুটি ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় পরবর্তী কালে বিক্ষোভের আগুন দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। উত্তরে জম্ম থেকে দক্ষিণে হায়দরাবাদ, বিহাররের কাটিহার থেকে রাজস্থানের সিকর গোটা দেশ আজ ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে। এখন পর্যন্ত ডজন খানেক ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেই গণমাধ্যম জানা গেছে। তেলেঙ্গানার সেকেন্দারবাদে পুলিশের গুলিতে ১৯ বছরের এক প্রতিবাদী যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়েছে । বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর চলছে, চলছে অগ্নি সংযোগ , বিভিন্ন জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সারাদেশের সাথে এরাজ্যেও হাওড়া সহ কয়েকটা জেলাতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সরকার চাইলে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এই বিক্ষোভ বন্ধ করে দিতে পারে। শুধু অগ্নিপথ বন্ধের একটা ঘোষণা চাই। কিন্তু সরকার সে পথে না গিয়ে দেশের যুব সমাজের সাথে গা জুয়ারি করছে। দেশের ভালো মন্দ বিচার করে আইন তৈরী করে কাজ করার জন্য সাংসদ এবং সরকার কে নির্বাচিত করা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা যদি দেশের মানুষের এবং দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে শুধু দলীয় রাজনীতির কথা ভাবেন এবং সস্তায় জনপ্রিয় হবার রাজনীতি করেন তাহলে দেশের মানুষই বা হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন কেন ? এটা বলা মানে প্রতিবাদের নামে ট্রেন জ্বালিয়ে দেওয়া কে সমর্থন করছি না। সরকারের কাজ যখনই মানুষের কাছে বিপজ্জনক বলে মনে হয় তখনই সাধারণ মানুষের সাথে সরকারের সংঘর্ষ হয়।
শিক্ষক এবং বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct