সঞ্জীব মল্লিক,বাঁকুড়া,আপনজন: নিজ দেশে পরবাসী ওরা। হ্যাঁ ওরা বেদে সম্প্রদায়। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে এক জায়গাতে বাস করেও মেলেনি তাদের কোনো সুযোগ-সুবিধা। বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলমহল একদিকে যেমন তার গাছপালা ঘন জঙ্গল নিয়ে বৈচিত্রে ভরা,কোথাও আবার গামছার আড়ালে মুখ ও মুখোশের খেলা দেখার ভীতি। এরই মাঝখানে ছয়-ছয়টি পরিবারের ছোট্ট ছোট্ট কুটির তৈরি করে বাস, হ্যাঁ নিজ দেশে পরবাসী ওরা, মেলেনি এখনো পর্যন্ত নাগরিকত্ব। মেলেনি কোনো সুযোগ-সুবিধা। স্থানীয় ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমে কিছুটা তাদের পেট চালানোর বন্দোবস্ত হলেও তা এক্কেবারে যথেষ্ট নয়। বাঁকুড়া জেলার হিড়বাঁধ ব্লকের অন্তর্গত কাজলডোবা নামক এক গ্রামের সাহেববাঁধ নামে একটি পুকুরের পাড়ে ছয়টি পরিবারের ছোট্ট মাটির দেওয়ালে ত্রিপল খাটিয়ে বসবাস। এরা ভূমিহীন এবং অন্নহীন। এই ছোট্ট ছোট্ট কুটিরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করে আজ আছি তো কাল নেই অস্তিত্বে বাস করে চলেছে এরা। পেটের ভাত জোগাড় করতে কাজ বলতে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি এবং সাময়িক সময়ে রাজমিস্ত্রি এবং মাঠের কাজ,এতে কি আর জীবিকা নির্বাহ হয়।
দীর্ঘ আট বছর যাবত তারা ওই এলাকাতে বাস করলেও তাদের পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম তাদের মতোই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল,স্থানীয় মিরগি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তৎপরতায় তাদের বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করানোর গেছে তাদের ছয় জন বাচ্চা এখন স্কুল যায়।তাহলেও ভূমিহীন এবং অন্নহীন মানুষদের সংগ্রামের তো আর শেষ হয়না।এই নিষ্পাপ ফুলের মতন বাচ্চাগুলোকে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে ভিক্ষাবৃত্তিতে বের হবার জন্য রোজ তারা স্কুলে আসতে পারে না,স্কুলের দরজা তাদের কাছে সত্যিই বিলাসিতা। এদের স্বাস্থ্য সাথী নেই,লক্ষ্মীর ভান্ডার নেই, কন্যাশ্রী নেই, নেই যুবশ্রীও রেশনের চালটাও জোটেনা এদের কপালে যার জেরে ভিক্ষাবৃত্তিই এদের মূল জীবিকা। এই সম্প্রদায়ের দাবি তারাও আর পাঁচজনের মতন সমাজের মূল স্রোতে মিশতে চায়,তারা ভালো থাকতে চায়, তাদের পরবর্তী প্রজন্মের অবস্থা যেন তাদের মতো না হয়। স্থানীয় গ্রামবাসী থেকে শুরু করে স্থানীয় স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ তারা সকলেই চাইছেন সব কিছু সুযোগ সুবিধা নিয়ে তারা যেন সমাজের মূল স্রোতে ফিরে যেতে পারে।
এই ছয়টি বেদে সম্প্রদায়ের পরিবারের দুরাবস্থার কথা স্থানীয় ব্লক প্রশাসনের দৃষ্টির গোচরে থাকলেও হিড়বাঁধ ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক আলমগীর হোসেন জানান, “সেন্ট্রাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট নামে একটা প্রতিষ্ঠান একটা অনুসন্ধান চালাচ্ছে তারা ভারতীয় নাগরিক কিনা। তারা যদি লিখিত আকারে বলে দেন তারা ভারতীয় নাগরিক তাহলে সব ব্যবস্থা সাথে সাথেই করা হবে, নইলে ভারতবর্ষে নাগরিকতা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা করা হবে”। হিড়বাঁধ ব্লকের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ মাঝি জানান, স্থানীয় ব্লক প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে আমরা ওদের সর্বত ভাবে সাহায্য করব। এখন শুধু দেখার বিষয় এটাই এই ভূমিহীন মানুষ গুলো সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে পারে, নাকি তারা ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে একই অস্তিত্বে থাকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct