যুক্তরাজ্যের যেকোনও নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছাড়া বিজয়ী হওয়া কঠিন। এমনকি অনেক রাজনীতিবিদ অস্থিত্ব হাঁরিয়েছেন বলেও প্রমাণ রয়েছে। এই কঠিন বাস্তবতার মাঝেও লেবারপার্টি থেকে বহিষ্কৃ্ত লুৎফুর রহমান দুইবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১০ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র ও নিজের দল ‘টাওয়ার হ্যামলেটস ফাস্ট’ থেকে নির্বাচিত হন তিনি। অথচ ২০১৫ সালে একটি বিশেষ আদালত ভোট কারচুপি, ভোট কেনা এবং ধর্মীয় ভীতি প্রদর্শনের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে লুৎফুর রহমানকে মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। লুৎফুর রহমানকে নিয়ে লিখেছেন আব্দুল মুকিত মুখতার।
লুৎফুর রহমানের বিজয় ব্রিটেনে বাঙালি জাতিকে আরেকটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করার সুযোগ দিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে বাঙালি জাতির গৌরবের বিষয়। বাঙালিরা যেখানেই থাকুক, চাইলেই নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে, তা তার প্রমাণ। অন্যদিকে বাঙালি জাতি সত্তায় চরম গাদ্দারির ইতিহাসও রয়েছে। যে কারণে বাংলা সাহিত্যের সেই প্রবাদের সৃষ্টি হয়েছে। যেমন— ‘বাঁশকে যখন কুঠার কাটতে লাগলো, তখন বাঁশ বললো, ভাই কুঠার! তোমার সাথে তো আমার কোন বিরোধ নেই! তা তুমি আমাকে কাটছো কেন? কুঠার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দিলো, ভাইরে— আমি তো কাটছি না। তোর জাতভাই আমার পিছনে ধাক্কা দিচ্ছে!’ব্রিটেনের ইতিহাসে লুৎফুর রহমান ছিলেন একজন সেই সফল মেয়র যিনি সর্বপ্রথম জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা হল, যুক্তরাজ্যের যেকোনও নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছাড়া বিজয়ী হওয়া কঠিন। এমনকি অনেক রাজনীতিবিদ অস্থিত্ব হাঁরিয়েছেন বলেও প্রমাণ রয়েছে। এই কঠিন বাস্তবতার মাঝেও লেবারপার্টি থেকে বহিষ্কৃ্ত লুৎফুর রহমান দুইবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১০ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র ও নিজের দল ‘টাওয়ার হ্যামলেটস ফাস্ট’ থেকে নির্বাচিত হন তিনি। অথচ ২০১৫ সালে একটি বিশেষ আদালত ভোট কারচুপি, ভোট কেনা এবং ধর্মীয় ভীতি প্রদর্শনের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে লুৎফুর রহমানকে মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশ এবং ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ফৌজদারি বিচার শুরু করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই। তারপরও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আদালত তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফলে তিনি তারই সৃষ্টি করা রাজনীতিক রাবিনা খানকে সমর্থন দেন। নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রার্থী বর্তমান মেয়র জন বিগস পেয়েছিলেন ৪৪ হাজার ৮৬৫ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী রাবিনা খান পেয়েছিলেন ১৬ হাজার ৮৭৮ ভোট।
বাঙালি জাতির মাঝে মীরজাফর ছিল এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সেই মীরজাফরের বংশধররা সম্মিলিতভাবে লুৎফুর রহমানকে মিথ্যা অপবাদ ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ফেলেছিল। যদিও তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নির্দোশ। দীর্ঘ প্রায় আট বছর পর তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত বর্তমান মেয়র জন বিগস ও লিবারেল ডেমোক্রাটে যোগদানকারী রাবিনা খানের সাথে। গত ৫ মে ২০২২ সালে নির্বাচনে লুৎফুর রহমান পেয়েছেন ৪০৮০৪ ভোঠ। লেবার পার্টিও বর্তমান মেয়র জন রবার্ট বিগস পেয়েছেন ৩৩৪৮৭ ভোট। লিবারেল ডেসোক্র্যাট দলে যোগদানকারী রাবিনা খান পেয়েছেন ৬৪৩০ ভোট। এটা স্পষ্ট যে, টাওয়ার হ্যামলেটসের এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য রাবিনা খান দাঁড় করানো অর্থই ছিল লুৎফুর রহমানের প্রতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে লুৎফুর রহমান বলেন, আজ আমি জনতার আদালতে দাঁড়িয়েছি। ঘটে যাওয়া বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে যাচ্ছি না। আজ সেই বিষয়ে নয়। আজ এই বারা এলাকার মানুষ সম্পর্কে। গতকাল তারা বিপুল সংখ্যায় বেরিয়ে এসেছে এবং তারা উচ্চকণ্ঠে তাদের গণতান্ত্রিক ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তারা পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তন আমি এবং আমার এসপায়ার বা আকাঙ্খা।’
(লেখক লন্ডনের আপনজন প্রতিনিধি)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct