আজিম শেখ,বীরভূম,আপনজন: মোহাম্মদ হাসান সেখ। বয়স ২৬বছর। বাড়ি বীরভুম জেলার পাইকর থানার অধীন দাঁতুড়া গ্রামে। জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী হাসান। প্রতিবন্ধিতার কারণে খুব ছোট থেকেই নিদারুণ কষ্ট আর দুর্ভোগের মাঝে জীবন কাটছে তার। শারীরিক বিকলাঙ্গতা থাকা সত্ত্বেও তিনি স্বপ্ন দেখেন আকাশ ছোঁয়ার। প্রতিবন্ধী হলেও তিনি কখনো অন্যের ওপর ভরসা করেননি। শত উপক্ষোয় কখনো নিজে ভেঙ্গে পড়েননি। প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলছেন সমাজের সাথে। ছোটবেলা থেকে নিজের সাথে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হাসান!
হাসান শেখ জানান, আমি ছোটবেলাতে হাঁটাচলা করতে পারতাম না। বাবা কাঁধে করে নিয়ে প্রাইমারি স্কুলে রেখে আসত। যখন একটু বড় হলাম তখন বন্ধুরা সাথে করে স্কুলে নিয়ে যেত। স্কুল যাওয়ার পথে একদিন মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছি । বর্ষাকালে রাস্তার মধ্যে কাদা ছিল সেখানে পড়েছিলাম চার থেকে পাঁচ ঘন্টা। গ্রামের কয়েকজন দেখতে পেয়ে আমাকে তুলে নিয়ে আসে। গ্রামের স্কুল শেষ করে বাবা বলেছিল লেখাপড়া করাতে পারবো না কিন্তু আমি চেয়েছিলাম পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর নিজের পড়াশুনার খরচ চালাতে টিউশন পড়াতাম। টিউশনির টাকা দিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে এমএ কমপ্লিট করেছি। পড়াশোনা শেষ করে ভেবেছিলাম চাকরি করব কিন্তু পেরে উঠতে পারছি না। বেসরকারি চাকরির জন্য আবেদন করেছিলাম কিন্তু তারা বাদ দিয়ে দেয়। বেসরকারি সংস্থা কারণ জানিয়েছিল আমি শারীরিকভাবে অক্ষম তাই কাজ করতে পারব না।
হাসান পরিবারের বড় সন্তান, পরিবারের দায়িত্ব তার কাঁধের উপরে। বাড়িতে বৃদ্ধ ঠাকুমা, বাবা, দুই বোন ও ছোট একটি ভাই আছে। কিছুদিন আগেই হাসানের মা মারা গেছে। পরিবারের হাল ধরতে হাসান ছোট্ট একটি মুদিখানার দোকান করেছে। সামান্র বেচাকেনা হওয়ায় তা বন্ধের মুখে। হাসানের দুঃখের কথা শোনার মতো কেউ নেই। দোকান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। তিনি জানান অনেক চেষ্টা করি মাঠে কাজ করার কিন্তু আমি পারছিনা। একটি কাজের জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে আছেন তিনি। সরকার থেকে মাসিক এক হাজার টাকা ভাতা পায়। বর্তমান বাজারে এক হাজার টাকা জীবন যাপন করা আর যাবে না। তিনি বলেন, আমার মতো প্রতিবন্ধীরা সমাজের চোখে অবহেলিত হিসেবে বিবেচিত। আমি সমাজের চোখে বোঝা হয়ে বাঁচতে চাই না। তােই সাহায্যের আর্জি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাই। আর কত অবহেলা সহ্য করব? এলাকার যুবক সেমিম সেখ জানান, হাসান ছোটবেলা থেকে খুব কষ্ট করে আসছে। যদি কেউ পাশে দাঁড়াই তাহলে খুব ভালো হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct