একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো অপমান জনক কথা বা উসকানিমূলক বক্তব্য কেউ রাখতেই পারেন না, যা দেশের ঐক্যকে বিনষ্ট করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে। যদি কেউ এমন করেন তাহলে তাকে সবার প্রথমে অ্যান্টি ন্যাশন্যাল আইনে গ্রেফতার করা উচিত। কিন্তু দলীয় সংকীর্ণ রাজনীতির কারণে সেটা করা হয় না। প্ররোচনা দিয়ে দেশে হিন্দু মুসলিম বিরোধ তৈরি করে জনগণের ঐক্যকে বিনষ্ট করার চেষ্টা জনগণকে রুখতে হবে সম্প্রীতি দিয়ে। লিখেছেন সনাতন পাল। আজ প্রথম কিস্তি।
ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য ক্ষুদিরাম বসু হাসতে হাসতে ফাঁসির দরি গলায় পড়েছেন। এই প্রসঙ্গে-” একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি....”। ঝুমুর অঙ্গের এই গানটি শুনলে আজও দেশের মানুষ চোখের জল ফেলেন এবং গভীর দেশাত্মবোধ ভারতবাসীর মন কে ছুঁয়ে যায়। অপর দিকে রামপ্রসাদ বিসমিল্লের ফাঁসিতে যাওয়ার আগে গাওয়া - সেই গান “সারফরোসি কি তামান্না “গানটি আজও মানুষকে দেশের প্রতি গভীর জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটায়। যে দেশের হিন্দু-মসুলমান,ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করে দুশো বছরের ব্রিটিশ শাসনের শিকড় উপরে ফেলে দেশকে স্বাধীন করার হিম্মত রাখেন, সে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐক্যের ভিত কি এতোটাই ঠুনকো! যে, দু- একজন নেতা-নেত্রীর রাজনৈতিক উদ্দেশে বলা কিছু কথার জন্য দেশের সম্প্রীতি নষ্ট হবে? হজরত মুহাম্মদ সা.-কে নিয়ে যে অপমানজনক কথা বিজেপির নেতা- নেত্রী বলেছেন সেটা মেনে না নিয়ে প্রতিবাদ অবশ্যই করা দরকার। কিন্তু সেই প্রতিবাদ যেন হিংসার রূপ না নেয়, সাধারণ মানুষের যেন কোনো অসুবিধা না হয় সেটা দেখাও প্রতিবাদীদের শুধু দায়িত্বই নয় স্বদেশী কর্তব্যও বটে। আবার দেশের সম্প্রীতি বজায় রাখার দায় শাসক দল এবং সরকার ও বিরোধী সবারই যেমন আছে, তেমনি দেশের প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে । কিন্তু এক্ষেত্রে শাসক দল তৃণমূল এবং বিজেপি দুটোর ভূমিকা নিয়েই যেমন প্রশ্ন উঠছে তেমনি দুটো সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন কম নেই। একটা ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো অপমান জনক কথা বা উসকানিমূলক বক্তব্য কেউ রাখতেই পারেন না, যা দেশের ঐক্যকে বিনষ্ট করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে। যদি কেউ এমন করেন তাহলে তাকে সবার প্রথমে অ্যান্টি ন্যাশন্যাল আইনে গ্রেফতার করা উচিত। কিন্তু দলীয় সংকীর্ণ রাজনীতির কারণে সেটা করা হয় না। তৃণমূল সরকার যেমন বিজেপির ঐ বিভ্রান্তিকর বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না, তেমনি মোদির দলও তাকে যেমন সতর্ক করে না তেমন আইনের হাতেও তুলে দেয় না। এর প্রধান কারণ হল প্ররোচনা দিয়ে দেশে হিন্দু মুসলিম বিরোধ তৈরি করে জনগণের ঐক্যকে বিনষ্ট করা, যাতে সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন না হয়। ২০২৩ শে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০২৪ শে লোকসভার নির্বাচন। এই নির্বাচনে যদি জল ঘোলা করা এবং সেটিং এর রাজনীতি না করা হয় এবং একে অপরের লোক দেখানো বিরোধিতা না দেখানো হয় তাহলে জনমত দুই শাসকের বিরুদ্ধেই যেতে পারে ফলে অন্যরা তার সুবিধা পেতে পারে।
শিক্ষক এবং বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct