অনবরত বিপর্যয়ের মুখে বিশ্ব পরিবেশ-পরিস্থিতি। মানবসভ্যতা বিধ্বংসী অনাহূত নানা সমস্যা বিশ্বের প্রতিটি আনাচেকানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পৃথিবীর মানুষের জরুরি পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ কাজে বিপত্তি ঘটতে থাকায় টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে প্রায় প্রতিটি দেশে। অন্যান্য সংকটের কথা কিছুটা উল্লেখ করলেও জাতিসংঘ বারবার বিশ্ব খাদ্যসংকট নিয়ে সতর্কবার্তা প্রচার করে চলেছে। মানুষের মানবিক সহায়তার দেওয়ার কাজে জাতিসংঘ সব সময় উদগ্রীব। এ সময় বিশ্বে যতগুলো আতঙ্ক বিরাজ করছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হলে খাদ্যাভাব। কারণ ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবীর সব ছন্দ হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রবল। বর্তমান বিশ্বে খাদ্যাভাব নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন ফখরুল ইসলাম।
অনবরত বিপর্যয়ের মুখে বিশ্ব পরিবেশ-পরিস্থিতি। মানবসভ্যতা বিধ্বংসী অনাহূত নানা সমস্যা বিশ্বের প্রতিটি আনাচেকানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পৃথিবীর মানুষের জরুরি পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ কাজে বিপত্তি ঘটতে থাকায় টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে প্রায় প্রতিটি দেশে। অন্যান্য সংকটের কথা কিছুটা উল্লেখ করলেও জাতিসংঘ বারবার বিশ্ব খাদ্যসংকট নিয়ে সতর্কবার্তা প্রচার করে চলেছে। মানুষের মানবিক সহায়তার দেওয়ার কাজে জাতিসংঘ সব সময় উদগ্রীব। কিন্তু চহিদার তুলনায় মানবিক সাহায্য ও সহায়তার ঘাটতির মুখোমুখি হলেই সংস্থাটি বেশি অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। আর এটি করবে না-ই বা কেন? সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহতায় পেশিশক্তিগুলোর মধ্যে ক্রমাগত পাস্পরিক হুমকি ও দোষারোপ করার ঘটনা বিশ্বকে একটি চরম নাজুক অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। মে ২৪, ২০২২ তারিখে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কার্যালয়ের রুশ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। ইউরোপের বহু দেশে রাশিয়ার গ্যাস-তেল, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ইউরোপের খাদ্যভান্ডার ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউরোপে খাদ্য সরবরাহ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সবাই। ব্রিটেনে জার্মানি, ফ্রান্স, হল্যান্ড, ইতালির খাদ্যসরবরাহ কমে গেছে। ফলে ব্রিটেনের বাজারে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রীর সরবরাহ না থাকায় দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। ঐতিহাসিক প্রতিটি যুদ্ধের পর পৃথিবীতে ব্রিটেন থেকেই অর্থনৈতিক মন্দা ও মহামারির উত্পত্তি হয়েছিল। সেগুলো মূলত ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও বিশ্ববাণিজ্য ঘাটতি থেকে সৃষ্ট খাদ্যাভাব থেকে উৎপত্তি লাভ করেছিল। আইরিশ পটেটো ফ্যামিইন, ব্লাকডেথ (প্লেগ), লুডিট শ্রেণির জাগরণ, সামাজিক অনাচার ইত্যাদির কথা মানুষ কখনো ভুলতে পারবে না।
সেগুলো কার্যত ছিল রোমানদের সঙ্গে ব্রিটিশদের দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ফসল। এখন আধুনিক সভ্যতার ধ্বজাধারীদের একগুঁয়েমি মনোভাব সেই ধরনের সংকটের পুনরাবৃত্তি করার মখোমুখি করে ফেলেছে। তার প্রভাব মানুষ পেতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ভারত, আফগানিস্তান, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশও গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এই সংবাদ চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে দেশে মজুতদাররা তত্পর হয়ে খাদ্যগুদামে তালা লাগিয়ে দিয়ে কৃত্রিম খাদ্যসংকট তৈরি করে ফেলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃপুন টর্নেডো, ধূলিঝড়, বন্যা এমনকি ইরাকের মতো দেশে বারবার ভয়াবহ ধূলিঝড়ে ব্যাপক ফসলহানি ও জনস্বাস্থ্যের বিপর্যয় বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলেছে। ইরাকের বহু মানুষ ধূলিঝড়ের কারণে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট নিয়ে মানুষ ভিড় করছেন হাসপাতালে। করোনার কারণে গত তিন বছরে সারা বিশ্বে অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। বেকারত্ব বেড়েছে। এছাড়া জলবায়ুর চরম বিপর্যয় শুরু করেছে খাদ্যোত্পাদনে সংকট। জলবায়ুর বিপর্যয় ঠেকাতে কোনো উদ্যোগ ঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তার আগেই অকালে খরা, বন্যা, ফ্লাসফ্লাড, ভূমিধ্বস ইত্যাদিতে কৃষকরা নাকাল হয়ে পড়েছে দেশে দেশে। এগুলোর মধ্যে যুদ্ধের গরম শাসানি বিশ্ববাণিজ্যে আতঙ্ক তৈরি করায় খাদ্য সরবরাহে মারাত্মক সংকট তৈরি হয়েছে। এত কিছুর মধ্যে আরেক আতঙ্ক হিসেবে আবিভূর্ত হচ্ছে মাঙ্কি পক্স। এটা বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের জন্য নতুন ত্রাস, আতঙ্ক। যদিও মাঙ্কি পক্স করোনার মতো ততটা ভয়াবহ নয় বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু গরিব দেশগুলোর অর্থনীতিকে আরো পিছুটান দেওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। মানুষ কোনোটাই আমলে নেয় না। ফলে সব রোগের জীবাণু থেকেই যায় সব জায়গায়। আর সেগুলো কিছুদির পর পর আবার মাথাচাড়া দিয়ে মানবহত্যা বা শিকারে মেতে ওঠে নতুন রূপে। গত মাসে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও নানা জটিলতা আমাদের নানা অশনিসংকেতের ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। যদিও সেটাকে অনেকে হেসে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করছেন কিন্তু তলে তলে তাদের অন্তরের কাঁপুনি বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও বচনে ফুটে উঠছে। এ সময় বিশ্বে যতগুলো আতঙ্ক বিরাজ করছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হলে খাদ্যাভাব। কারণ ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবীর সব ছন্দ হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রবল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct