পুরস্কার পেতে ভালো লাগে সকলেরই। পুরস্কার আমাদের অ্হংকে তৃপ্ত করে বলেই পুরস্কার পেতে ভালো লাগে। লোভ হয় পুরস্কার পেতে। বড় বড় রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেতে হলে শুধু ইচ্ছে ও লোভ থাকলেই হয় না। শুধু যোগ্যতাও মাপকাঠি নয়। দরকার আছে খুঁটির জোরের। বিচারকদের টেবিলে নিজের নামটা ঢুকিয়ে দিতে হবে। তারপর এই নামটাকে একমাত্র নাম করার তদ্বির চালিয়ে যেতে হবে নিরবচ্ছিন্ন ও নিপুণভাবে। তবে বিচারকদের টেবিলে নাম পৌঁছানোর আগে একটা গোপন স্তর আছে। এসব নিয়ে লিখেছেন দিলীপ মজুমদার।
পুরস্কার পেতে ভালো লাগে সকলেরই। পুরস্কার আমাদের অ্হংকে তৃপ্ত করে বলেই পুরস্কার পেতে ভালো লাগে। লোভ হয় পুরস্কার পেতে। বড় বড় রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেতে হলে শুধু ইচ্ছে ও লোভ থাকলেই হয় না। শুধু যোগ্যতাও মাপকাঠি নয়। দরকার আছে খুঁটির জোরের। বিচারকদের টেবিলে নিজের নামটা ঢুকিয়ে দিতে হবে। তারপর এই নামটাকে একমাত্র নাম করার তদ্বির চালিয়ে যেতে হবে নিরবচ্ছিন্ন ও নিপুণভাবে। তবে বিচারকদের টেবিলে নাম পৌঁছানোর আগে একটা গোপন স্তর আছে। সেখানে আছেন বাঘে-গরুতে জল খাওয়ানো রাজনৈতিক নেতারা। তাঁরাই নামটা বিচারকের কাছে পৌঁছে দেন। কিংবা একটা ফোন। এমন যে রবীন্দ্রনাথ , নোবেল প্রাইজ পেতে তাঁকেও অনেক স্তর পেরুতে হয়েছিল। কোন কোন গবেষক তার আনুপূর্বিক বিবরণ দিয়েছেন।
আমাদের এই রাজ্যে কবিদের সংখ্যা সীমাহীন। কিছু কিছু রাজনীতিবিদও কাব্যচর্চা করে থাকেন। যে দু’জন মুখ্যমন্ত্রী সাহিত্যচর্চা করেছিলেন তাঁরা হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর মমতা ব্যানার্জী। বিধান রায় , প্রফুল্ল ঘোষ , প্রফুল্ল সেন . সিদ্ধার্থশংকর রায় , জ্যোতি বসু সাহিত্যচর্চার ধার ধারেন নি। বুদ্ধদেববাবু খান চার-পাঁচেক বই লিখেছেন। সেগুলি সবই গদ্যগ্রন্থ। আলোচনামূলক। সেদিক থেকে মমতা অনেক অগ্রসরমানা। তিনি নানা জেনারের বই লিখেছেন। এখনও লিখে চলেছেন। আলোচনা , প্রবন্ধ , উপন্যাস , কবিতা , ছড়া , গান লিখেছেন তিনি। তাঁর বইএর সংখ্যা যে কোন প্রথিতযশা লেখকের হিংসার কারণ হতে পারে। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে প্রায় ১০০ খানা বইএর লেখিকা তিনি। তিনি নিজেই জানিয়েছেন যে ভালোই রোয়াল্যাটি পান তিনি বই থেকে। সেটা অলীক না হতে পারে। কারণ পড়ুক বা না পড়ুক , তাঁর কর্মী-সমর্থকরা যে তাঁর বই কিনবে সেটা স্বাভাবিক। সে দিক থেকে তিনি জনপ্রিয়। কিন্তু সব জনপ্রিয় লেখক কালজবী লেখক নন।মমতাকে যদি সমাজসেবা বা রাজনীতির জন্য পুরস্কার দেওয়া হত , তা হলে বলার কিছু ছিল না। কিন্তু সাহিত্যের জন্য পুরস্কার ? একটা বড়’ কিন্তু’ থেকে যায়। দলমতনির্বিশেষে সেই ‘কিন্তু’ থাকাটা স্বাভাবিক ছিল। দেখা গেল এক খ্যাতিমান কবি ও এক খ্যাতিমান নাট্যকার এই পুরস্কারকে ‘যুক্তি’ দিয়ে সমর্থন করার চেষ্টা করছেন। ফলিত রাজনীতির জগৎ থেকে অনেকটা দূরে আছি বলে জানি না , এই পুরস্কারের প্রস্তাবক কে ? তাঁদের অথবা মমতার দলের যুক্তিবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের কি মনে হয় নি যে এই পুরস্কারটা তিরস্কার হয়ে ফিরে আসতে পারে ? কে একজন বলেছিলেন স্বাধীনতার পরে দেশের লেখক , বুদ্ধিজীবীরা বেশির ভাগ conformist হয়ে গেছেন। এটা শুধু এ রাজ্যের ব্যাপার নয় , গোটা দেশের ব্যাপার। তাই নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘ন্যাংটো রাজা’কে দেখে তাঁরা ‘সাবাস সাবাস’ বলছেন। যদিও বাড়িতে বসে একান্তে তাঁরা মুচকি হাসেন। মমতার গদ্য তবু সহনশীলতার মাত্রা অতিক্রম করে না। কিন্তু ছড়া বা কবিতার ক্ষেত্রে কি বলা যায় সে কথা ? এ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রপূর্ব যুগ তো বটেই রবীন্দ্রনাথের যুগও আমরা পেরিয়ে এসেছি। প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। মমতা কিন্তু রবীন্দ্রপূর্ববর্তী যুগেই আছেন। কবিতাই যদি লিখতে চেয়েছিলেন তিনি , তাহলে দরকার ছিল পর্যাপ্ত অনুশীলনের। ‘স্বভাবকবি’রা খুব বেশি দূর এগোতে পারেন না। এই পুরস্কারটা না দিলে কি এমন ক্ষতি হত ? মমতা ব্যনার্জীর ভাবমূর্তির নিশ্চিত কোন ক্ষতি হত না। বহু শ্রমে ও সাধনায় তাঁর ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে। প্রায় একা এক নারী একটি সংগঠিত , ক্যাডারভিত্তিক দলকে পরাস্ত করেছেন। তৃপ্তি মিত্রের নাটকের ভাষা ধার করে বলা যায় যে তাঁর দলে তিনিই একমাত্র লড়াকু পুরুষ। নির্বাচনে নিশ্চিতভাবে জয় হবে জেনেও বাহুবল প্রদর্শন যেমন ভুল , তেমনি এই পুরস্কার গ্রহণ করাও এক মারাত্মক ভুল। সে ভুল পরিষ্কার করার কোন লোক তাঁর সহযোদ্ধাদের মধ্যে কেউ নেই। এটাই এক ট্রাজেডি। মমতা যেন ইতিহাসের অচেতন হাতিয়ার হয়ে গেলেন।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
(লেখক সিনিয়র ফেলোশিপপ্রাপ্ত গবেষক)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct