আপনজন ডেস্ক: জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সর্বভারতীয় নেতা মাওলানা মাহমুদ মাদানি উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দের ঈদগাহ ময়দানে দুদিনের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সম্মেলনের প্রথম দিনে বললেন, দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। দেশের মুসলমানদের কষ্ট লাঘবে কেন্দ্রীয় সরকার চোখ বন্ধ করে রেখেছে। মাদানি বলেছেন, দেশজুড়ে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারে থাকা মানুষজন তাঁদের ঠোঁট সিল করে রেখেছে। আর সেটাই সবার জন্য উদ্বেগের কারণ। মুসলমানরা তাদের শহরের রাস্তায় হাঁটলেও কষ্টের মুখোমুখি হচ্ছে। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, আমরা সব অত্যাচার সহ্য করব কিন্তু কাউকে আমাদের দেশকে টুকরো টুকরো হতে দেব না। আমরা সব বিষয়ে আপস করতে পারি কিন্তু তা দেশের মূল্যে কিছুতেই নয়।
তিনি আরও বলেন যে, এই সময়ে মুসলিম সম্প্রদায় যে কষ্টের মুখোমুখি হচ্ছে তা কেউ বুঝতে পারে না। আমরা যেকোনো ধরনের কষ্টের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আমরা দুর্বল। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ শান্তির মশাল বাহক এবং ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখতে চায়। এ কারণেই আমরা যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত রয়েছি।মাদানি হুঁশিয়ারি দেন, আমরা আগুন দিয়ে আগুন নেভাতে পারি না। ভালোবাসা দিয়ে ঘৃণার পরিবেশকে হারাতে হবে। শান্ত হোন এবং যারা আমাদের দেশকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় তাদের পরিকল্পনায় প্রভাবিত হবেন না। এদিনের সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ আগামী দিনে ঘৃণা এবং ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এক হাজার সদ্ভাবনা সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছে। জমিয়তের সম্মেলনে দেশজুড়ে প্রায় দু হাজার প্রতিনিধি যোগ দেন। সর্বোপরি, সম্মেলনে সদস্যদের দ্বারা তিনটি রেজোলিউশন পাস করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে, ক. আইন কমিশন -২০১৭-এর ২৬৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যারা সহিংসতায় উসকানি দেয় তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য একটি পৃথক আইন তৈরি করার সুপারিশ। খ. ধর্মসমূহের মধ্যে সহিষ্ণুতা, শান্তি ও সহাবস্থানকে উৎসাহিত করার জন্য, রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক মনোনীত ১৫ই মার্চকে ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে দিবস হিসেবে পালন করা । এই উপলক্ষে সকল ধরনের বর্ণবাদ ও ধর্মীয় বৈষম্য দূরীকরণের অঙ্গীকার স্মরণ করা। গ. ন্যায়বিচার ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জমিয়তে উলামা জাস্টিস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট ইনিশিয়েটিভ ফর ইন্ডিয়া মুসলিমস নামে নতুন সংগঠন তৈরি করা হয়েছে।
সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ১১ জন সদস্য নিয়ে একটি ‘জমিয়ত সদ্ভাবনা মঞ্চ’ তৈরি করবে। এর অর্ধেক সদস্য হবে অমুসলিম। অ-মুসলিম ভাইদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ফোরাম প্রতি মাসে একটি সভা আহ্বান করবে। এর আগে ভাষণ দিতে গিয়ে জমিয়তে উলামার সর্বভারতীয় সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানি দেশের ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ঘৃণার বাতাবরণের অবসান ঘটাতে একজোট হওয়া দরকার। তিনি বলেন, আমরা ধৈর্য ধরে রেখেছি, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আমরা আমাদের মাথা নত করব এবং সবকিছু গ্রহণ করব। আমরা সব কিছুর সঙ্গেই আপস করতে পারি, কিন্তু আমাদের বিশ্বাসের ওপর নয়। তিনি আরও বলেন, বিভেদসৃষ্টিকারী শক্তিগুলির উস্কানির একটি গেম প্ল্যান আছে। আমরা তাদের ফাঁদে পা দিতে পারি না। ঘৃণার শিকার হচ্ছেন সংখ্যালঘুরা, কিন্তু সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হল যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নীরব। যারা ঘৃণা ছড়াচ্ছে তারা দেশের বিশ্বাসঘাতক।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct