বন্ধু
শঙ্কর সাহা
______________
বাড়ির প্রথম ও একমাত্র বংশধর অর্ক। তাই অর্কের জন্মের পর থেকেই অর্কের দাদু গিরিশবাবুর স্বপ্ন যেন অর্ককে বড়ো হয়ে মানুষের মতন মানুষ করা। এক সংস্কার ও নিয়মের মধ্যে বড়ো হয়ে ওঠে অর্ক। দুচোখে তারও যে কঠিন স্বপ্ন। ছোট্ট অর্ক আজ যেন দশে পা দিয়েছে। কথাবার্তা ও বুদ্ধিতে যেন বড়দের হার মানিয়ে দেবে সে। ছোট থেকেই বইপ্রেমী অর্ক। বই পড়তে ভীষণ ভালো লাগে তার। পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী অর্ক যেন স্কুলের স্যরেদের চোখের মধ্যমণি। এখন চরিদিকে লকডাউন চলছে। স্কুল, প্রাইভেট প্রায় সবকিছুই বন্ধ প্রায়। বাড়িতেই প্রায় গৃহবন্দী অর্ক। তাই সারাক্ষণ বই পড়েই তার সময় কেটে যাচ্ছে। শুধু স্কুলের বই- না, বাড়িতে দাদুর ঘরে রাখা সেল্ফের বইগুলো প্রায় অনেকটাই পড়া হয়ে গেছে তার। এখনকার ছেলেদের থেকে অনেকটাই ভিন্ন সে । নেই মোবাইলের কোনো ঝোঁক।
সেদিন সকালে পড়তে পড়তে হঠাৎই মা মা বলে রান্নাঘরে আসে অর্ক।মার দিকে চেয়ে বলে, “ আচ্ছা মা , গ্যালিলিও কি কি বিষয় জানতেন? স্যর বলেছেন ওনি নাকি অনেক বিষয় জানতেন?” ছেলের দিকে চেয়ে অভয়া হেসে বলে,”বিকেলে বলে দেবো বাবা,ওই আলমারিতে রাখা মহাপুরুষদের জীবনী বইটিতে হয়তো লেখা আছে?” ‘না,এখনই বলে দাও, ওমা...মা!” মুচকি হেসে অভয়া বলে,” বাবা আমায় যে রান্নাগুলো শেষ করতে হবে? বলেছি তো বিকেলে বলে দেব?” দুপুরের খাওয়া শেষে ছেলেকে নিয়ে অভয়া একটু ঘুমিয়ে পড়ে। বৈশাখের তপ্তদুপুরে বাইরে বেশ গরম পড়েছে। কিন্তু হঠাতই ঘুম ভাঙ্গলে অভয়া দেখে পাশে অর্ক শুয়ে নেই। ছেলেকে ডাকতে ডাকতে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে পাশের বৈকঠখানা ঘরে যেতেই অভয়ার নজর পড়ে একটি চেয়ারে উঠে অর্ক আলমারি থেকে বইটি বের করে একমনে পড়ছে। কাছে যেতেই অর্ক মাকে দেখে বলে, “ মা,আমি বইটি খুঁজতে এসেছিলাম? স্যরি মা ,তুমি ঘুমোচ্ছিলে তাই তোমায় ডাকিনি?” ছেলেকে জড়িয়ে ধরে অভয়া বলে, “অর্ক,তোর বুঝি বই পড়তে ভীষণ ভালো লাগে?” “ বই আমার বন্ধু মা। বই ছাড়া আমি আর অন্য কিছু চাইই না...” ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নেয় অভয়া। অর্কও মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সবার লক্ষ্যে শাড়ির আঁচলে চোখের জলটি মুছে নেয় অভয়া...!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct