আপনজন ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে আদালতের নির্দেশে আর্কেওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া সমীক্ষা শুরুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল জ্ঞানবাপী মসজিদ কাশী বিশ্বনাথ মন্দির চত্বর। সমীক্ষা চালানোর প্রথম দিনে ভিডিওগ্রাফি করা হয়। তবে, সমীক্ষকরা জ্ঞানবাপী মসজিদের প্রবেশপথ খুলে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলে আঞ্জুমান ইনাজানিয়া মসজিদ কমিটি প্রতিবাদে সোচ্চার হন। উল্লেখ্য, গত বছর কাশী বিম্বনাথ মন্দিরের পুরোহিত স্বয়ংভূ জ্যোতির্লিং ভগবান বিশ্বেশ্বর আদালতে মামলা করে দাবি করেছিলেন, সপ্তম শতাব্দীতে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংস করে সেই স্থলে জ্ঞানবাপী মসজিদ স্থাপন করেছিলেন। তাই মসজিদের জমি মন্দির কর্তৃপক্ষের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। এছাড়া, আরও পাঁচজনও মামলা করেছিলেন। মন্দিরের নিদর্শন যাচাইয়ের জন্য আদালত আর্কেওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে নির্দেশ দিয়েছিল জ্ঞানবাপী মসজিদের মাটির তলায় মন্দিরের অস্তিত্ব আছে কিনা তা সমীক্ষা করে দেখতে। সেই সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছিল ওই সমীক্ষক দলে দুই জন হিন্দু, দুই জন মুসলিম সদস্য এবং একজন প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞকে নিয়ে গঠিত পাঁচজন থাকবেন। তাদের উপস্থিতিতেই “শারীরিক সমীক্ষ” তত্ত্বাবধান করা হবে। সেই মতো হৈচৈ এবং স্লোগানের মধ্যে শ্রীকাশী বিশ্বনাথ ধাম-জ্ঞানবাপি মসজিদে প্রথম দিনে ভিডিওগ্রাফি এবং সমীক্ষার কাজ শুরু করলে আঞ্জুমান ইনাজানিয়া মসজিদ কমিটির আইনজীবী অভয় নাথ যাদব অ্যাডভোকেট কমিশনারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার জ্ঞানবাপী ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাশে অবস্থিত প্ল্যাটফর্মটির ভিডিও করা হয়েছে। এরপর বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে অ্যাডভোকেট কমিশনার জ্ঞানবাপী মসজিদের প্রবেশপথ খুলে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমরা প্রতিবাদ করি ‘ অভয়নাথ এ নিয়ে তাদেরকে বলেন, আদালতের এমন কোনো নির্দেশ নেই যে, ব্যারিকেডিংয়ের ভেতরে গিয়ে ভিডিওগ্রাফি করাতে হবে। কিন্তু, অ্যাডভোকেট কমিশনার বলেছেন, তাঁর এমন নির্দেশ রয়েছে।
আরও অভিযোগ করা হয়, মসজিদের দেওয়াল আঙুল দিয়ে আঁকিবুকি করা হচ্ছে। যদিও আদালতের পক্ষ থেকে এমন কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাই অ্যাডভোকেট কমিশনারের প্রতি সম্পূর্ণ অসন্তোষ প্রকাশ আদালতের কাছে আজ শনিবার আরেকটি অ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগের দাবি জানাবে মসজিদ কমিটি। এদিকে মন্দির পক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, জ্ঞানবাপি কমপ্লেক্সের কিছু অংশের ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। প্রাঙ্গণের ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে মসজিদ কমিটির তরফে প্রতিবাদ করে বলা হয় আপনি যেতে পারবেন না। তাই শনিবার বেলা ৩টায় আবারও সমীক্ষা কার্যক্রম শুরু করবেন অ্যাডভোকেট কমিশনার। যদিও অ্যাডভোকেট কমিশনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেছেন, শনিবার আমরা ব্যারিকেডিংয়ের ভিতরে যাব এবং জরিপের কাজ করা হবে। এদিন অ্যাডভোকেট কমিশনার অজয় কুমার মিশ্র সহ মন্দির ও মসজিদ পক্ষের মোট ২৮জন লোক বিকাল চারটায় টায় জ্ঞানভাপি মসজিদে যান। এর আগে সমীক্ষক দল পৌঁছলে কয়েকজন যুবক হর হর মহাদেবের ঘোষণা দেয়। এ সময় কয়েকজন মুসলিম যুবক আল্লাহ-হু-আকবার স্লোগান দেয়। কিছুক্ষণের জন্য উত্তাল হয়ে ওঠে পরিবেশ। দোকানপাটও বন্ধ ছিল। বর্তমানে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্দির পক্ষের আইনজীবী বলেছেন, সমীক্ষা শেষ করতে তিন দিন সময় লাগতে পারে। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে জ্ঞানভাপির আশেপাশে এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের রাস্তায় পুলিশ দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত রয়েছে। কমিশনার এ সতীশ গণেশ জানিয়েছেন, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে। জরিপ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক আপত্তিকর পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে।তবে বিশৃঙ্খল উপাদান শনাক্ত করে যে কোনো মূল্যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও জ্ঞানবাপি মসজিদকে ঘিরে রযেছে উত্তেজনার পরিবেশ। শনিবার ফের সমীক্সার কাজ হবে। তবে, যাবতীয় সমীক্ষার কাজ শেষ করে তার রিপোর্ট আগামী ১০ মের মধ্যে বারাণসীর আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct